
মানুষের মূলত: দু ধরনের ক্ষমতা (Power) থাকে। একটা হল “ইগো”(Ego) আরেকটি হল নিজস্ব ক্ষমতা(Self)। ইগো নামক ক্ষমতাটা মানুষ পেয়ে থাকে সমাজ থেকে। এ জন্য এটিকে সোসাল মাস্কও বলা হয়। “ইগো”- এটি একটি অস্থায়ী ক্ষমতা। এটি সমাজে বসবাসরত মানুষের পদ-পদবীর সাথে জড়িত। এটি স্থায়ী কোন ক্ষমতা নয়। যেমন একজন প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রী বা কোন কোন কোম্পানির চেয়ারম্যান ক্ষমতা ধারন করে তা সোশাল মাস্ক বা ইগো। তাদের পদবী চলে গেলে ক্ষমতাটাও চলে যায়। এই সোশাল মাস্ক বা ইগোটা সব সময় মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। কারন মানুষের ইগো তৈরী হয় “ভয়” থেকে। তাহল ক্ষমতা হারানোর “ভয়”। একজন প্রেসিডেন্ট বা প্রধানমন্ত্রীকে একটি জনমানবহীন নির্জন দ্বীপে বা জঙ্গলে একা একা খালি হাতে ছেড়ে দিলে দেখা যাবে তার প্রেসিডেন্সির বা প্রধানমন্ত্রীর কোন ক্ষমতাই এ গহীন জঙ্গলে কোন কাজে লাগছে না। কারন ওখানে সে কিছুই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেনা। তার সোশাল মাস্ক বা ইগো কোন কাজেই লাগছে না। এ জন্য ইগোকে অস্থায়ী ক্ষমতা বলা হয়। এটি মানুষের আসল ক্ষমতা নয়। অথচ মানুষ এটির পিছনেই সারাটি জীবন ব্যয় করে। ম্যাটেরিয়াল-টাকা পয়সা, ধনসম্পদ এর ভিত্তি।
মানুষের আসল ক্ষমতা বা শক্তি হল নিজস্ব (Self power) ক্ষমতা যা আসে একেবারেই ভিতর থেকে। এটি আসে প্রকৃতি থেকে। প্রকৃতি যেহেতু সকল ক্ষমতার আধার এবং মানুষ হচ্ছে সেই ক্ষমতার আধারের অংশ বিশেষ। মানুষের আসল শক্তি কখনো ফুরোয় না। এটি সবখানে সমানভাবে বিরাজ করে। এ ক্ষমতার কোন ক্ষয় নাই। এটি সবার জন্য সমান। এই ক্ষমতার জন্য কারো ওপর নির্ভরশীল হতে হয়না; কাউকে কন্ট্রোল করতে হয়না; এ ক্ষমতা অনুভব করতে পারলে কোন কিছুতে “ভয়” থাকেনা। কেউ সমালোচনা করলেও তা তা গায়ে লাগেনা। এটি আত্নার ক্ষমতা, এটি মানুষের স্পিরিট। এটি অবিনশ্বর। এটি সব কিছু থেকে মুক্ত।
এ ক্ষমতা চুম্বকের মত মানুষকে আপনার কাছে টেনে নিয়ে আসবে। এ ক্ষমতা আপনার ইচ্ছা পুরনে সহায়তা করবে। আপনার সামনে খুলে যাবে অবারিত সম্ভবনার দুয়ার। মানুষের সাথে আপনার বন্ডেজ তৈরী হবে ভালবাসার ভিত্ত্বিকে। এ বন্ডেজ যেমন আপনি এনজয় করবেন, তেমনি তাঁরাও এনজয় করবে। আত্নসচেতনতার (Self-Conciousness) হল এ ক্ষমতার ভিত্ত্বি।
এখন কথা হল, এই নিজস্ব শক্তি বা ক্ষমতা কীভাবে অর্জন করবেন?
প্রথমত: আপনাকে নৈ:শব্দের চর্চা (Practice of Silence) করতে হবে। ইয়োগা বা ধ্যান করতে হবে দিনে অন্তত দুবার। এক ঘন্টা করে। অন্তত: পক্ষে আধা ঘন্টা সকাল বিকাল। এর মাধ্যমে আপনার ভিতরের “আমি”র সাথে সেল্ফ ডায়ালগ করতে হবে। নিজেকে খুঁজে বের করতে হবে। নি:শ্বাসের শব্দ শুনতে হবে। জগতের চিন্তা, ভাবনা, স্ট্রেস, চাওয়া পাওয়া,লাভ ক্ষতি, টেলিভিশন দেখা, বই পড়া, গাড়ি চালনা, গেম খেলা, খাওয়া দাওয়া— এগুলো থেকে নিজের মনকে দিনে কিছু সময়ের জন্য আলাদা করে ফেলতে হবে। নদী, পাহাড়, বনবাদার,গাছের কাছে গিয়ে কিছুক্ষন চুপচাপ বসে নিজের সাথে নিজের ডায়ালগ করুন। অথবা নিজের ঘরে বসে নির্জনে ডায়ালগ করুন।
দ্বিতীয়ত: নন জাজমেন্টাল হওয়া। লেবেলিং না করা। কোন পরিস্থিতি বা ঘটনাকে নিজের মনগড়া বিশ্বাস ওে ধারনা দিয়ে বিচার না করাই হল ননজাজমেন্টাল প্রাক্টিস। যেমন, একজন পায়ে আঘাতপ্রাপ্ত লোক যিনি ঠিকমত হাটতে পারেনা তাকে “ন্যাংড়া লুলা” বলে ডাকা, দৃষ্টিহীনকে “কানা”, মানসিকভাবে চ্যালেঞ্জিং মানুষকে “পাগল” বলা, কালো মানুষদেরকে “খারাপ”, সাদা মানুষরা “হিংসুটে”, মুসলমানদেরকে “সন্ত্রাসী” নারীদেরকে “দুর্বল”, পশ্চিমাদেরকে “আগ্রাসী”, রাজনীতিবিদদের “মিথ্যাবাদী”—এগুলো জাজমেন্টাল কমেন্টস। এগুলো বন্ধ করা। এ গুলো করা গেলে, মানুষের ভালবাসা আসতে থাকবে। নিজস্ব শক্তি বাড়তে থাকবে।
পরিশেষে বলবো, মানুষ যত বেশী নিজস্ব শক্তি বা ক্ষমতার সন্ধানে নিজেকে নিয়োজিত করবে ততবেশী সুখী হবে। মনের অশান্তি দুর হবে। মানুষ সমৃদ্ধশালী হবে। মানবজাতির দু:খ কষ্ট কমবে ও পৃথিবী রক্ষা পাবে।
দীপক চোপড়ার দ্য সেভেন স্পিরিচুয়াল লজ অব সাকসেস অবলম্বনে
টরন্টো, কানাডা