
ছোট বেলায় আমার মুখ থেকে খুব বেশী লালা পড়ত। সেই লালা গড়িয়ে গড়িয়ে প্রথমে থুতনি, তারপর বুক আর শেষে ছোট নুনু বেয়ে মাটিতে পড়ত। ঘাসের ডগা বেয়ে শিশির গড়িয়ে পড়ার মত। আর প্যান্ট পড়া থাকলে তো প্যান্টের সামনে অংশ ভিজে সয়লাব। আমার তো সে সমস্ত ঘটনা মনে থাকার কথা না। এগুলো মায়ের মুখ থেকে শোনা। কিন্তুু এখনো মাঝে মাঝে মুখ থেকে লালা ঝরে পড়ে। বিশেষ করে রাতে ঘুমানোর পর। মাঝে মাঝে বালিশ ভিজে যায়। রাতে অনেকের চোখের জলে বালিশ ভিজে, আমার ভেজে লালায়। কি বিছছিরি না ব্যাপরটা?
একদিন মাকে বললাম, মা, আমার মুখ দিয়ে এত লালা ঝরত কেন বলতে পারো? তোমার অন্যান্য ছেলেমেয়েদের তো এ রকম হয়নি।
মার উত্তর ছিল এ রকম: তুই যখন আমার পেটের মধ্যে ছিলি, তখন একবার খেজুরের গুড়ের পায়েস খাইতে মন চাইছিল। কিন্তুু তখন তো দ্যাশে যুদ্ধ চলত্যাছে, তোকে পেটে নিয়া পাকিস্তানি মেলেটারির ভয়ে কত জায়গায়ই না পালায় পালায় থাকছি। ভাতই তো তখন পেতাম না, খেজুরের গুড়ের পায়েস কোথায় পাবো ? সেই পায়েশ খাই নাই বলে তুই হওয়ার পর তোর মুখ থেকে লালা পড়ত। কিন্তুু তোর জন্মের পর কত পায়েস খাইছি, তোকেও খাওয়াইছি। কিন্তুু তোর মুখের লালা পড়া তো হয় নাই।
যুদ্ধে কত মাবাবা তার ছেলেমেয়েদেরকে হারাইছে। সে সমস্ত বাবামায়েদের চোখ বেয়ে তো এখনো পানি ঝরে আর অন্তরে ঝরে রক্ত। যুদ্ধ যে মানুষের কতকিছু কেড়ে নিয়েছে তার কী ইয়ত্বা আছে? আর তোর তো কেবল ঘুমের মধ্যে মাত্র একটু লালা ঝরে। এটা এমন কী।
সেদিনের পর থেকে লালা ঝরা নিয়ে আর কোন খেদ করিনা।
টরন্টো, কানাডা