
মেয়েটাকে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে, তার ঘরের জানালার পর্দা সরিয়ে তাকিয়ে থাকি দূরে। তুষারে ঢাকা এলাকায় রাতের বেলায়ও আলোর ঝলকানি থাকে; স্পষ্ট সব দেখা যায়। এলাকাটা ভালো। প্রায় প্রতিটা বাড়ির মানুষ অন্য সব বাড়ির মানুষকে চেনার চেষ্টা করে। গাড়িতে যাবার সময় স্পিড কমিয়ে হাত নাড়িয়ে মিষ্টি হাসি উপহার দেবে। আমাদের ডান পাশের বাসার ভদ্রলোক থাকেন তার কুড়ি বছরের মেয়েকে নিয়ে। বামের বাসার ভদ্রলোক থাকেন তার মা আর বোনকে নিয়ে।
কতদিন রাস্তা ধরে মাইলের পর মাইল হাঁটি না! তীব্র ঠাণ্ডার দিনে আম্মার সাথে ফোনের আলাপটা অনেকটা এরকম- বরফ আছে?
– আছে
– টেম্পারেচার কত?
– মাইনাস বিশ
– সেকি! এর মধ্যে অফিস যাচ্ছিস? ছুটি নিয়ে বাসায় চলে যা? বাচ্চাদের এর মধ্যে স্কুল যেতে হয়?
– [আমি হো হো করে হেসে উঠি]
–
এর মধ্যে গাড়ি চালাস কীভাবে!
– [আমি আবারো হাসি]
ওদিকে গাড়ির চাকা পিছলাতে পিছলাতে এগুতে থাকে l
শীতের সৌন্দর্য উপভোগ করা যায় ঠিকই, কিন্তু বেশিক্ষণ সহ্য হয় না। ভূ-স্বর্গের মধ্যে কাউকে খাঁচায় বন্দি করে রাখলে যেমন হয় আর কি! বাসার সামনের বরফ সরিয়ে রাখার আর জায়গা পর্যন্ত নাই। মানুষ যখন অপর কারোর ওপর বিরক্ত থাকে, তখন তার সাথে সহজ হওয়া খুব কঠিন l বিরক্তি মানুষকে অন্ধ করে দেয়; অপরের গুণাগুণও চোখ এড়িয়ে যায়; সুন্দর লেখা লিখলেও পড়তে গেলে মনযোগ হারিয়ে যায়। ঘটনাটা সেরকম। শুভ্র তুষারের রূপ দেখে আর বোকা সাজি না। তবুও একটা নিশ্চিত ভবিষ্যৎ আছে, এলাকাটা সবুজে ভরে উঠবে। পাখি আসবে, বাচ্চারা আইসক্রিম হাতে, হৈ চৈ করে সাইকেল চালাবে। নানা-নানী, দাদা-দাদীরা হাঁটতে বের হবে। সবার চোখে মুখে ফুটে উঠবে আনন্দ, তৃপ্তির ছাপ! শত শত পার্ক পিকনিকের ধোঁয়ায় ভরে উঠবে। তাপমাত্রা হয়তো চল্লিশেও উঠবে; বাংলাদেশের মতো!
বুক ভরা আশা নিয়ে আমরা প্রতীক্ষায় থাকি; প্রায় ছয়টা মাস!
অটোয়া, কানাডা