
দাম্পত্য জীবন সুখকর করার জন্য রিলেশনশিপ ইম্প্রুভমেন্ট থেরাপীর ব্যবসা এখন বিশ্বব্যাপী জমজমাট। কারন বিয়ে বা দাম্পত্য সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা এই সময়ে একটা মহা চ্যালেঞ্জ। অন্যান্য সম্পর্কগুলোও চ্যালেঞ্জের সমুখীন। সম্পর্ক ভেঙ্গে যাওয়া এখন সামাজিক সমস্যাও বটে। চারিদিকে ছাড়াছাড়ি আর ডিভোর্সের হিড়িক। সেই সাথে পুরুষের যৌন সমস্যা সমাধানের জন্য ওষুধ এর ব্যবসারও প্রসার ব্যাপক।
এ ক্ষেত্রে শহর-বন্দর, গ্রাম-গঞ্জ, উন্নয়নশীল, অনুন্নয়নশীল, অনুন্নত ও উন্নত দেশের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। সার্কভুক্ত দেশগুলোর যে অবস্থা, জি-সেভেনভুক্ত দেশগুলোর অবস্থাও একই।
ইদানিং রিলেশনশিপ সমস্যা কেন এত গভীর?
ধর্মগুরুরা বলছেন, মানুুষ ইদানিং পাপের দিকে ঝুঁকে পড়ছে বেশী। ফলে এগুলো হচ্ছে। কিন্তুু তাঁদের সমালোচনায় অনেকে বলছেন, অনেকে তো পাপ কাজ করছেনা কিন্তুু তারপরেও রিলেশনশিপ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
স্পিরিচুয়াল গুরুরা বলছেন, মানুষ বহুত পেরেশানীর মধ্যে আছে; মানুষের জীবনে অনেক কষ্ট। তা থেকে মুক্তির সহজ পথ খুঁজছে মানুষ। কিন্তুু পথ পাচ্ছে না। নরনারীরা মনে করছেন, পার্টনার বদলালে হয়ত সুখ আসবে। কিন্তুু পার্টনার বদলানোর পরেও সুখ আসছেনা। গাড়ি ও বাড়ি এমন কি দেশও বদলাচ্ছে কেউ কেউ। তাতেও সুখ আসছেনা। এ ক্ষেত্রে গুরুরা বলছেন, যেটা বদলানো দরকার তা তাঁরা বদলাচ্ছে না। মানে তারা সব বদলাচ্ছে কিন্তুু নিজেকে বদলাচ্ছেনা। ফলে সমস্যা যাচ্ছে না।
ডাক্তাররা বলছেন, খাদ্যে ভ্যাজাল, নরনারী সুষম খাবার খাচ্ছে না, তারা নিয়মিত ব্যায়াম করছেনা। আর মানুষ ডাক্তারের পরামর্শ নিচ্ছে না। এজন্য এগুলো হচ্ছে। সুষম খাবার খেয়ে, ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েও তো অনেক ক্ষেত্রে সমস্যার সমাধান হচ্ছেনা।
মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, ডিপ্রেশন, এনজাইটি ও অন্যান্য মানসিক রোগের কারনে এগুলো হচ্ছে।
আসলে মানুষ মানসিকভাবে সুস্থ্য নেই। সেজন্য রিলেশনশিপে সমস্যা হচ্ছে। তাঁদের সেক্স লাইফেও সমস্যা হচ্ছে। মনোবিজ্ঞানীদের কেউ কেউ যুক্তি দেখান যে, শিল্প বিপ্লবের আগে মানুুষের স্ট্রেস কম ছিল। তাঁরা ভালো সুষম খাবার খেত। পরিবেশ দুষন কম ছিল। মানুষ শারীরিক পরিশ্রম বেশী করত। ফলে তারা শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ্য থাকত। তখন রিলেশনশিপেও সমস্যা কম হত। এখন মানুষ জানে বেশী, বোঝে বেশী। সেজন্য মানুষ একা হয়ে যাচ্ছে। মানুষ এখন স্বাধীনতা চায়। ব্যক্তি স্বাধীনতার জন্য মানুষ যুদ্ধ করছে। কেউ কারো নিয়ন্ত্রনে থাকতে চায়না। ফলে সম্পর্কে ভাঙ্গন ধরছে।
