
কানাডায় প্রতি চার বছর পর পর জাতীয়, প্রাদেশিক এবং স্হানীয় সরকার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। কখনো কখনো বিভিন্ন কারণে অগ্রিম নির্বাচনও হয়ে থাকে। নির্বাচনের জন্য কিংবা নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোকে কোন আন্দোলন সংগ্রাম বা ভাঙচুর করতে হয় না। গনতান্ত্রিক পথ ও পদ্ধতির বাইরে সরকারও কোন অন্যায়, অনৈতিক ও অবৈধ চালাকি করে চার বছরের ক্ষমতা পাঁচ বা দশ বছর দীর্ঘায়িত করার চেষ্টা করেন না। এর মুল কারণ হলো সরকার ও বিরোধী দলের সংসদে ভুমিকা পালনে কিংবা রাস্তা ঘাটে কোথাও কোন আলাদা গুরুত্ব সহকারে দেখা হয় না, ক্ষমতার অপব্যবহার বা ভিআইপি ঠাট বাট দেখা যায় না।
নির্বাচন এলেই দলগুলো নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ঘোষিত নির্দিষ্ট তারিখের পর থেকে প্রচার প্রচারণা শুরু হয়। কিন্তু তা কখনোই জনগণের ব্যক্তি স্বাধীনতা, প্রাইভেসী বা অধিকার খর্ব করে নয়। কোথাও কোন দেয়াল লেখা, চিকা মারা হয় না। দিন রাত চব্বিশ ঘন্টা ঘ্যা ঘ্যা অমুক ভাই তমুক ভাইয়ের নামে মাইকিং করে জনগণের কর্ণ গহ্বর ক্ষতি করার বাপের সাধ্য কারো নেই।
তবে মানুষের বাসা বা দোকানের সামনে নির্বাচন কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত পোষ্টার বা লন সাইন লাগানো হয় যদি সেই বাসা বাড়ীর বা দোকান মালিক অনুমতি দেন।
এই প্রথম বারের মত আমি নিজেই আমার এলাকার লিবারেল পার্টির এমপিপি প্রার্থী মাযহার সফিকের ক্যাম্পেইন অফিসে গিয়ে লিখিত অনুমতি দিয়ে এসেছিলাম যাতে আমার বাসার সামনে লন সাইন বা নির্বাচনী পোষ্টার লাগানো হয়। আমাদের জন্য অবাক করা হলেও সভ্যতার প্রথম ছবক হিসেবে তারা আমার বাসার সামনে পোষ্টার লাগিয়ে দিয়ে গেলেও সাথে একটি নোট লিখে রেখে গেছে। পরিস্কার বলা হয়েছে এই সাইন বা পোষ্টার যদি ভুলক্রমে আমার অনুমতি ছাড়া লাগানো হয়ে থাকে তাহলে যেন আমি ফোন করে তাদেরকে জানাই, সাথে সাথে তারা রিমুভ করে দিবে।
কেয়ারটেকার সরকার, জাতীয় সরকার, কে বড় নেতা কে ঘোষক কে নায়ক এসবের চেয়ে একটি গণতান্ত্রিক দেশে এই যে মানুষের অধিকার, অনুমতি, প্রাইভেসী, ভদ্রতা এসব শেখা অধিকতর গুরুত্বপূর্ণ। দিনশেষে মানুষের জন্যই যখন এতসব, সেই মানুষকেই যদি গুরুত্ব না দেয়া হয়, সম্মান না করা হয় তাহলে বাকী সবই অপ্রয়োজনীয় কিংবা কম গুরুত্বপূর্ণ কাজ। এই শিক্ষাটা যতদিন আমরা না শিখবো ততদিন বাগাড়ম্বর হবে কাজের কাজ কিছুই হবে না।
মনে রাখবেন, আপনি এমপি হবেন, মন্ত্রী হবেন তাতে আমার কি? গত চার বছরে এখানেও অনেকে এমপি মন্ত্রী হয়েছিলেন, নুতন করে আবার ইলেকশন হবে আগামী ২রা জুন, আমরা ভোট দিব কিন্তু কেউ কি বলতে পারবে গত চার বছরে আমার কোন এমপি, এমপিপি দরকার হয়েছিলো? কোন তদবীর, বদলী, এমনকি কোন ভোজ সভায় কি আমাকে ডাকা হয়েছিল? হয় নি। হয় না। কাজেই বেসিক জিনিষের অভাব যে দেশে সেই দেশে হাড্ডি ছুঁড়ে দেবার মত করে নানা ইস্যুর আজাইরা বিতর্ক ছুঁড়ে দেয়া হয় আর সেগুলোর পেছনে আমরা দৌড়াইতে থাকি। আফসোস!