14.5 C
Toronto
শনিবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৫

ফ্ল্যাটবন্দি শিশুদের বিকাশে করনীয়

ফ্ল্যাটবন্দি শিশুদের বিকাশে করনীয় - the Bengali Times

‘ভিড় করে ইমারত, আকাশটা ঢেকে দিয়ে/চুরি করে নিয়ে যায় বিকেলের সোনা রোদ/ছোটো ছোটো শিশুদের শৈশব চুরি করে/ গ্রন্থ-কীটের দল বানায় নির্বোধ।’ এভাবেই শহুরে শিশুদের সামাজিকীকরণের বিভিন্ন দিক উঠে এসেছিল নচিকেতার ‘চোর’ শিরোনামের গানে। শহরায়নে সৃষ্ট সীমাবদ্ধতায় শিশুদের যথাযথ সামাজিকীকরণ বাধাগ্রস্ত হলেও ইদানিং দেখা যাচ্ছে ভিন্নতা। শিশুর সামাজিকীকরণ নিয়ে এখন সরব অনেকে।

- Advertisement -

বিশেষজ্ঞরা দীর্ঘদিন বলে আসছেন, ঢাকায় প্রয়োজনের তুলনায় খেলার মাঠ, পার্ক নেই। এতে শিশুদের সামাজিকীকরণ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যার বিরূপ প্রভাব পড়ছে পরিবারগুলোতে। বাড়ছে শিশু-কিশোরদের মাঝে অপরাধ প্রবণতাও।

সাম্প্রতিক করোনাকালে সামাজিকীকরণে যে চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছিল, তেমনটি ঘটেনি বিগত প্রায় ৯০ বছরের মধ্যে। এই মহামারিতে সামাজিকীকরণ প্রক্রিয়া নিয়ে আবার অনেক পরিবার আগের চেয়ে সচেতনও হয়েছে। তবে রাজধানীবাসী তাদের সন্তানদের নিয়ে সচেতন হলেও আশানুরূপ সুফল মিলছে না।

গ্রুমিং ফ্রিক্সের সাইকোসোশ্যাল কাউন্সিলর সামিয়া আলম বলেন, বিদ্যালয়ে বা এলাকায় খেলার মাঠ না থাকলে শিশুরা সুস্থভাবে বেড়ে ওঠে না। খেলধূলা করতে না পারলে, দৌড়ঝাঁপ না করলে, বন্ধুদের সঙ্গে না মিশলে মনোদৈহিক বিকাশও বাধাগ্রস্ত হয়।

ফ্ল্যাটবন্দি শিশুদের বিকাশে করনীয় - the Bengali Times

ফ্লাটে বাস করা কয়েকটি পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নানা সীমাবদ্ধতার কারণে তাদের শিশুদের সামাজিকীকরণ মুখ থুবড়ে পড়ছে। এলাকায় খেলার মাঠ না থাকায় বাচ্চারা শরীরচর্চা বা খেলতে পারছে না। পার্ক না থাকায় মুক্ত হাওয়ায় ঘুরতে পারছে না। সমাজের অন্য শিশুদেরও সঙ্গ পাচ্ছে না ওরা। বাড়ছে একাকীত্ব ও মোবাইল-কম্পিউটার নির্ভরতা।

এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহ এহসান হাবীব বলেন, শিশু-কিশোরদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশে রিক্রিয়েশনের রোল রয়েছে। তাদের জন্য আমরা শিশুবান্ধব উপযুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে পারিনি। আরবান পরিকল্পনায় যেসব কম্পোনেন্ট থাকা দরকার, সেদিকে নজর না দিয়েই অবকাঠামো তৈরি করছি। গ্লোবাল ইনডেক্সেও বিপদজনক অবস্থার বিষয়টি উঠে এসেছে।

সমাজবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. শাহ এহসান হাবীবের মতে, এসবের ফলে শিশুর ব্যক্তিত্ব বিকাশও যথাযথভাবে হচ্ছে না। তারা আত্মকেন্দ্রিক ও অতিমাত্রায় প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়ছে। বিকল্প হিসেবে অনেক শিশু খেলার জন্য অনিরাপদ সড়ক ও বাসার ছাদ বেছে নিচ্ছে।

সামিয়া আলমের মতে, মুক্ত পরিবেশ ও প্রতিবেশের অভাবে শিশু-কিশোরদের মধ্যে মাদকাসক্তিও বাড়ছে। অনেকে যোগ দিচ্ছে কিশোর গ্যাং-এ। ডিভাইস থেকেও খারাপ কিছু নিচ্ছে অনেকে। এসবের ফলে সহনশীলের বদলে ওরা হয়ে উঠছে প্রতিহিংসা পরায়ণ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি বিভাগের চেয়ারম্যান সহকারী অধ্যাপক খন্দকার ফারজানা রহমান বলেন, ফিজিক্যাল অ্যাকটিভিটি না থাকায় কিশোর গ্যাংয়ে জড়িয়ে পড়াসহ নানা অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে শিশু-কিশোররা। এতে তাদের সৃজনশীলতাও হারিয়ে যাচ্ছে। তবে ইদানিং স্কুলের প্লে গ্রাউন্ডে বন্ধুদের একত্রিত হতে দেখা যায়। সেখানে শিশুদের সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত হওয়ার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।

এই তিন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ হলো— বিদ্যালয়ে বা পাড়ায় খেলার মাঠের ব্যবস্থা করা, অভিভাবকরা যেন অন্তত সপ্তাহে দুদিন পার্কে ঘুরতে যান এবং এলাকার খেলাধূলার ক্লাবগুলোর সঙ্গে যেন শিশুদের সম্পৃক্ত করা হয়।

সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles