5.2 C
Toronto
রবিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৫

ক্যানসার হটিয়ে ৩২ বছর বয়সেই ১০ বিমানের মালিক কণিকা!

ক্যানসার হটিয়ে ৩২ বছর বয়সেই ১০ বিমানের মালিক কণিকা! - the Bengali Times
কণিকা তেকরিওয়াল

মানুষের অদম্য ইচ্ছা তাকে অনেক দূর নিয়ে যেতে পারে। কণিকা তেকরিওয়াল হয়তো সেটারই প্রমাণ। ক্যানসারকে হটিয়ে মাত্র ৩২ বছর বয়সেই ১০টি প্রাইভেট বিমানের মালিক এখন তিনি। বলছি, ভারতের প্রথম প্রাইভেট জেট ভাড়া দেওয়ার সংস্থা ‘জেট সেট গো’-এর মালিক ভোপালের তরুণী কণিকা তেকরিওয়ালের কথা। স্বপ্নের মতো শোনালেও অসম্ভবকেই সম্ভব করেছেন তিনি।

ভোপালের মারওয়ারি পরিবারে বড় হয়ে ওঠা। ব্যবসা তার রক্তে। ছোট থেকেই ইচ্ছা ছিল নিজে কিছু করার। ভালো লাগত উড়োজাহাজ। ইংল্যান্ডের কভেন্ট্রি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ফিন্যান্সে এমবিএ করে কখনো ‘বুলস এভিয়েশন’, কখনো বা ‘এরোস্পেস রিসোর্স’ উড়োজাহাজকে নিজের জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন করেননি। কিন্তু মাথায় ঘুরছে নিজে কিছু শুরু করার পরিকল্পনা। ঠিক তখনই ধরা পড়ে ক্যানসার। ২০১২ সালে কণিকার বয়স তখন মাত্র ২২। তবে অসুস্থতা লুকিয়ে না রেখে, তা নিয়ে মন খুলে কথা বলতেন। এতে মনোবল অনেকটাই বেড়েছিল কণিকার। ৯ মাস ধরে কেমোথেরাপি চলেছিল। যন্ত্রণায় সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারতেন না। কিন্তু হাল ছাড়েননি। এক বছর পর ২০১৩ সালে ক্যানসারকে জয় করে নতুন উদ্যমে মাঠে নামেন কণিকা। ‘জেট সেট গো’-এর সেই পথ চলা শুরু। ভারতের প্রথম ‘আকাশ ট্যাক্সি’ বলা যেতে পারে একে। প্রাইভেট জেট। ট্যাক্সি, উবারের মতোই ভাড়া করা যায় এ জেটবিমান। মুম্বাই, বেঙ্গালুরু, দিল্লি ছাড়াও দেশের সীমানার বাইরে নিউইয়র্ক, দুবাইয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রেও এর পরিষেবা পাওয়া যাবে।

- Advertisement -

২০১৬ সালে ফোর্বসের অনূর্ধ্ব ৩০-এর তালিকায় নাম তুলেছিলেন কণিকা। বিবিসির উদ্যমী নারীদের তালিকার সাত নম্বরে ছিলেন তিনি। ‘ন্যাশনাল এন্টারপ্রেনারশিপ অ্যাওয়ার্ড’ও পেয়েছেন তিনি। তার শুরুটা মসৃণ ছিল না। কণিকা তেকরিওয়াল জীবনে প্রথম কোনো পিচ করতে এসেছেন। বড় কনফারেন্স রুমে সবাই বসে আছে। কণিকা ঢোকার সঙ্গে সঙ্গে একজন কর্মকর্তা তার দিকে ফিরে বললেন, ‘চা, কফি কে কী খাবে একটু জেনে নিন’!!! তিনি ধরেই নিয়েছেন তেকরিওয়াল ওই অফিসেরই কেউ। বিব্রত কণিকা নার্ভাস হয়ে সব তালগোল পাকায় ফেললেন!

তার পর তাকে অনেকবার পিচ করতে হয়েছে। কিন্তু এই অভিজ্ঞতার ১০ বছর পর ভারতের সেলফ মেইড ধনী তালিকার বয়োকনিষ্ঠ সংযোজন হয়েছেন কণিকা তেকরিওয়াল। কণিকা ভারতের ‘আকাশের উবার’ নামে খ্যাত ‘জেটসেটগো (ঔবঃঝবঃএড়)’-এর মূল উদ্যোক্তা ও সিইও। যখন ট্রেড লাইসেন্স করতে যান তখন তাকে সেটা দিতে অস্বীকৃতি জানানো হয়। কারণ ‘এভিয়েশন’ ব্যবসা করতে হলে তো নিজের প্লেন লাগবে ‘আমি তাদের যতই বোঝাই যে আমি শুধু ট্রেডিং করব, প্লেন ওড়াব না ততই তারা গো ধরে রাখল’ এক গণমাধ্যমকে কণিকা জানিয়েছে।

কণিকা কলেজে থাকতেই এভিয়েশন সেক্টরে কাজ করতে শুরু করেন। তার কাজ ছিল যারা প্রাইভেট জেটের মালিক তাদের খবরাখবর নেওয়া। কেউ কিনতে চাইলে তাকে তথ্য দিয়ে সাহায্য করা। কণিকা টের পেলেন শুধু মেইনটেন্যান্স আর ফ্লাইটের খরচের কারণে লোকে প্রাইভেট জেট কেনে না। অথচ অনেকেই চাইলে ব্যক্তিগত ফ্লাইটে মালদ্বীপ যেতে পারে কিংবা ভারতের মধ্যেই এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় যেতে পারে।

কণিকা ভাবলেন তিনি তা হলে এই মিলনটা ঘটিয়ে দেবেন-যারা ফ্লাইট চার্টার্ড করতে চায় তাদের সঙ্গে চার্টার্ড ফ্লাইট অপারেটরদের সংযোগ ঘটিয়ে দেবেন। ২২ বছর বয়সে এভিয়েশন সেক্টরের চাকরি ছেড়ে কণিকা এভিয়েশন স্টার্টআপ শুরু করেন। তখন সেটা রেন্টাল সার্ভিসের মতো, কাজ করত ফোনে ফোনে। কিন্তু কোনো ক্লায়েন্ট জোগাড় করা গেল না।

শুরুর কিছুদিন পরই কণিকার শরীরে কর্কট রোগ ধরা পড়ে, সেকেন্ড স্টেজ। চিকিৎসক বললেন, খুব বেশিদিন বাঁচবেন না। ‘৪০তম জন্মদিনে এসে আপনার সঙ্গে দেখা করব’- চিকিৎসককে সাফ জানিয়ে দেন তিনি। এক বছর পর সুস্থ হয়ে আবার শুরু করেন তার প্রচেষ্টা। শরীর ঠিক রাখার জন্য ততদিনে নিজেকে ম্যারাথন দৌড়বিদ হিসেবেও তৈরি করে ফেলেছেন। মাত্র ৫৬০০ রুপি পকেটে নিয়ে শুরু হয় জেটসেটগো। প্রথম ৬ মাস একজন ক্লায়েন্টও পেলেন না। কিন্তু দমে গেলেন না। ধারদেনা করলেন। এ সময় কো-ফাউন্ডার হিসেবে যুক্ত হয় চার্টার্ড অ্যাকাউন্টেন্ট সুধীর পার্লা। এর মধ্যে নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে লোকজনকে প্রাইভেট প্লেন কেনার পরামর্শ দিতে শুরু করলেন। খুঁজে বের করলেন কোন কোন প্রাইভেট জেটের মালিকরা তাদের বন্ধুবান্ধবকে প্রাইভেট জেটের সুযোগ দেন! তারপরই তার দিন ঘুরতে শুরু করল।

১০ বছর পর কণিকা তেকরিওয়াল এখন ভারতের কনিষ্ঠতম সেল্ফ মেইড মহিলা ধনীদের তালিকায় ঢুকে পড়েছেন। কটক হুরুন তালিকা অনুসারে ১০টি জেটবিমানসহ তার সম্পদের পরিমাণ মাত্র ৪২০ কোটি রুপি।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles