
মোবাইল ফোনই কাল হয় স্কুলছাত্র নওফেল শেখের (১৪)। জন্মদিনে তাকে নিয়ে আনন্দ করার প্রলোভন দিয়ে ডেকে নেয় তার এক বন্ধু। এরপর গলায় মাফলার পেঁচিয়ে ফাঁস লাগিয়ে নওফেলকে হত্যা করে তার মোবাইল ফোনটি নিয়ে নেয় সে। পরে সেই ফোন বিক্রির টাকায় বান্ধবীকে নিয়ে হোটেলে যায় অভিযুক্ত কিশোর।
বগুড়ার শাজাহানপুর উপজেলার দাড়িগাছা গ্রামের ইসরাইল শেখের ছেলে নওফেলকে গত ১৮ জুন খুন করা হয়। নওফেল দাড়িগাছা ইসলামী উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ছিল। সোমবার গাজীপুরের টঙ্গী পশ্চিম থানা এলাকা থেকে অভিযুক্ত কিশোরকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে বগুড়ার পুলিশ সুপার সুদীপ চক্রবর্তী তার কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান।
পুলিশ সুপার বলেন, অভিযুক্ত কিশোর লেখাপড়া না করলেও নওফেল শেখ ছিল তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তারা দাড়িগাছা গ্রামের বিভিন্ন জঙ্গলে গিয়ে মাঝেমধ্যেই ধূমপান করত। দুই মাস আগে জমি বিক্রি করে ১৮ হাজার টাকায় একমাত্র ছেলে নওফেলকে স্মার্টফোন কিনে দেন তার বাবা। এর পর থেকেই বন্ধু নওফেলের মোবাইল ফোনটি হাতিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করতে থাকে তার বন্ধু। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত ১৮ জুন নওফেলের জন্মদিন থাকায় বেলা ১১টার দিকে তাকে ধূমপান করার কথা বলে কৌশলে জঙ্গলে নিয়ে যায়। ওই কিশোর আগে থেকেই নওফেলকে হত্যার উদ্দেশ্যে একটি মাফলার সঙ্গে রাখে। সেই মাফলার দিয়ে নওফেলকে হত্যা করা হয়। মৃত্যু নিশ্চিত করতে নওফেলের মাথায় বাঁশ দিয়ে আঘাত করে সে।
এরপর মরদেহ টেনে গভীর জঙ্গলে ফেলে দিয়ে মোবাইল ফোনটি নিয়ে সেখান থেকে চলে যায় খুনি। সেই মোবাইল ফোনটি বগুড়া শহরে নিয়ে যায়। একই সঙ্গে বগুড়ার শেরপুর থেকে তার এক বান্ধবীকে শহরে ডেকে নেয় অভিযুক্ত কিশোর। দুজন একত্র হয়ে নিজেদের ভাই-বোন পরিচয় দিয়ে তারা শহরের সাতমাথায় একটি দোকানে পাঁচ হাজার টাকায় মোবাইল ফোনটি বিক্রি করে। সেখান থেকে তারা দুজন বগুড়া শহরের গালাপট্টির একটি আবাসিক হোটেলে গিয়ে একটি রুম ভাড়া করে সেখানে সময় কাটায়। পরে বান্ধবীকে দেড় হাজার টাকা দেয় হত্যাকারী।
হত্যাকাণ্ডের দুই দিন পর (২০ জুন) বিকেলে জঙ্গল থেকে দুর্গন্ধ বের হলে স্থানীয়রা গিয়ে নওফেলের মরদেহ শনাক্ত করে।
পুলিশ সুপার বলেন, মরদেহ উদ্ধারের পর গোয়েন্দা পুলিশের সমন্বয়ে একটি টিম গঠন করা হয়। পুলিশের টিম প্রথমে সাতমাথা থেকে নওফেলের মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করে। এরপর ফোনের সূত্র ধরে আটক করা হয় হত্যাকারীর বান্ধবীকে। পুলিশের একটি দল খুনির অবস্থান নিশ্চিত হয়ে টঙ্গী থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী জঙ্গল থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত মাফলারটি উদ্ধার করে পুলিশ।