রিলেশনশিপ টিকিয়ে রাখতে বর্তমানের মনোবিজ্ঞানী ও স্পিরিচুয়াল গুরুরা যে সমস্ত পরামর্শ দিচ্ছে তার কিছু আমার পছন্দ হয়েছে। তার দু্ একটির উদাহরনএখানে তুলে ধরছি ।
আমার স্বামী, আমার স্ত্রী, আমার সন্তান- এগুলো যত বেশী বেশী মনে করবেন সম্পর্ক তত ঢিলা হতে থাকবে। কারন যখই আপনি কাউকে “আমার” বলে চালাবেন তখনই “নিয়ন্ত্রন/কন্ট্রোল” আরোপের বিষয় চলে আসবে। মানুষ নিয়ন্ত্রন/ কন্ট্রোল মেনে সম্পর্ক করতে চায়না।কারন প্রত্যেকটা মানুষ স্বাধীনতা চায়। নিয়ন্ত্রন/কন্ট্রোলিং স্বাধীনতার পরিপন্থি। এ ক্ষেত্রে পাশাপাশি চলুন। আগে পিছে না। কন্ট্রোল নয়, একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া জরুরী। কন্ট্রোল করা পরিহার করা মানে নিজেকে বদলানো। তাহলে সম্পর্ক বেশী দিন টেকার সম্ভবনা থাকবে। এ সম্পর্ক হতে পারে স্বামীর সাথে স্ত্রীর, বাবার সাথে মায়ের, পিতাপুত্রের, মায়ের সাথে সন্তানের অথবা ভাইবোনের।
আরেকটি পরামর্শ খুব গুরুত্বপুর্ন বলে মনে হয়েছে। সেটা হল, অতীত নিয়ে ঘাটাঘাটি বা আলোচনা না করা। প্রত্যেকেই ভুল করে। কারো ভুল হলে তা শ্বীকার করে নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়া। সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভুলভ্রান্তি হলে কাউকে দোষী সাব্যস্ত না করা। কারন দোষী সাব্যস্ত করলে সম্পর্ক মধুর না হয়ে তিক্ত হয়। যতবেশী অতীত নিয়ে মাথা ঘামাবেন সম্পর্ক তত নষ্ট হবে। বর্তমানকে প্রাধান্য দিতে হবে। হেয়ার এন্ড নাও।
আরেকটি বিষয় গুরুত্বপুর্ন। সেটা হল: শর্ত সাপেক্ষে ভালোবাসা বাসি থেকে বিরত থাকা।
প্রয়োজন ভিত্ত্বিক ভালোবাসার সম্পর্ক টেকেনা। যে ভালবাসা নিজকে প্রস্ফুটিত করে; সাথে সাথে আরেক জনকেও প্রস্ফুটিত করে সেটাই আসল ভালোবাসা। এ রকম ভালোবাসার ওপর ভিত্ত্বিকরে যে সম্পর্ক তৈরি হয় তা দীর্ঘজীবি হতে বাধ্য। অবশ্য অভিনয় করে অনেকে বছরের পর বছর সম্পর্ক কে টিকিয়ে রেখেছে, সেটা ভিন্ন বিষয়।
আরেকটি বিষয় না বললেই নয়। সেটা হল সেক্স। এটি সম্পর্ককে আনন্দঘন করতে সহায়তা করে মাত্র, তবে এটাই দাম্পত্য সম্পর্ক টিকে রাখার একমাত্র অনুসঙ্গ নয়।আরো অনেক বিষয় আছে যা লিখলে লেখাটি অনেক বড় হয়ে যেত।
পরিশেষে বলা যেতে পারে, নিজেকে ও অপরকে সুখী ও পরিপরিস্ফুটিত করার জন্য যে ভালোবাসার আবহে সম্পর্ক তৈরী তাই টিকে থাকে।
টরন্টো, কানাডা