7.8 C
Toronto
রবিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৫

কত বৈচিত্র্যময় আমাদের দেশ

কত বৈচিত্র্যময় আমাদের দেশ - the Bengali Times
ছবিরিসাদ রিফাত

কিছু খাবার আছে, খেলে মনে হয় কেউ যেন পেটের মধ্যে বসে তাল পাখা দিয়ে পাকস্থলীতে বাতাস করছে, এতো আরাম। যেমন বাটা মাছের দোপেঁয়াজা আর মাষকলাই ডাল। সবচাইতে সুন্দর, স্বাদের মাছ। যদিও কাঁটায় ভরা। ভেজে নিয়ে দোপেঁয়াজা করলে..

আরেক মজার মাছ হলো বাচা। এটা পাঙ্গাশ গোত্রের মাছ। খুব কম মশলায় রান্না, ধনিয়া পাতার নিচ থেকে যখন চকচক বডি বের করে ঝিলিক দেয়! সাদা ভাত, সাথে থাকবে শুধু কড়কড়ে উচ্ছে ভাজি.. রুচির ডিব্বা!
ছোট মাছ তাড়াতাড়ি সেদ্ধ হয়।

- Advertisement -

পাঁচমিশালী মাছ রান্নার মতো সহজ আর কিছু নাই। শুধু সর্ষে তেল আর পিঁয়াজ কাঁচামরিচ লবন দিয়ে মাখিয়ে সামান্য পানি ঢেলে কড়াইতে চড়িয়ে দিলেই পনেরো মিনিটে হয়ে যায়। যে ঘ্রাণ ছুটে! থাক এটা আগে বেশ কয়েকবার অলরেডি বলেছি! তবুও ভালবাসার কথা বারবার বলতে ভাল লাগে। আমি তো রান্না ফিনিশ হবার আগেই ট্যাংরার টুটি চেপে চ্যাংদোলা করে মুখে ফেলে কাটাশুদ্ধ চিবিয়ে ফেলি। ট্যাংরার সাথে সর্ষে তেলের একটা যোগসূত্র আছে। এসব খাঁটি বাংলা খাবার খেলেও মনে হবে যেন কেউ একজন পাকস্থলীতে ঠান্ডা তেল মালিশ করে দিচ্ছে।
বাংলাদেশের জলাধারগুলোতে এসব খুঁটিনাটি মাছ খেটে খাওয়া মানুষগুলোর মতোই সংগ্রাম করে বেঁচে থাকে। হার মানবার নয়! প্রাকৃতিকভাবে দ্রুত বংশবৃদ্ধি করে। শুধু একটু পানি, বৃষ্টি পেলেই হলো; রাজ্যের খোলসে, পুটি, টাটকিনি, ট্যাংরা, শিং-মাগুরে ভরে উঠবে। ছোটকালে ওগুলো ধরে হরলিক্সের কৌটায় পুকুরের পানি দিয়ে, খুদিপানা ভাসিয়ে, তলায় নুড়িপাথর দিয়ে মিনি একুয়ারিয়াম বানিয়ে ফেলতাম। মাছগুলো বাঁচতোও কিছুদিন। তারপর একদিন পেট উপরের দিকে তুলে ভাসতো..

আর পাটশাক ভাজা, সাথে আলু দিয়ে দেশি মুরগির ঝোল? মুরগিটা হবে ছোটখাটো, মাংস হবে খুব কম। তবুও সবাই একটু করে হিসাব করে, হাসিমুখ মসুরের ডাল দিয়ে তৃপ্তি সহকারে খাবে। আচ্ছা, কাঁচা টমেটো দিয়ে ধবধবে সাদা কেঁচকি মাছ, আর পুঁইশাকের চচ্চড়ি খেলে পেটের মধ্যে কেমন লাগে? এই শাক সবকিছুর সাথে যায়।

কত বৈচিত্র্যময় আমাদের দেশ। খাবার দাবারে পৃথিবীতে প্রথম সারিতে। এতো ভ্যারাইটি দুনিয়াতে বিরল। প্রকৃতি অকৃপণ হাতে উপঢৌকন ঢেলে দিয়েছেন বাংলাদেশের নদ-নদী, জলাশয়গুলোয়।
তবে পেট যে ঠান্ডা হতেই হবে; তারও কোনো মানে নাই। কিছু খাবার খেতে হয় একদম চল্লিশ-বিয়াল্লিশ ডিগ্রি গরমে ঘামতে ঘামতে। যেমন খোসাশুদ্ধ কচি মিষ্টিকুমড়া দিয়ে সেদ্ধ হাঁসের ডিম রান্না। প্রচুর পেঁয়াজ আর বাটা মশলা দিয়ে এই ডিমের দোপেঁয়াজা পাতলা মসুরের ডাল দিয়ে খাওয়া শুরু করলে আর থামাথামি নাই। তরকারীও হতে হবে আগুন গরম; গরমে-গরমে কাটাকাটি। ডিমটা একটু করে ভাঙবেন, আর ফ্লেভার ছুটবে বিদ্যুৎ গতিতে! হলদে কুসুমের গুঁড়ো ডালের সাথে মিশে হবে একাকার। সেই ঝোলে চুমুক দিলে যে শান্তি আসে ভাই রে ভাই.. বর্ণনাতীত। পেটে তখন এতই আরাম আসে, মনে হয় যেন মাঘ মাসের শীতের মধ্যে পাকস্থলী মশাই লেপ মুড়ি দিয়ে হুমায়ুন আহমেদের বই পড়ছে। ভাত ঘুমের জন্য একটা শক্ত চৌকি বা খাট তখন খুব দরকার..
তারপর!

সন্ধ্যাবেলা যখন আম গাছের লম্বা পাতার ফাঁকে গোল, চকচকে, খোলসে মাছের মতো চাঁদ উঁকি দিবে! আপনি বাইরে না বের হয়ে পারবেনই না। এ আহ্বান উপেক্ষা করবার মতো নয়। এক রহস্যজনক অস্থিরতায় পেয়ে বসবে। মেঠো পথ ধরে হাঁটবার সময় চাঁদটার সাথে কত সুখ দুঃখের গল্প করবেন। চাঁদ ঠিকই বিশ্বস্ত বন্ধুর মতো ছায়াসঙ্গী হবে। অন্ধকারে ভেসে আসবে বুনো লতানো গাছের ফুলের মিষ্টি সুবাস। জোনাকির আনাগোনা। তারপর বসে পড়বেন একটা ক্ষেতের আইলে। স্থানীয় দিন মজুর হাট থেকে ছোট্ট পাঙ্গাশ মাছ দড়ি দিয়ে ঝুলিয়ে ফিরবার সময় আপনাকে দেখে জিজ্ঞেস করে উঠবে, “কিডা গো!”
যদিও সে উত্তরের আশা করবে না। প্রশ্নের মধ্যেও কত আন্তরিকতা, ভালবাসা যে লুকিয়ে আছে।
কি এক মায়ার জগৎ!

অটোয়া, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles