
মরলে হয়ত আমি একদিন ভাতের জন্যই মরবো।
কোন এক বাংলা সিনেমায় দেখেছিলাম। নায়িকার অন্য কারো সাথে বিয়ে হয়ে গেছে নায়ক মদের বোতল হাতে নিয়ে শহরের রাস্তায় হেলেদুলে হাঁটছে আর মদ গলায় ঢালছে। সাথে গান গাইছে… “হয় যদি বদনাম, হোক আরো আমিতো এখন আর নই কারো…”
জীবনে মদ খেয়েছি বেশ কয়েকবার। তবে প্রেমে ছ্যাকাছুকা খেয়ে নয়। এমনি শখ করে। দেশে বিদেশে বন্ধুদের সাথে পার্টিতে আড্ডায়। কিন্তুু ভালো লাগেনি। মনে হয়েছে এটি তিতা পানীয় ছাড়া আর কিছুই না। তার চেয়ে নরমাল পানির স্বাদ বেটার। এলকোহলিক ড্রিংকস্ আসলে ডিপ্রেসিভ। দেহমনকে অবসাদগ্রস্থ করে দেয়। তারপরেও মানুষ কষ্ট ভুলে থাকা জন্য বা মানসিক পেইন রিলিফের জন্য মাদক নেয়। যাদের দেহ ও মন কোন কিছুতে হাইপার থাকে তাদের জন্য এলকোহল কিছুটা কার্যকরি। কারন এলকোহল স্নায়ু গুলোকে অবসাদ করে দেয়। এটাতে আসলে আমার মন ও শরীর কোনটাই চাঙ্গা হয়না।
গাঁজা (মারিজুয়ানা ) সলে মন ও দেহকে চাঙ্গা করে। মানে হাইপার করে। বেশ কয়েকবার গাঁজাও খেয়েছি। শখ করে। ওটাও তেমন স্বাদ লাগেনি। ফলে নেশাও হয়নি। দেহ মনে চাঙ্গাও লাগেনি।
তবে শখ করে সিগারেট খেতে গিয়ে তা আর ছাড়তে পারিনি। খুব মজা লাগত তামাকের সিগারেট। সিগ্রেট বত্রিশ বছর খেয়েছি। তামাকের মত স্বাদ বোধহয় আর কোন কিছুতে নেই। পৃথিবী সব চেয়ে বেশী মানুষ তামাকের নেশায় আসক্ত।
সিগারেট খেয়ে বলতে গেলে অনেক উপকার পেয়েছি। যখন সিগারেটের ধুমপান করতাম তখন ক্ষুধা কম লাগত। ফলে ভাততরকারী ও অন্যান্য খাবার তেমন বেশী খাওয়া হতোনা। ফলে ওজন কন্ট্রোলের মধ্যে ছিল। মশা ও ছাড়পোকাও কামড়াতো না। কারন রক্তে তামাকের ব্যাড কেমিকেল থাকায় মশা ও ছাড়পোকা বোধহয় তা পছন্দ করতনা।
টোব্যাকো কোম্পানিগুলোর যুক্তি ছিল এরকম! মানুষ তামাক সেবন করলে নানাবিধ অসুখে পড়বে আর তাঁরা আরলি মারা যাবে। মানুৃস আরলি মারা গেলে বয়স্কদের চিকিৎসা করাতে সরকার ও পরিবারগুলোর যে খরচ হত তা থেকে তাঁরা বেচে যাবে। সে জন্য সবার তামাক সেবন করা খাওয়া উচিৎ! তাছাড়া তামাক বিক্রি থেকে ট্যাক্স হিসেবে সরকার অনেক বেশী আয় করে যা দিয়ে সরকার উন্নয়নমুলক কাজও করতে পারে। এ জন্য কিন্তুু সরকার তামাক ও তামাক জাতীয় দ্রব্রসামগ্রী বিক্রি করা কখনো বাতিল করেনা।
আমি সিগারেট ছেড়েছি তিন বছর হল। সিগারেট ছাড়ার কারনে মুখের রুচি এত বেড়ে গেছে যে, জ্বর হলেও দিব্যি স্বাভাবিক খাবার খেতে পারি।
এবারের রোজার ঈদের পরদিন থেকে কভিডে আক্রান্ত হয়েছিলাম। জ্বর, সর্দ্বি, গলাব্যাথার সাথে নাকে সবকিছু গন্ধবিহীন ছিলাম।কিন্তুু জিহবায় খাওয়ার স্বাদ একটু কমে নাই। খাওয়া পুরাপুরি চালিয়েছি। এখনো শুধু খিদা লাগে। শুধু ভাত খেতে ইচ্ছা করে। আর ওজন শুধু বাড়ছেই। বাজারে খাবারের জিনিসের দামে আগুন, কিন্তুু জিহবা তো তা মানতে ও বুঝতে চায়না।
আগে শুনতাম, মানুষ না খেয়ে মরে, এখন দেখছি আমি খেয়ে খেয়ে মরার জোগার করছি।
করোনার কারনে শরীর দুর্বল হয়ে গেছে। হাঁটতে গেলে এখনো মাথা ব্যাথা করে। ব্যায়াম করতে গেলেও। করোনা পরবর্তি শারীরিক সমস্যা খুব বেশী ডিসটারবিং মনে হচ্ছে। এখন মনে হয়্র করোনা হলে মানুষ কেন মারা যায়?
টিকার বুষ্টার ডোজ নিয়েও করোনার আক্রমন থেকে মুক্ত থাকতে পারলাম না।
বহু বছর ধুমপান করার কারনে হয়ত দেহের কার্ডিও সিস্টেমও দুর্বল হয়ে গেছে। টোব্যাকার তথাকথিত পজিটিভ ইমপ্যাক্ট এর ফলাফল পাচ্ছি কীনা জানিনা।
ধুমপানের নেশা ছাড়তে পারলেও ভাতের নেশা ছাড়তে পারছিনা। হুমায়ুন আজাদ তার কোন এক কবিতায় লিখেছিল, “আমি হয়ত ছোট কোন জিনিসের জন্য মারা যাবো…” হুমায়ুন আজাদের মত আমারও মাঝে মাঝে মনে হয়, আমি হয়ত একদিন ভাতের নেশার কারনেই মারা যাবো।
টরন্টো, কানাডা