6 C
Toronto
শুক্রবার, মার্চ ১৪, ২০২৫

বৃদ্ধ বাবার ওপর সন্তানদের এ কেমন বর্বরতা!

বৃদ্ধ বাবার ওপর সন্তানদের এ কেমন বর্বরতা! - the Bengali Times

৩৮ বছর কাটিয়েছেন মধ্যপ্রাচ্যে। এর মাঝে দুই ছেলেকে উচ্চশিক্ষিত করে পাঠিয়েছেন ব্রিটেন এবং সুইজারল্যান্ডে। আর দুই মেয়েকেও পড়ালেখা শেষ করে বিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু এখন চরম বিপর্যয় নেমে এসেছে আবুল কালাম আজাদ নামে ষাটোর্ধ্ব এই বৃদ্ধের জীবনে।

- Advertisement -

সম্পত্তি নিজেদের নামে লিখে নিতে না পেরে সন্তানরা তাকে মাদকাসক্ত সাজিয়ে দুই মাস ধরে আটকে রেখেছেন নিরাময় কেন্দ্রে। এমনকি হুমকি দিয়েছেন ইয়াবা দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার। একটি অপহরণ মামলার তদন্ত করতে গিয়ে আবুল কালাম আজাদের সন্ধান পেয়েছে পিবিআই।

চট্টগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার প্রশান্তি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে বসে নিজের জীবনের ঘটে যাওয়া নানা দুর্ঘটনা এবং সন্তানদের হাতে নির্যাতনের দুর্বিষহ কাহিনি পুলিশের কাছে বর্ণনা করছেন ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ আবুল কালাম আজাদ। ৩৮ বছর ছিলেন দুবাইতে। প্রবাসজীবনের আয় দিয়ে চট্টগ্রাম নগরীসহ বিভিন্ন স্থানে কিনেছেন বেশ কিছু জায়গা। আর এই সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে নিজ সন্তানরাই তাকে অমানুষিক নির্যাতন চালিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি মাদকাসক্ত না হওয়া সত্ত্বেও দুই মাস ধরে আটকে রাখা হয়েছে এই মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে।

ভুক্তভোগী আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘আমার সন্তানরা চায়, জায়গা-জমি তাদের নামে লিখে দিই। কিন্তু আমি তাদের বলেছি, আমি কেন লিখে দেব? আমার মৃত্যুর পর তোমরা তো এমনিতেই পাবে। এ জন্য তারা আমার ওপর অনেক অত্যাচার করেছে।’

২০১৭ সালে স্ত্রীর অসুস্থতার খবর পেয়ে আরব আমিরাত থেকে দেশে ফিরে আসেন আবুল কালাম আজাদ। কিডনি রোগে আক্রান্ত স্ত্রী কয়েক দিনের মধ্যেই মারা যান। এরপর থেকে আবুল কালাম আজাদের ওপর নির্মম নির্যাতন নেমে আসে। উচ্চশিক্ষিত সন্তানরা তাকে বাসা থেকে তাড়িয়ে দিলে আশ্রয় দেন হোটেল কর্মচারী শাহাবুদ্দিন। কিন্তু সেখান থেকে তাকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। আর এ নিয়ে হোটেল কর্মচারী শাহাবুদ্দিন আদালতে মামলা করলে তদন্তের ভার পায় পিবিআই।

অপহরণ মামলার বাদী মোহাম্মদ শাহাবুদ্দিন বলেন, ‘এক বছর আগে ওনাকে আমি পেয়েছি। দেখে মনে হয়েছে, ওনার আর্থিক অবস্থা অনেক দুর্বল, তাই আমার কাছে ওনাকে রেখে দিই।’

পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের পরিদর্শক ইখতিয়ার উদ্দিন বলেন, ‘মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের সবার সঙ্গে কথা বলে যেটা বুঝেছি, ওনার জীবনযাপন স্বাভাবিক।’

মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রের কর্মকর্তার দাবি, আবুল কালাম আজাদের মেয়ে ফাহিমা আক্তারই তার বাবাকে এখানে রেখে গেছেন। তাকে ফিরিয়ে দেওয়ার কথা জানালেও নেয়নি তার পরিবার।

প্রশান্তি মাদকাসক্ত পুনর্বাসন কেন্দ্রের পরিচালক মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, ‘ওনাকে আমরা এক সপ্তাহ রেখেছি। কিন্তু ওনার মধ্যে মাদকাসক্তির কোনো লক্ষণ পাইনি। পরে তার মেয়েকে ফোন করে তাকে নিয়ে যেতে বললে, তিনি বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে নিয়ে যাননি।’

এদিকে, পিবিআইয়ের প্রাথমিক তদন্তেও বের হয়ে এসেছে সন্তানরা নিজেদের নামে সম্পত্তি লিখে নিতে না পেরেই বাবার ওপর নির্যাতন চালিয়েছিলেন।

পিবিআই চট্টগ্রাম মেট্রো অঞ্চলের পুলিশ সুপার নাইমা সুলতানা বলেন, জায়গা-জমি লিখে নিতে ব্যর্থ হয়ে তার ছেলে-মেয়েই তাকে চক্রান্ত করে মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে পাঠিয়েছিল।

অমানুষিক নির্যাতনে অতিষ্ঠ আবুল কালাম আজাদ আর সন্তানদের কাছে ফিরতে চান না। এ অবস্থায় আদালতের কাছে সিদ্ধান্ত চাইবে পিবিআই।

সূত্র : নতুন সময়

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles