চাঁদকে শুষ্ক, প্রাণহীন ও মৃত একটি উপগ্রহ বলেই আমরা জানি। সেখানে নেই পানি, অক্সিজেন এমনকি কোনো বায়ুমণ্ডল। এমন জায়গায় প্রাণী ও উদ্ভিদ এলো কী করে? উত্তর হলো, মানুষই কিছু গাছ ও প্রাণী সেখানে নিয়ে গেছে গবেষণার উদ্দেশ্যে।
৩ জানুয়ারি চীনের চ্যাং’ই ল্যান্ডার মহাকাশযান চাঁদের ‘ফার সাইড’ এ অবতরণ করে। চাঁদ পৃথিবীকে এমনভাবে প্রদক্ষিণ করে যাতে এর একটা দিক সবসময় পৃথিবীর দিকে থাকে ও অন্য দিকটা থাকে আড়ালে।
আড়ালে থাকা দিকটাতেই অবতরণ করে চৈনিক ওই মহাকাশযান। এই মহাকাশযানে করে কিছু জীবন্ত ‘আরোহী’ পাঠানো হয়েছে। ল্যান্ডারে একটি ছোট টিনে করে পাঠানো হয়েছে আলু ও অ্যারাবিডপসিস নামের একটি গাছের বীজ। এর পাশাপাশি পাঠানো হয়েছে কিছু রেশমপোকার গুটি।
কেন এসব প্রজাতির প্রাণী ও উদ্ভিদ পাঠানো হলো? গবেষকদের ব্যাখ্যা হলো, গাছগুলো রেশম পোকাকে অক্সিজেন দেবে, আর রেশম পোকা থেকে গাছ পাবে কার্বন ডাই অক্সাইড ও বর্জ্য থেকে পাবে পুষ্টি। এই গাছগুলো চাঁদে সালোকসংশ্লেষণে সক্ষম হয় কিনা তা পর্যবেক্ষণ করা হবে। এছাড়া তাদের বৃদ্ধি হয় কিনা ও ফুল ফোটে কিনা সেটাও দেখা হবে।
এই পরীক্ষাটির পেছনে ২৮ টি চৈনিক ইউনিভার্সিটির অবদান রয়েছে। তাদের নেতৃত্বে ছিলো দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের চংকিং ইউনিভার্সিটি।
উদ্ভিদ ও প্রাণীগুলো রয়েছে একটি ০.৮ লিটারের অ্যালুমিনিয়াম অ্যালোয় সিলিন্ডারের ভেতর, এর পুরোটার ওজন ৩ কেজির মতো। এতে বীজ ও গুটির সাথে রয়েছে মাটি, সার ও পানি। একটি টিউবের মাধ্যমে এই সিলিন্ডারে সূর্যের আলো প্রবেশ করবে ও ছোট ছোট ক্যামেরার মাধ্যমে এখানে কী চলছে তা দেখতে পারবেন পৃথিবীতে থাকা গবেষকরা।
প্রশ্ন উঠতে পারে, কেন আলু ও অ্যারাবিডপসিসের বীজই বেছে নেওয়া হলো? কারণ অ্যারাবিডপসিসের বৃদ্ধির সময়টা ছোট ও তা পর্যবেক্ষণ সহজ। আর আলু ভবিষ্যতে মহাকাশচারীদের খাদ্য হিসেবে কাজে আসতে পারে। এই পুরো পরীক্ষাটির লক্ষ্য হলো ভবিষ্যতে চাঁদে মানুষের দীর্ঘমেয়াদি বসতি তৈরি করা যায় কিনা তার সম্ভাবনা হিসেব করা।
অ্যারাবিডপসিস এর আগেও মহাশূন্যে জন্মানো হয়েছে। ইন্টারন্যাশনাল স্পেস স্টেশনে তা নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। চাঁদের টানে এর পাতা ওঠানামা করতে দেখা যায়। তবে চাঁদে তা কী আচরণ করবে তা এখনো রহস্য।