
আমার ছোট ভাই সৈয়দ আকতার তার শিল্পপতি বন্ধু জাহাঙ্গীর আলমকে সকাল-সকাল ডেকে ছিলো তার নতুন কেনা হোন্ডা এইচ আর ভি সহ। উদ্দেশ্য বান্দরবান যাওয়া। সেখানে স্বনামধন্য ১৫জন স্থপতির দল দুই ভ্যান পুরে স্থপতি বাবুল ভাই (মুস্তফা আমিন (Domus) নিয়ে এসেছেন তার ‘সাইরু’ নামের হিল রিসোর্টে শিল্পীবন্ধু অলক রায়ের নতুন ভাষ্কর্য্য স্থাপনের সেলিব্রেশনে।স্বনামধন্য স্থপতির মধ্যে শামসুল ওয়ারেশ ও রয়েছেন। আমি ভাবলাম চট্টগ্রাম বাড়ি এসেছি যখন যাই তাদের সঙ্গে গিয়ে দেখা করি। ওয়ারেশ ভাই ও অলকের সাথে কথাও হয়েছে ফোনে। মুস্কিল হলো ভাইয়ের গাড়ি গেছে মেকানিক শপে রোগ সারতে। তাই ভাইয়ের এই চমৎকার বন্ধুর আগমন। শিল্পপতি স্থপতি ছাড়াও তিনি শখের আঁকিয়ে,আবৃতিকার,গায়ক কবিতা পাঠ পাগল মানুষ। যাত্রা শুরুর আগে বান্দরবানে ফোনো কাউকে পাচ্ছিনা। ভাঙ্গা-ভাঙ্গা তরঙ্গে অলক রায়কে পেলাম।
সে বলে – এত দূর এই গরমে এসো না বন্ধু,আমাদের পাবেনা। আমরা কোন সকালে সাইরু রিসোর্ট থেকে বেরিয়ে নীলগিরি আর্মি ক্যানটার্মেন্ট পার হয়ে পাহাড়ি নদীর ঘাটে থানচির উদ্দেশ্যে সাত নৌকায় ভেঁসে পড়বো এখন। বুঝলাম তারা সবাই আজ নেটওয়ার্কের বাইরে চলে যাবে। সকাল দশটা বেজে গেছে,অনেক দেরী করে ফেল্লাম। জাহাঙ্গীর আলম সদান্দ হাসি খুশি মানুষ তিনি বলেন – চলো আকতার,ইকবাল ভাইকে নতুন রূপে সাজা পতেঙ্গা আর নতুন করা মেরিন ড্রাইভে ঘুরিয়ে আনি। আমার ছোটভাই এককালের চট্টগ্রাম ও জাতীয় ব্যাডমিন্টন চ্যাম্পিয়ন খেলোয়াড়,এখনো বেশ বলশালি। সেও খুশিতে রাজী। মেরিন ড্রাইভতো প্রায় কানাডার মাঝারী হাইওয়েকে পাল্লা দিতে পারে।রাস্তার
একদিকে বঙ্গপো সাগর,চট্টগ্রাম পোর্ট আরো দূরে। অবাক হলাম ঢাকার রাস্তার দীর্ঘ লম্বা জ্যামের মত শ’য়ে শ’য়ে জাহাজ লাইন দিয়ে দিনের পর দিন অপেক্ষায় আছে বিশ্ববন্দর থেকে বয়ে আনা মাল খালাস করতে। ফেরার পথে জাহাঙ্গীর আলম অনুমতি চাইলেন কবিতা পড়ার। বল্লাম- আরে ভাই পড়েন,এইতো পহর কবিতা পড়ার। চট্টগ্রাম শহরের আরো কাছে আসতে পাহাড়ের বুক কেটে পথ গেছে।পথের দুই দিকে পাহাড়েরা অভিবাদন করছে। ঠিক যেন ক্যালিফোর্নিয়ার পাহাড়কাটা পথের স্মৃতিতে আমার মন টান দিলো আমাকে। ঠিক তখনি জাহাহাঙ্গীর আলম গাড়ির পেছনের সিটে বসে রবীন্দ্রনাথের একটি উদাস করা গান গেয়ে উঠলেন। কে বলে আমাদের বাংলাদেশ এগুচ্ছেনা! ঠিকই এগুচ্ছে।সঙ্গে মানুষও যদি না পিছিয়ে সামনে এগুো। সত্যি বদলে যেত বাংলাদেশ। চোরের মত চুরি করে দেশ ছেড়ে বিদেশে পালাতে আর হতোনা। যাক,যা হয় হোক,আমি কিবা করতে পারি! আমার সঙ্গী দুইজনকে ধন্যবাদ দিতে পারি। আমার জন্মভূমি মা চট্টগ্রামে আমার আশৈশব হাজারো স্মৃতিমাখা এই সাগরের এই পতেঙ্গার হুহু বাতাসে আমাকে আবার এনে দাঁড়া করার জন্যে।এই টুকুতো করতেই পারি।
স্কারবোরো, অন্টারিও, কানাডা