
উন্নত চিকিৎসার কথা বলে এক ব্যক্তিকে ভারতে নিয়ে তার কিডনি রেখে দেওয়ার অভিযোগে বিউটি বেগম নামে এক নারীকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। গত রোববার র্যাব-৩ এর একটি দল ঢাকার আশুলিয়া এলাকায় এই অভিযান চালায়। র্যাব বলছে, গ্রেপ্তার নারী কিডনি পাচার চক্রের সদস্য। এই চক্রের মো. শহীদ ও শেখ ফরিদ নামে দুইজন পলাতক রয়েছে।
র্যাব জানায়, একটি চক্র দীর্ঘদিন ধরে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে নিরীহ লোকদের উন্নত চিকিৎসার প্রলোভন দেখিয়ে জিম্মি করে দেশে-বিদেশে অবৈধভাবে মানবদেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ বিক্রি করে আসছে। এমন অভিযোগ পেয়ে গোয়েন্দা নজরদারি শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় অশুলিয়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে মানব দেহের অঙ্গ-প্রতঙ্গ পাচার চক্রের সদস্য বিউটি বেগম গ্রেপ্তার করা হয়। তার কাছ থেকে একটি মেডিকেল ডকুমেন্ট ফাইল এবং একটি পাসপোর্ট উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তার নারী র্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, গত বছরের সেপ্টেম্বরে আবুল কাশেম নামের এক ব্যক্তিকে ভারতে নিয়ে উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার প্রলোভন দেখান তিনি। এজন্য তাকে ভারতে গিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিকে চিকিৎসা করানোর কাগজপত্রও দেখানো হয়। কাশেম ও তার স্ত্রীকে ওই বছরের নভেম্বরে যশোর সীমান্ত দিয়ে ভারতে নিয়ে যাওয়া হয়।
সেখানে ওই দুইজনকে মো. শহীদ ও শেখ ফরিদের জিম্মায় দেওয়া হয়। তারা চিকিৎসার নামে কৌশলে কাশেমের কাছ থেকে সেচ্ছায় কিডনি দান করার সম্মতি কাগজপত্রে স্বাক্ষর নেয়। কয়েক দিন পর তাকে কলকাতার একটি হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর কথা বলে ভর্তি করায়। সেখানেই তার কিডনি রেখে দেওয়া হয়।
ঘটনার শিকার আবুল কাশেম জানিয়েছেন, হাসপাতালের একটি কক্ষে তাকে একা নিয়ে অজ্ঞান করে অপারেশন করা হয়। অপারেশন শেষে জ্ঞান ফেরার পর তার পেটের বাম পাশে কাটা দেখে চিকিৎসকের কাছে জানতে চান। তখন চিকিৎসক তাকে জানান, তিনি নাকি স্বেচ্ছায় কিডনি দান করেছেন! পরে তিনি আসামিদের কাছে কিডনি বিক্রির কথা জানতে চাইলে তাকে হুমকি দেয় এবং গত ২১ ফেব্রুয়ারি স্ত্রীসহ বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেয়।
র্যাব-৩ এর অপারেশন ও গোয়েন্দা শাখার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বীণা রানী দাস জানান, গ্রেপ্তার ও পলাতক আসামিরা মানবপাচার চক্রের সদস্য। এই চক্রটি বাদীকে চিকিৎসা দেওয়ার নামে দেশের বাইরে নিয়ে বাম পাশের কিডনি বিক্রি করে দেয়। এরপর থেকে বাদী দেশে ফিরে সুচিকিৎসা না পেয়ে অসহায় জীবনযাপন করছেন।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, এরা এমন আর কারও কিডনি বিক্রি করেছিল কিনা, তার তদন্ত চলছে।