
একজন শিল্পীর স্বতন্ত্র গায়কী আছে, থাকে, থাকবে।
তাঁর করা গান ভাল লাগে। বিশেষকরে রবি ঠাকুরের গান। যদিও তিনি সব ধরনের গান করেন। পঞ্চকবি, আউল বাউল লালন শাহ, কীর্তন, ভজন, আধুনিক সব। বলছিলাম জয়তী চক্রবর্তীর কথা। এসময়ের অত্যন্ত জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী জয়তী চক্রবর্তী।
বহে নিরন্তর অনন্ত আনন্দধারা শীর্ষক টরন্টো সংস্কৃতি সংসদ এর বার্ষিক উৎসব ২০২২ – এ অতিথি শিল্পী হিসেবে এসেছিলেন জয়তী চক্রবর্তী। হয়েছিলাম তাঁর মুখোমুখি। কয়েকটি প্রশ্ন করেছিলাম তার উত্তরে জানিয়েছেন খোলামেলাভাবে বেশ আন্তরিকভাবে।
সঙ্গীতের শুরুটা কিভাবে জানতে চাইলে বলেন
মা চিত্রা চক্রবর্তী আর বাবা সন্দীপ চক্রবর্তী সংগীত অনুরাগী ছিলেন। বাবা মাউথ অর্গান বাজাতেন। বাবা মার অনুপ্রেরণায় শিশুকালেই গানের তালিম নেয়া শুরু করেন। মা নিজেও গান করতেন। বিয়ের পর কারণে অকারণে তার মায়ের গান করা না হয়ে উঠার জন্যে হয়তো স্বপ্ন দেখতেন মেয়ে গান করবে। জয়তী বাবাকে হারিয়েছেন ১৭ বছর বয়সে। এক ভাই জয়দেব চক্রবর্তী যদিও তিনি গান বাজনার জগতের কেউ নন। তবে উৎসাহ জোগান সবসময় তাঁকে।
সুপ্রিয়া ঘোষ এর কাছে শুরুতে সঙ্গীতের তালিম নিয়েছেন। রবীন্দ্র সঙ্গীতের তালিম নিয়েছেন শুভঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় এবং সুভাষ চৌধুরীর কাছে। বর্তমানে তালিম নিচ্ছেন অবলা বসু সেন এর কাছে। এখনো শিখছেন বলে জানালেন। তিনি বলেন রবীন্দ্রসঙ্গীত এর চর্চা, একটি চলমান প্রক্রিয়া। প্রতিদিন চর্চা করলে নিজেকে আপডেট করা যায় এবং উত্তরণ করাও সম্ভব।
রবীন্দ্রনাথের গানের জয়তী আর অন্যান্য গানের জয়তী। কাছের বন্ধুরা, ভক্তরা কি বলে আর জয়তী নিজে কি ভাবেন?
হ্যাঁ, সবসময় এই কথা শুনতে হয়েছে। হয়তো রবীন্দ্রনাথের গান বেশি ভালবাসি বলে, বেশি করি বলে এটা হয়েছে। তবে সব গান করার ইচ্ছে, খিদে আমার আছে। মানে সব ধরনের গান আমি করতে চাই। গান তো করি মনের আনন্দে। যারা মূলত রবীন্দ্রনাথের গান করে, তারা আমাকে বলে অন্যান্য গান করতে। আবার যারা আধুনিক গান করেন তারা বলেন আমাকে রবীন্দ্রনাথের গানই বেশি গাইতে বলেন। এই দ্বন্দ্বে তো আছি।
টিএসএস এর আমন্ত্রণ, করোনা মহামারির বছর দুই পরে প্রবাসে অনুষ্ঠান কেমন লাগছে। ভয় কাজ করছে কি?
মুখোমুখি বসিবার, অনুষ্ঠান উপভোগ করার আনন্দ তো আর ইন্দ্রজালে হয় না। হয় না ভার্চুয়ালি। তাই আবার মঞ্চে ফিরে আসা। তাছাড়া গান তো আমাদের পেশা। আমার সাথে আমার টিমের সবার আয় রোজগারের বিষয়টিও জড়িত। ভয় পেয়ে বসে থাকলে হবে না। করোনা তো আমরা মোকাবেলা করেছি।
যেহেতু সব ধরনের গান ভালো করছেন সে ক্ষেত্রে চলচ্চিত্রে কেমন ডাক পড়ছে?
বলতে পারি মন্দ নয়। ২২টির মতো চলচ্চিত্রের জন্যে গান করেছি। সবই প্রায় রবীন্দ্র সঙ্গীত। নাটকের জন্যেও গেয়েছি। ৩টি ওয়েব সিরিজে গান করেছি।
রবীন্দ্রসঙ্গীত এর ফিউশন নিয়ে আপনার দৃষ্টিভঙ্গি?
ইতিবাচক। আমি ফিউশনের পক্ষে। রবীন্দ্রনাথ চির নূতন, চির নবীন। আমি বলবো ফিউশন অবশ্যই হতে পারে তবে লক্ষ্য রাখতে হবে তা যেন শ্রুতি কটু না হয়। আমি আসলে নতুনত্বের দিকে। আমাদের অগ্রজরা যা দেবার দিয়ে গেছেন। রবীন্দ্রনাথে বিষয় ভাবনার ব্যাপ্তি অনেক বিশাল। সেটা নিয়ে কাজ করার তো অনেক কিছু আছে।
যতদূর জানি, দেশে বিদেশে সঙ্গীত শেখাচ্ছেন, প্রবাসের শিক্ষার্থীদের মেধা, আগ্রহ, মান কেমন? কেউ কেউ খুব ভাল করছে?
অনেকেই ভাল করছে। সেই অর্থে নাম নিতে চাই না। কিন্তু আমেরিকাতে বেশ কয়েকজন আছে যারা ভালো করছে।
বাংলা গানের এখন কী অবস্থা বলে আপনি মনে করেন।
যুগের নিয়ম ধাবমান। সবসময়ে ভালো মন্দ দুটোই থাকে। আগেও ভালো হয়েছে এখনো হচ্ছে।
বার মাসে তের পার্বণ ভিত্তিক গান করছেন – কেমন হচ্ছে?
ভালো হচ্ছে। স্টার মঞ্চের জন্যে ৩টি গান আমি করেছি। পার্বণ নিয়ে গানগুলো বেশ আলোচিত এবং সমাদৃত।
এ সময়ের গীতিকার, সুরকারদের সম্পর্কে কিছু বলুন?
এখনকার গীতিকার, সুরকার অনেকেই ভাল করছেন। ৫০/ ৬০ এর দশকের সুরকার, গীতিকারেরা যত দ্রুত প্রচার পেতো এখন কিন্তু এত এত যোগাযোগ মধ্যম থাকলেও অনেকেই তেমনটা প্রচার পায় না। কাজ মন্দ হচ্ছে না।
বাংলা গানের প্রসার, প্রচার বিষয়ে কিছু পরামর্শ আছে কি?
যুগের চাহিদা অনুযায়ী বাংলা গানের প্রচার করলে অবশ্যই সারা বিশ্বের বাঙালী সমাদরে গ্রহণ করবে।
চ্যানেল এর সঙ্গীত রিয়েলিটি শো নিয়ে আপনার মন্তব্য?
ভারতবর্ষের আনাচে-কানাচে গ্রামে গঞ্জে অনেক প্রতিভা আছে। টেলিভিশনের অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা অনেক প্রতিভার খবর এখন আমরা জানতে পারছি। রিয়েলিটি শোতে এরা না সুযোগ পেলে হয়তো তাদের প্রতিভা বিকশিত হতো না। তবে চর্চার কোন বিকল্প নেই। সহসা খ্যাতি অনেক সময় কোন কাজে আসে না।
আপনার সম্পর্কে কিছু বলুন?
আমি একজন সাধারণ মানুষ। অত্যন্ত সাধারণ পরিবারে আমার জন্ম, বেড়ে উঠা। রবীন্দ্রনাথকে কেন্দ্র করে আমার বেড়ে ওঠা।
৫ বছর বয়স থেকেই গান শেখা। রবীন্দ্রনাথের গান, নজরুলের গান, অতুল প্রসাদ বা ডিএল রায়ের গান গাওয়ার কোন বিভাজন ছিল না। সঙ্গীত শেখার আনন্দেই সঙ্গীত শিখতাম, করতাম। খেয়াল চর্চাও সেইভাবে ছোটবেলা থেকে করা।
আমাদের দলের ( অন্যস্বর টরন্টো) সদস্য মৈত্রেয়ী দেবীর (ওরে অবুঝ)একটি গান আপনি করেছেন। প্রবাসীদের চর্চার মূল্যায়ন বৃদ্ধির জন্যে কোন পরামর্শ আছে কি?
মৈত্রেয়ী’দি ভালো লিখেছেন। আর সুর তো অসাধারণ কারণ সুপর্ণ কান্তি ঘোষ দাদার করা। উনি তো কিংবদন্তি। উনার সুর করা সেই বিখ্যাত গান ” কফি হাউজের সেই আড্ডা ” সেটা তো সবাই জানে। দিদি প্রবাসে থেকেও কত শিকড়ের কাছাকাছি।তাছাড়াও প্রবাসে অনেক ভাল ভাল
সাংস্কৃতিক উৎসব, সেমিনার হচ্ছে।
চিত্রঋণ: বিদ্যুৎ সরকার