
সম্প্রতি তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রীর পদ হারানো ডা. মুরাদ হাসানের স্ত্রী ডা. জাহানারা এহসান বৃহস্পতিবার বিকেলে বাঁচানোর আকুতি জানিয়ে জরুরি সেবা ৯৯৯ নম্বরে ফোন করেন। পুলিশ তার বাসায় পৌঁছানোর মাত্র চার মিনিট আগে বাসা থেকে বেরিয়ে যান মুরাদ হাসান। পুলিশ গিয়ে ডা. জাহানারাকে বাসায় কান্নাকাটি করতে দেখে।
জানা গেছে, মুরাদ হাসানের বাসায় ডি-১ নম্বর ফ্ল্যাটে যান ধানমন্ডি থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) সাইফুল ইসলাম। পরে ঘটনাস্থলে যান ধানমন্ডির এসআই রাজিবসহ মোট ৬-৭ জন কর্মকর্তা।
সেসময় ঘটনাস্থলে থাকা এক কর্মকর্তা সূত্রে জানা যায়, বাসায় সব কিছু স্বাভাবিক পাওয়া গেছে। ডা. জাহানারা পুলিশকে জানান, ঢাকাই চলচ্চিত্রের নায়িকা মাহিয়া মাহি ও নয়ক ইমনের সঙ্গে কথোপকথনের অডিও রেকর্ড ফাঁস হওয়ার পর তাদের মধ্যে কলহ শুরু হয়। গত ২-৩ সপ্তাহ ধরে তাদের মধ্যে ঝগড়া চলে। মুরাদ হাসান মানসিকভাবে নির্যাতন করতেন এবং হত্যা করার হুমকি দিতেন। আজও (বৃহস্পতিবার) মুরাদ গালিগালাজ করতে থাকেন এবং মারতে তেড়ে আসেন। এসময় বাঁচানোর আকুতি জানিয়ে ৯৯৯-এ কল করেন তিনি।
পুলিশের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিকেলে ৯৯৯ এ ফোন করেন মুরাদের স্ত্রী। ফোনে মুরাদের স্ত্রী বলেন, আমি ডা. জাহানারা। ধানমন্ডি থেকে বলছি। আমার স্বামী ডা. মুরাদ, এমপি মুরাদ। তিনি কয়েকদিন ধরে আমার সঙ্গে খারাপ আচরণ করছেন। কথায় কথায় আমাকে হুমকি ধমকি দিচ্ছেন। শারীরিক নির্যাতনের শিকার আমি। আমাকে বাঁচান। ও বলেছে আমাকে মেরে ফেলবে। আমাকে আপনারা বাঁচান। আমাকে উদ্ধার করুন। প্লিজ পুলিশ পাঠান, এখনি পুলিশ পাঠান।
এরপরই ধানমন্ডি থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) ডা. জাহানারা এহসান। এতে তিনি অভিযোগ করেন, ‘সাম্প্রতিক সময়ে তিনি (ডা. মুরাদ) কারণে অকারণে আমাকে এবং সন্তানদের অকথ্য ভাষায় গালাগালসহ শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন করিয়া আসিতেছে এবং হত্যার হুমকি প্রদান করিয়া আসিতেছে। আজ ০৬/০১/২০২২ তারিখ সময় অনুমান ০২:৪৫ ঘটিকার দিকে পূর্বের ন্যায় আমাকে এবং আমার সন্তানদের গালাগাল করে এবং মারধর করার জন্য উদ্ধত হইলে আমি ৯৯৯-এ কল করিলে ধানমন্ডি থানা পুলিশ বাসার ঠিকানায় পৌঁছালে বিবাদী বাসা হইতে বাহির হইয়া যায়। আমি এমতাবস্থায় নিরাপত্তাহীনতায় আছি। বিবাদী আমাকে এবং আমার সন্তানদের যেকোনো সময়ে ক্ষতি সাধন করিতে পারে।’
জিডিতে তিনি আরও উল্লেখ করেন, ‘বিবাদী মুরাদের সঙ্গে তিনি ১৯ বছর ধরে সংসার করে আসছেন। তাদের সংসাদের রামিসা ফারিহা রাজকন্যা নামের ১৬ বছর বয়সী একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে। এ ছাড়াও হাসান আবরার মাহির যুবরাজ নামের ১১ বছর বয়সী একটি ছেলে সন্তানও রয়েছে।’
এই দুই সন্তানকেও সংসদ সদস্য (এমপি) ডা. মুরাদ হাসান নির্যাতন করে আসছিলেন বলে ওই জিডি কপিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়।
আজ বৃহস্পতিবার (৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় এ বিষয়ে ধানমন্ডি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইকরাম আলী মিয়া আরটিভি নিউজকে বলেন, ‘মুরাদ হাসানের স্ত্রী আজ বিকেল ৩টার দিকে ৯৯৯-এ কল করে নির্যাতনের অভিযোগ করেন।’
কার বিরুদ্ধে তিনি অভিযোগ করেছেন, জানতে চাইলে ওসি বলেন, ‘তার হাসব্যান্ডের বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। এটা ডমেস্টিক ভায়োলেন্স। আমরা বিষয়টা দেখছি।’
একই থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাইফুল ইসলাম জানান, অভিযোগ পাওয়ার পর পুলিশ ধানমণ্ডির ১৫ নম্বর সড়কে ওই বাসায় গিয়েছিল, তবে সেখানে মুরাদ হাসানকে তারা পাননি।
মুরাদ হাসানের স্ত্রীও একজন চিকিৎসক। অভিযোগের বিষয়ে বিস্তারিত জানতে তার সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করে তা সম্ভব হয়নি। অন্যদিকে মুরাদের ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়।
এক চিত্রনায়িকাকে টেলিফোনে হুমকি আর অশালীন বক্তব্যের ভিডিও ফাঁস হলে গত ডিসেম্বরে প্রতিমন্ত্রীর পদ হারাতে হয় মুরাদ হাসানকে। জামালপুর আওয়ামী লীগের পদ থেকেও অব্যাহতি দেওয়া হয় স্থানীয় এই এমপিকে।
নানান নাটকীয়তার মধ্যে ৯ ডিসেম্বর রাতে কানাডার উদ্দেশে দেশ ছাড়েন মুরাদ। কিন্তু কানাডায় কিংবা আরব আমিরাতে ঢুকতে না পেরে দুদিন পর তাকে ফের দেশে ফিরতে হয়। এরপর থেকে তিনি লোকচক্ষুর আড়ালে রয়েছেন।