
কানাডার বৃহত্তম প্রদেশ অন্টারিওর সংসদ নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হলো। মনে পড়ে গেল কিছু অতীত নির্বাচনী স্মৃতি।
১৯৮৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচন শুরু হয়েছে তখন বাংলাদেশে। আত্মীয় হওয়া সত্তেও নীতিগত কারণে জাতীয় পার্টির তৎকালীন প্রার্থীর পরিবর্তে আমি দ্বিতীয়বারের মত সমর্থন দিলাম স্বতন্ত্র প্রার্থী রিকসা মার্কা নিয়ে প্রতিদ্বন্দিতাকারী বীর মুক্তিযোদ্ধা ফকির আব্দুল জব্বারকে যিনি বর্তমানে রাজবাড়ী জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান। তখন তিনি গোয়ালন্দ উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ছিলেন। মাত্র এক বছর আগেই তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন যেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামাত সহ ২২ দলের বিরোধীতা এবং প্রতিহত করার ঘোষণা সত্তেও আমরা জব্বার ভাইকে সর্বাত্মক অর্থাৎ অর্থ, শ্রম ও সময় দিয়ে উনাকে সমর্থন দেই। যাহোক সেসব ইতিহাস পরে একদিন ডিটেইলস বলার প্রয়োজন হতে পারে, কারণ ইদানিং অনেকেই সেসব ভুলতে বসেছে।
যে কথা বলার জন্য আজকের এই লেখা সেটা হলো, ১৯৮৬ সালে যখন রিকশা মার্কা নিয়ে প্রতিদ্বন্দিতাকারী ফকীর আব্দুল জব্বার ভাইয়ের জন্য প্রচারণা শুরু করলাম, সেটা ছিল কঠিন এক কাজ। বাংলাদেশে প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচন করা একটি দুরুহ কাজ তা সকলেই জানেন। কয়েকদিন আমরা পা’য়ে হেঁটে গোয়ালন্দ বাজার থেকে দৌলতদিয়া ক্যানাল ঘাট হয়ে নদীর পাড় ধরে গ্রামের পর গ্রাম ঘুরে উড়াকান্দা হয়ে রাজবাড়ীর মুলঘর, রাজাপুর, বসন্তপুর হয়ে বিশাল এলাকা কাভার করে জব্বার ভাইয়ের জন্য ক্যানভাস করেছিলাম। সাথে সেদিন অনেকেই ছিলেন তার মধ্যে তৎকালীন আওয়ামী যুব লীগের সভাপতি, আমার অত্যন্ত প্রিয় আবুল দেওয়ান ভাই ছিলেন অন্যতম। যতদুর মনে পড়ে আমাদের অনেকেরই হাত পা ফুলে গিয়েছিল। খাবার ছিল নিতান্তই অপ্রতুল।
যাহোক একদিন আমার মোটর সাইকেলে আমার এক বন্ধুকে নিয়ে গ্রামে নির্বাচনী প্রচারে বের হয়েছি। সেই বন্ধুটি এখন আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড, হয়তো এই লেখা তার চোখেও পড়বে। আমি আমার ইয়ামাহা মোটর বাইক চালিয়ে যাচ্ছি, আর সেই চলন্ত অবস্হায়ই মাঠের কৃষকদের চিৎকার করে করে বলছি, রিকসা মার্কায় ভোট দিবেন, রিকসা মার্কায় ভোট দিবেন। হঠাৎ করে পেছন ফিরে লক্ষ্য করে দেখি আমার বন্ধুটি যিনি আমারই মোটর বাইকের পেছনে বসে আছেন, হাত নেড়ে নেড়ে কৃষকদেরকে ইশারায় মানা করছেন, বলছেন যাতে তারা আমার কথা না শোনেন অর্থাৎ রিকসা মার্কায় ভোট না দেন। সেদিন আমার সেই তরুণ বয়সে নুতন একটা অভিজ্ঞতা হলো যে, কেউ কেউ আপনারটা খাবেন, আপনার সাথেই থাকবেন, এমনকি আপনার দলই করবেন, কিন্তু তারপরও তিনি আপনার বিরুদ্ধে কাজ করতে পারেন যা আপনি হয়তো কল্পনাও করতে পারবেন না। ধরা পড়লে নানা কুযুক্তি দিয়ে আপনাকে বুঝ দেবার চেষ্টা করবে।
অন্টারিও প্রদেশের এই নির্বাচনে সেরকম কিছু অভিজ্ঞতাও দেখছি যদিও তাদের যুক্তির কোন অভাব নেই।