
তাঁতশিল্পীর পরিবারের সদস্যেদের সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন বলিউড অভিনেতা আমির খান। কিন্তু এক দশক পেরিয়ে গেলেও তার সে সাহায্য এসে পৌঁছায়নি ভারতের মধ্যপ্রদেশের একটি তাঁতশিল্পীর পরিবারের সদস্যেদের কাছে।
মধ্যপ্রদেশের চান্দেরি অঞ্চলের প্রাণপুর গ্রাম, সেখানেই বাস ওই তাঁতশিল্লীর পরিবার। প্রায় তের বছর আগে ২০০৯ সালের পহেলা ডিসেম্বরে তাঁতশিল্পী কমলেশ কোরির বাড়িতে আচমকাই হাজির হন আমির খান।
তার অভিনীত ‘থ্রি ইডিয়টস’ ছবির প্রচারে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন আমির। সেই সুবাদেই তাঁতশিল্পী কমলেশ-এর বাড়িতে আচমকা হাজির হয়েছিলেন আমির এবং তার টিম। সঙ্গে ছিলেন ‘থ্রি ইডিয়টস’ ছবির নায়িকা কারিনা কাপুর।
কমলেশের একচালা মাটির বাড়িতেই চলত তাঁত। সেই তাঁতে বোনা কাপড়েই চলত তার সংসার। সেসব দেখেশুনে কমলেশের ঘরের মেঝেতে তার পরিবারের বাকি সদস্যদের সঙ্গে মাদুরে বসে খাবার খেয়েছিলেন আমির-কারিনা। কমলেশের কাছ থেকে ২৫ হাজার টাকা করে দু’টি শাড়িও কিনেছিলেন আমির। এরপর তার মধ্যে একটি কারিনাকেও উপহার দিয়েছিলেন ‘মি. পারফেকশনিস্ট’।
এখানেই শেষ নয়। কমলেশের উদ্দেশে ভেসে এসেছিল একটি আমিরের প্রতিশ্রুতি। ‘থ্রি ইডিয়টস’-এর নায়ক জানিয়েছিলেন মুম্বাইয়ে একটি শোরুম তিনি কমলেশের জন্য খুলে দেবেন, যেখান থেকে নিজের তাঁতে বোনা কাপড় বেচতে পারবেন কমলেশ ও তার গ্রামের বাকি তাঁত শিল্পীরা। প্রয়োজন হলে তারা নিজেদের শোরুমে আমির এবং কারিনার নামও ব্যবহারও করতে পারেন। সব শুনে অভিভূত হয়ে গিয়েছিলেন ওই তাঁতশিল্পী। এরপর কমলেশকে আলিঙ্গন করে ‘এ কে’ আদ্যক্ষর খোদাই করা একটি সোনার আংটি উপহার দেন আমির। দিয়েছিলেন নিজের ফোন নম্বরও। সঙ্গে মুম্বাইতে ‘থ্রি ইডিয়টস’ প্রিমিয়ারে আসার আমন্ত্রণও জানিয়েছিলেন কমলেশ ও তার গোটা পরিবারকে।
এরপর গঙ্গা-যমুনা থেকে জল গড়িয়েছে অনেকটাই। লকডাউনে আরও বহু মানুষের মতো কাজ হারিয়েছিলেন কমলেশ। এরপর করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারাও যান তিনি। বর্তমানে অর্থাভাবে কমলেশের ছেলেমেয়েকে স্কুল ছাড়াতে বাধ্য হয়েছে তার স্ত্রী কমলা।
তিনি নিজে তাঁত বুনতে পারেন না বলে অনেক কষ্টে সংসার চালাচ্ছেন।
কমলেশের স্ত্রী কমলা জানিয়েছেন, শো-রুম করে দেওয়া তো দূরের কথা আমিরের দেওয়া ওই ফোন নম্বরে কল করলে কেউ ওঠেনি। কোনো অর্থ সাহায্য আসেনি। একবার বাধ্য হয়ে সাহায্য প্রার্থনা করে আমির খানকে চিঠিও লিখেছিলেন তারা। সেই চিঠিরও জবাব আসেনি আজ পর্যন্ত। তবে এত অভাবেও বলিউড তারকার দেওয়া সেই সোনার আংটি আজও বেচেননি কমলা। এই দুর্দিনেও সযত্নে সেটি বাঁচিয়ে রেখে দিয়েছেন তিনি। আমিরের তরফে এখনও পর্যন্ত কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।