
কানাডায় পালিয়ে আসা আফগান দোভাষীরা বলেছেন, রাশিয়ার সেনাবাহিনীর হাত থেকে ইউক্রেনীয়দের যে ধরনের সুবিধা দেওয়া হচ্ছে একই ধরনের সুবিধা তাদের পরিবারেরও প্রাপ্য। ইউক্রেনীয়দের মতো তাদের পরিবারও যাতে অতি সহজে কানাডায় প্রবেশ করতে পারেন একটি সংসদীয় কমিটির সামনে সোমবার সরকারের প্রতি এই দাবি জানান তারা।
দোভাষীরা অভিযোগ করেন, ভ্রমণ সংক্রান্ত অসংখ্য নথিপত্র চাওয়ায় তাদের পরিবারের সদস্যরা বিপাকে পড়েছেন। কারণ, তালেবানদের কাছ থেকে এসব নথিপত্র সংগ্রহ করা কঠিন।
কানাডিয়ান সশস্ত্র বাহিনীর হয়ে এক সময় দোভাষীর কাজ করেছিলেন গুলাম গাজী। তাদের স্বজনদের কানাডায় আনতে মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দেওয়ায় সরকারকে অভিযুক্ত করেন তিনি। মার্চের শেষ নাগাদ আফগানিস্তানে দোভাষীদের পরিবারের সদস্যদের কানাডায় আনার যে প্রতিশ্রুতি অভিবাসন মন্ত্রী শন ফ্রেজার দিয়েছিলেন তা ভঙ্গের অভিযোগ আনেন দোভাষীরা।
কানাডার সশস্ত্র বাহিনীর হয়ে দোভাষীর কাজ করেছিলেন সাইফুল্লাহ মোহাম্মদ জাহেদ। তার প্রশ্ন, ইউক্রেনীয়দের কানাডায় প্রবেশ যেখানে এতো সহজ আফগানদের বেলায় তা নয় কেন? আফগানিস্তান বিষয়ক সংসদের বিশেষ কমিটির সামনে জাহেদ বলেন, রাশিয়ার আফগান অভিযানের সময় তার পরিবারের সদস্যরা নিহত হয়েছিলেন। ইউক্রেনীয়দের প্রতি আমার সহমর্মিতা রয়েছে।
ন্যুনতম শর্তে হাজারও ইউক্রেনীয়কে কানাডায় প্রবেশের অনুমতি প্রদানের প্রশংসা করেন তিনি। কিন্তু তালেবানদের বিপদের মুখে থাকা আফগানদের অপেক্ষা করানো কেন সেই প্রশ্নও তোলেন তিনি। আফগানদের কানাডায় প্রবেশের অনুমতি পেতে অনেক শর্ত পূরণ করতে হয়। ইউক্রেনীয়দের চেয়ে তা অন্তত ১৫টি বেশি।
জাহেদ বলেন, ইউক্রেনীয়দের জন্য যা করা হচ্ছে আমি তাকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। কিন্তু আমাদের প্রতিও যেনো একই আচরণ করা হয়। সংসদীয় কমিটিকে তিনি বলেন, ইউক্রেনীয়দের কানাডায় আনার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর আমাদের পরিবারের সদস্যদের আনার প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে গেছে। জানুয়ারি থেকে পরিবারের সদস্যদের আবেদনের কোনো অগ্রগতি নেই।
আরেক সাবেক দোভাষী হামিদ খান বলেন, অনেকেই সেখানে জীবন-মৃত্যুর মাঝখানে বসবাস করছে এবং কানাডার সশস্ত্র বাহিনীকে সহায়তার কারণে প্রতিশোধের নেশায় তালেবানরা তাদের ধাওয়া করছে। তাদের কান্না শোনার জন্য কানাডার আইনপ্রণেতাদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
বিলম্ব হওয়ার অর্থই যে তালেবানদেরকে তাদের খুঁজে পাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া সেই সতর্কতাও উচ্চারণ করেন তারা। প্রতিশোধ হিসেবে তালেবানরা যে আফগান দোভাষীদের পরিবারের সদস্যদের শাস্তি দিচ্ছে, নারী-পুরুষদের মারধর ও তাদের সম্পদ কেড়ে নিচ্ছে কমিটি সে ব্যাপারে শুনেছে। দোভাষীরা বলছেন, কানাডার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নথিপত্র পরিবারের সদস্যরা পুড়িয়ে ফেলছে এবং এক বাড়ি থেকে আরেক বাড়িতে পালিয়ে বেড়াচ্ছে।
জাহেদ বলেন, কানাডায় আসার সবুজ সংকেতের আশায় তার পরিবারের ১২ জন সদস্য বর্তমানে একটিমাত্র কক্ষে লুকিয়ে আছে।