
যদি বলি কোড়কদী বাংলাদেশের আটষট্টি হাজার সাধারণ গ্রামের একটি তাহলে পাঠকের স্বাভাবিক প্রশ্ন হবে সে সকল গ্রামের অনুসন্ধান নিয়ে এমন ঘটা হবে কি? যদি বলি কোড়কদী আর সব সাধারণ গ্রামের মত একটি নয়, তাহলে স্বতঃস্ফুর্ত প্রশ্ন হল এটি কি এমন কোন অসাধারণ গ্রাম যেমন বারদী বা বিক্রমপুরের কিছু কিছু গ্রাম? কোড়কদী কি তেমন যেমন টাঙ্গাইলের সেই গ্রাম যেখানে ঘুরন্ত নাট্যশালা ছিল! তবে সত্য যে কোড়কদী সাধারণ একটি গ্রাম নয়। এর অসাধারণত্ব খুঁজে ফিরছি আমরা অনেকেই। সে খোঁজাখুঁজির একটি ঘটনা ছিল ২০১০ সালের ৩০ জানুয়ারিতে ‘কোড়কদী সমাবেশ’-এর আয়োজন যেখানে ছিলেন সে অঞ্চলের অন্তত ৪/৫ হাজার মানুষ আর সাথে ছিলেন ঢাকা ও ফরিদপুরের কয়েকশ আগ্রহী। যুক্ত হয়েছিলেন কোড়কদীর কৃতী মানুষদের ভারতবাসী উত্তরপ্রজন্মের কয়েকজনও।
বর্তমানের কোড়কদী
ফরিদপুর জেলার এ গ্রামটি বর্তমানে মধুখালি উপজেলার অন্তর্ভুক্ত। কিছুদিন আগেও ছিল বালিয়াকান্দি উপজেলাতে। দীর্ঘকাল ইউনিয়নের মর্যাদা থাকলেও ক্ষয়িষ্ণু কোড়কদী এখন মেগনামা ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত। পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া নদী চন্দনা এখন নিকটবর্তী খালের চেয়ে ক্ষীণতনু। একটি কাঁচা রাস্তা ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের সাথে মাইল দুয়েক দূরের গ্রামটিকে যুক্ত করেছে।
কোড়কদীর অতীত নিয়ে এলাকার মানুষদের ভাবনা
গ্রামটি হিন্দু অধ্যুষিত ছিল। প্রধানত ব্রাহ্মণ। কোড়কদীর বাবুরা অনেক বড়লোক ছিলেন। এক গ্রামেই ২০/৩০ টির বেশি দুর্গা পূজা হতো। ফুটবল খেলার মাঠ ছিল অনেকগুলো। আর ছিল বিশাল বিশাল বিল্ডিং। সুরম্য সে অট্টালিকাগুলো ছিল পরস্পর লাগোয়া। একটা ভবনের ছাদে উঠলে নাকি সারা গ্রাম ঘুরে আসা যেত। নাম ছিল ‘ছোট কলকাতা’। কলকাতার সাথে ছিল প্রত্যক্ষ যোগাযোগ। অনেক শিক্ষিত মানুষ ছিলেন কোড়কদীতে। যে কালে এক গ্রামে একজন বিএ/এমএ পাস করলে সারা গ্রাম ভেঙে পড়তো দেখার জন্য সেকালে কোড়কদীতে ২০/৩০ জন বিএ/এমএ পাস লোক ছিলেন। ইত্যাদি ইত্যাদি গুঞ্জনে কোড়কদীর চারপাশের গ্রামগুলোর মানুষরা শুনতেন। কাছাকাছি গ্রাম কামারখালির বাসিন্দা হওয়ায় তেমন কথা বর্তমান লেখকেরও কানে এসেছিল।
এভাবেই কোড়কদী নিয়ে আমার অনুসন্ধান শুরু যার পরিণতিতে সমাবেশের আয়োজন।
কোড়কদী সমাবেশর সাথে যুক্ত সকলকে অভিবাদন জানাই।
ইস্টইয়র্ক, অন্টারিও, কানাডা