
যারা ত্রিশ পঁয়ত্রিশ বছর আগে অস্ট্রেলিয়া কানাডা আমেরিকায় চলে এসেছিল শুধু তারাই জানে এ সমস্ত দেশের মিডিয়া বাংলাদেশের নাম উচ্চারণ করার আগে বলতো ‘ পৃথিবীর অন্যতম দরিদ্র দেশ’ তারপর মূল খবরটা লিখত কিংবা পড়ত। যেমন; ‘পৃথিবীর অন্যতম দরিদ্র দেশে আজ সাধারণ নির্বাচন হচ্ছে’। এখন সেই সম্বোধন উবে গেছে। বিশ্ব মিডিয়াকে এই বলে বাংলাদেশ শিক্ষা দিয়েছে যে, গরীবকে গরীব বলতে নেই, ধনীকে ধনী বলতে নেই। এই সমস্ত মন্তব্যও একটা জাতিগত বৈষম্য।
আজ বাংলাদেশর শক্ত অর্থনৈতিক অবস্থা যেখানে এসে দাঁড়িয়েছে তা বাংলাদেশের মানুষই করে দেখিয়েছে। আমি তো কানাডার মত উন্নত দেশে এসে কবরের যায়গা কিনে বসে আছি অথচ আমার হাত দিয়ে দুই পয়সার অবদান খুঁজে পেতে দূরবীন লাগবে। যদি বলেন বাংলাদেশের ৯০% লোক চোর কিংবা অসৎ এব্যাপারে আপনাদের সাথে কোন তর্ক করতে যাব না। তবে আজকের উন্নত বাংলাদেশ কিন্তু ৯০% লোকের কষ্টের ফসল। তারা যদি ১০০% সৎ হতো উন্নয়নের অগ্রগতি সেই হারে বৃদ্ধি পেত। সাধারণত বাংলাদেশের মানুষকে চোর বাটপার ঘুষখোর বলতে চাই না। কেননা বাবা মা, আত্মীয় স্বজন ভাই-বোনদের কে গালি দিতে চায় বলুন। ঐ ৯০% তো আর বিদেশী লোক না, হয় আমার না হয় আমার পরিচিত কোন ব্যক্তির পারিবারিক সদস্য। হয়তো আমাকেও কেউ একদিন বলে বসতে পারে, চোর ডাকাত। প্রতিবাদ করলে হয়তো বলবে, কেন তুমি বাংলাদেশের লোক না? অনেক দাওয়াতি পরিবেশে গিয়ে বলতে চাই আপনি কি তাদের একজন? কিন্তু সে যদি বলে বসে কেন আপনার পরিবারে বাবা-মা নেই? ওনার পরিবার? এনার পরিবারে কেউ কি নেই? শুধ আমাকেই দেখলেন! তাই আমি চাই বাংলাদেশের কাউকেও ভবিষ্যতে যেন চোর ডাকাত বলতে না হয়। মানুষগুলো বর্তমানে এমন হলেও ভবিষ্যৎ দিনগুলোতে তারাও যেন উবে যায় সেই ‘বিশ্বের অন্যতম দরিদ্র দেশ’ বচনের মতো।
দেখুন মাইক হেলিকপ্টার ইউটিউব এসব বাদ দিলেও দীর্ঘদিনের ধর্মীয় অনুশাসন চালু আছে দেশে। তার সাথে কমবেশি হলেও আইনি শাসন টিকে আছে। এছাড়া সামাজিক মানবিক নীতিশাস্ত্র এখনো পুরোপুরিভাবে বাতিল হয়ে যায় নি এবং দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাতেও তেমন কোন মহা কেলেঙ্কারি হয়ে যায়নি। এতরকম শাসন আছে বলেই এখনো দেশের ১০% ভাগ লোক ভাল অবস্থান থেকে নড়ছে না। তবে ডিগবাজি দিয়ে যখনতখন এই সংখ্যা ১০ ভাগ মন্দ লোক আর ৯০ ভাগ ভাল লোক হয়ে যেতে পারে। মানে সেই পূর্বের অবস্থায়। সোনালী অতীত দিনের মতো। এই মুহূর্তে আমার প্রার্থনা, যদি বাংলাদেশের অর্থনীতি পূর্বের অবস্থায় চলে যায়, তবে সমাজ ব্যবস্থা, নৈতিকতাও যেন ফিরে আসে সেই পূর্বের অবস্থানে।
সকলেই জানেন যে বাংলাদেশের অর্থনীতি একসময় শ্রীলঙ্কার চেয়ে খারাপ অবস্থানে ছিল। বর্তমানে ভালো অবস্থানে আছে। আবার হয়তো শ্রীলঙ্কার চেয়ে খারাপ হয়ে যেতে পারে। অর্থনৈতিক ভাবে একটা জনগোষ্ঠী পেছনে পড়ে থাকার অনেক ব্যাখ্যা বই পুস্তকে পাওয়া যায়। আমাদের দেশ এক সময় রাজনৈতিক শ্লোগান ছিল ‘অন্ন চাই বস্ত্র চাই, বাঁচার মতো বাঁচতে চাই’। সেই স্লোগানের সত্তর ভাগ সফলতা এসেছে। এখন আমাদের অন্ন বস্ত্র হয়েছে। সত্যিকারের বাঁচার মতো করেও হয়তো একদিন বাঁচতে পাড়বো। কে গড়বে সেই বাংলাদেশ জানি না। ১০ ভাগ জনগোষ্ঠী না ৯০ ভাগ, তা সময়ই বলে দেবে। বাংলাদেশ শ্রীলংকার মতো হয়ে যাবে এই আশঙ্কা কিছুদিনের জন্য হলেও হয়তো সত্য হয়ে যেতে পারে। আবার সত্য নাও হতে পারে। আমি মনে প্রাণে চাই বাংলাদেশ হোক মেইড ইন বাংলাদেশ, অন্য কোন দেশের মতো না।
স্কারবোরো, অন্টারিও, কানাডা