9.5 C
Toronto
রবিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৫

কাজী নজরুল ইসলাম

কাজী নজরুল ইসলাম - the Bengali Times
কাজী নজরুল ইসলামের প্রতিকৃতি

আমি লেখালেখি করি কখনো আনন্দ পাই লিখতে, কখনো লেখতে ইচ্ছা করে তাই লিখি। কিন্তু আজকের লেখাটা মনে হচ্ছে আমার দায়িত্ব । আমার শ্রদ্ধা প্রকাশ করার অনুভূতি প্রকাশ করার লেখা।

আজ ২৫ মে ১১ই জ্যৈষ্ঠ আমাদের প্রানের কবি, প্রিয় কবি, সাম্যের কবি, বিদ্রোহী কবি এবং আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২৩ তম জন্ম বার্ষিকী । ১৯৭৬ সালে চিকিৎসাধীন অবস্থাতে পি জি হাসপাতালে বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন।
মাত্র ৪৩ বছর বয়েসে কবি অসুস্থ হয়ে বাক শক্তি হারিয়ে ফেলেন। তাঁর গান” ফুলেরও জলসায় নীরব কেন হে কবি”। ভেবে অবাক হই কবি কি করে বুঝতে পেরেছিলেন তিনি নিরব হয়ে যাবেন । এই ৪৩ বছর বয়েস পর্যন্ত তিনি হাজারো প্রতিকূলতা, টানা পোড়ন জীবনের মাঝেও দু’ হাতে লিখেছেন। তিনি সামান্য সময় পেলেও এই সময় টুকুতেই ৪০০০ বেশী গান লিখেছেন ও তাতে সুর দিয়েছেন।

- Advertisement -

তিনি লিখেছিলেন” মসজিদেরই পাশে আমায় কবর দিও ভাই। যেন গোরে থেকেই মোয়াজ্জিনের আজান শুনতে পাই”। তাঁর এই পংতি অনুসরণ করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদের পাশে তাঁকে চির শায়িত করা হয়।

কবি নজরুল ইসলাম ছোটদের নিয়েও অসংখ্য কবিতা লিখেছেন। একদম যখন ছোট ছিলাম এখনো চোখে ভাসে আমার একটা রঙ্গিন ছড়ার বই ছিলো তাতে অনেক ছড়া ছিলো ছড়ার সাথে মিলিয়ে ছিলো নানা রঙের ছবি। আমার সে বইটিতে প্রথন কবিতাটি ছিলো কবির” প্রভাতী, কবিতাটি, ভোর হোলো, দোর খুলো খুকু মনি উঠোরে । সে টাই ছিলো আমার জীবনের প্রথম কবিতা শেখা ।

এখন যখন আমার বাগানে কাঠ বিড়ালিকে কুট কুট করে আমার ফল বাগানের ফল খেতে দেখি আমি সাথে সাথে বলতে থাকি, কাঠ বিড়ালি, কাঠ বিড়ালি পেয়ারা তুমি খাও?

এ রকম কাজি নজরুল ইসলাম ছোটোদের বহু গান কবিতা লিখে গেছেন। ছোট বেলাতে আমরা কাজী নজরুল ইসলামের বহু গানের সাথে নৃত্য পরিবেশন করেছিলাম” মোমের পুতুল মোমের দেশের মেয়ে নেচে যায় “। “ ছন্দে ছন্দে দুলি আনন্দে আমি বনো ফুল গো” ।“ প্রজাপতি প্রজাপতি কোথায় পেলে ভাই এমনো রঙ্গিন পাখা” ।কতো আসংখ্য স্মৃতি মনের মাঝে খেলা করে। ছাত্র জীবনে আমাদের প্রিয় কবির বহু কবিতা আবৃত্তি করে পুরস্কার অর্জন করেছি। ছাত্রদের অনুপ্রানিত করার জন্য তিনি লিখেছেন,” আমরা শক্তি আমরা দল , আমরা ছাত্র দল”।

তিনি প্রচুর ইসলামী গানো লিখে গেছেন। ছোট বেলা থেকে রোজার ঈদ এর আগের রাত থেকে শুরু হতো “,রমজানেরই রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ”। কাজী নজরুল ইসলামের এই গানটি ছাড়া যেন ঈদ এর আনন্দই আসতো না।

কবি নজরুল ইসলাম ছিলেন সাম্য বাদি কবি সেটা আমরা তার লেখনী ও কর্ম কাণ্ডে পুরো পুরি অনুভব করতে পারি। তাঁর কবিতা “ গাহি সাম্যের গান- মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই নহে কিছু মহিয়ান”। এমন প্রচুর সাম্য বাদী গান কবিতা তিনি লিখেছেন।

বিদ্রোহী কবি নজরুল অনেক বিদ্রোহের গান ও কবিতা লিখেছেন। সে জন্য তাঁকে জেলে যেতে হয়েছে বহুবার। চল চল চল, ঊর্ধ্ব গগনে বাজে মাদল, শিকল পরা ছল পরা এ মোদের শিকল পরা ছল। এই ধরনের এবং আরো অনেক বেশী বিপ্লবী গান তিনি লিখে গেছেন। তাছাড়া তিনি ছিলেন প্রেমের কবি। হাজার প্রতিকূলতা সত্তেও প্রেম বারে বারে এসে তাঁর হৃদয়ে ধরা দিয়েছে। তাঁর লেখা, “ মোর প্রিয়া হবে এসো রানী দেবো খোঁপায় তারার ফুল” ।

তাঁর পুত্র বুল্বুলের মৃত্যুর পর তিনি লেখেছিলেন,” ঘুমিয়ে গেছে শ্রান্ত হয়ে আমার গানের বুলবুলি” তাঁর নানা রকম পরিস্থিতি পরিবেশে তিনি অগনিত গান লিখে গেছেন। শুধু মনে হয় তিনি যদি তার পুরো জীবনটা লিখে কাটিয়ে যেতে পারতেন তাহলে না জেনো আমরা কতো কিছু পেতাম

অবিভক্ত ভারতের বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে তাঁর জন্ম ১৮৯৯ সালে। তাঁর ডাক না ছিলো” দুখু মিয়া”। ছোট বেলাতে তিনি দুখু মিয়া নামেই পরিচিত ছিলেন।

১৯৭২ সালের ২৪সে মে অসুস্থ কবি নজরুল ইসলামকে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তাঁকে বাংলাদেশের জাতীয় কবি হিসাবে ঘোষণা দিলেন। কিন্তু দুঃখ তিনি সেটা কিছুই বুঝতে পারলেন না। আমরা চিনলাম আমাদের জাতীয় কবিকে। তাঁর চারপাশের ভক্তদের আবেগের, আনন্দের দৃশ্য দেখে তাদের মুখে তাঁর গান শুনে নিরবে অশ্রু ফেলেছেন। তিনি যে ছিলেন ভাষা হীন । আজকে কবির জন্ম বার্ষিকীতে আমাদের বিনম্র শ্রদ্ধা , ভালোবাসা ।

ম্যাল্টন, অন্টারিও, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles