
আমাদের ছোট কন্যাটিকে আর আগের মত চঞ্চল মনে হয়না। আগের মত সে আর তেমন একটা লাফালাফিও করেনা। আগে ঘরের মধ্যে ও মাঠে এক্রোবেটিক পারফরম্যান্স করত, এখন আর করেনা। খুব দ্রুত দৌড়াতেও পারত। শীতের সময় আইস স্কেটিং করত। এখন তাতেও তার আগ্রহ নেই।
তখন কত হাসিখুশি ও আনন্দে থাকত। দেখে মনটা ভরে যেত। তখন অবশ্য তার স্কুলের একাডেমিক পারফরম্যান্স মাঝারী ধরনের ছিল। আমি আর রুপা তাকে যে পড়াশোনার ব্যাপারে কিছুটা চাপ দেইনি তা অশ্বীকার করবোনা। জানিনা সেই চাপের কারনেই, নাকি বয়সের কারনে সে পবির্তন হয়ে গেল? আসলেই জানিনা। অবশ্য সে এখন টিন এজার। এ মাসেই সপ্তম শ্রেনী শেষ করতে যাচ্ছে।
খুবই খুশির কথা হল, এখন তার একাডেমিক পারফরম্যান্স খুব ভালো। সে ইংরেজী, অংক, বিজ্ঞান ও ফ্রেন্সে প্রায় এবছরের ফাইনাল সেমিস্টারে প্রায় শতভাগ নম্বর পেয়েছে। এচিভমেন্ট খুব ইমপ্রেসিভ। কারন এ বিষয়গুলোর প্রত্যেকটিতে ৯৮%। আর আর্টস্ এ –নাচে পেয়েছে ৭৮%। এতে বোঝা যায় সে তার ভালো লাগাগেুলোকে বিসর্জন দিয়ে একাডেমিক এচিভমেনটটর দিকে ঝুঁকেছে। সে ধীরে ধীরে একাডেমিক্যালি গ্রেট এচিভার হচ্ছে ঠিকই, কিন্তুু তার ভালো লাগা গুলোকে হয়ত আর গুরুত্ব দিচ্ছে না। তার রিপোর্ট কার্ডের দিকে তাকালে এক ধরনের ভালো অনুভূতি হয়, আবার তার মুখের দিকে তাকালে আরেক ধরনের অনুভূতি হয়। আমি জানিনা সে আমাদের দেয়া চাপকে সিরিয়াসলি নিয়েছে কীনা? যদি তা নিয়ে থাকে তাহলে আমরা হয়ত তার খারাপই করছি।
চার্লস বুকোয়াস্কি বলতেন, যারা বেশী মেধাবী বা বুদ্ধিমান তাঁদের মধ্যে বিষন্নতা বা দু:খবোধ বেশী থাকে। তিনি আরো বলতেন যে, তুমি যত বেশী বুঝতে থাকবে তত বেশী তোমার মনে হতে থাকবে যে তুমি কিছুই বোঝ নাই। এর কারনে অনেক সময় মনে বিষন্নতা বাসা বাঁধে। আসলে যারা কোন কিছুর গভীরে যেতে চায়না বা যায়না তারা বেশী হাসিখুশি ও সুখে থাকে মনে হয়।
কন্যাকে বললাম, তুমি আগের মত হাসিখুশি থাকতে পারোন? আবার খেলাধুলা কর, দৌড়ঝাপ করো।
কন্যা উত্তরে বলল, আই ডোন্ট আন্ডারস্টান্ড হয়্যাট ইউ গাইজ রিয়েলি ওয়ান্ট ফ্রম মি।
আমি বললাম, আমি বললাম, আমি চাই তুমি সুস্থভাবে বেড়ে ওঠো। বড় হও।
আসলে তার কথাই ঠিক। প্যারেন্টস হিসেবে আমাদের চাওয়ার কোন শেষ নেই। আমরা আসলে আমাদের সন্তানদের মধ্যে সবই দেখতে চাই।
টরন্টো, কানাডা