17.5 C
Toronto
শনিবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৫

বেশি দামে গম আমদানি নিয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যার প্রতিউত্তর টিআইবির

বেশি দামে গম আমদানি নিয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যার প্রতিউত্তর টিআইবির - the Bengali Times

বেশি দামে গম আমদানি নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)- এর বিবৃতি খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করায় এবং এ বিষয়ে ব্যাখ্যা প্রদান সত্যিই উৎসাহব্যঞ্জক। কিন্তু মন্ত্রণালয় যৌক্তিক দামে গম কেনার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে, যেভাবে টিআইবির বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের অভিযোগ এনেছে, তা সত্যিই হতাশার। একইসাথে, ব্যাখ্যায় গণমাধ্যম ও টিআইবির বিবৃতিতে তোলা অনেক প্রশ্নের উত্তর মেলেনি। এ বিষয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ব্যাখার প্রতিউত্তরে টিআইবির যুক্তি তুলে ধরা হলো-

- Advertisement -

তৃতীয় পক্ষের সংশ্লিষ্টতা নিয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যা: গম ক্রয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয় গণখাতে ক্রয় আইন লঙ্ঘন করেনি এবং কোনো তৃতীয় পক্ষকে ক্রয় প্রক্রিয়ায় যুক্ত করেনি। যে তৃতীয় পক্ষের নাম বলা হচ্ছে, তাদের রাশিয়া সরকারের পক্ষ থেকে লোকাল এজেন্ট হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। জিটুজি কার্যক্রমে সরকার নির্ধারিত কমিটির সদস্যরা (বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের) বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে নেগোসিয়েশন প্রক্রিয়ায় অংশ নেন এবং সভায় সর্বসম্মতভাবে ক্রয়ের সিদ্ধান্ত হয়। নেগোসিয়েশনের পর খাদ্য মন্ত্রণালয় থেকে প্রস্তাবটি ক্রয় কমিটিতে যায়। ক্রয় কমিটি বিস্তারিত আলোচনার পর অনুমোদন দেয়। তারপর খাদ্য মন্ত্রণালয় কার্যাদেশ দেয়। এখানে তৃতীয় কোনো পক্ষের অংশগ্রহণের সুযোগ নেই।

আরও পড়ুন :: স্কুল ছাত্রী গণধর্ষণ, তিনজনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি

টিআইবির যুক্তি: খাদ্য মন্ত্রণালয়ের দাবি অনুযায়ী “ন্যাশনাল ইলেকট্রনিক বিডি” রাশিয়ার গম রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান প্রডিনটর্গের লোকাল এজেন্ট। যাদের গম আমদানিতে প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সেবা নিশ্চিত করার কথা, কিন্তু দাম নির্ধারণ বা এ বিষয়ক সমঝোতায় তাদের ভূমিকা থাকার কথা নয়। কিন্তু খাদ্যসচিবের বক্তব্য অনুযায়ী (১৬ সেপ্টম্বর, প্রথম আলো) আলোচিত প্রতিষ্ঠানটির দুজন প্রতিনিধি গমের দাম নিয়ে সমঝোতা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন এবং সমঝোতায় সহায়তা করেছেন। অথচ জিটুজি ক্রয়সংক্রান্ত প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পরিপত্রে বলা হয়েছে, দাম নির্ধারণবিষয়ক সরকারি কমিটির সভাপতি হবেন সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব বা অতিরিক্ত সচিব। সদস্যসচিব থাকবেন একই মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব বা অতিরিক্ত সচিব। এ ছাড়া অর্থ ও আইন মন্ত্রণালয়, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগের মনোনীত ব্যক্তি থাকবেন, এর বাইরে বেসরকারি তৃতীয় কোনো পক্ষ থাকবে না।

গমের দাম নিয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যা: বেশি দামে গম কেনা হচ্ছে তথ্যটি সঠিক নয় জানিয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয় বলছে, ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধ শুরুর পর আর্ন্তজাতিক বাজার থেকে গম সংগ্রহ অনশ্চিয়তার মধ্যে পড়ে। বাংলাদেশের গম আমদানির অন্যতম উৎস ভারত সরকারি ও বেসরকারি গম রপ্তানেিত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করায়, গম আমদানি আরও অনশ্চিতি হয়ে পড়ে। গমের নিরাপত্তা মজুত যেখানে কমপক্ষে দুই লাখ মেট্রিকটন থাকার কথা, সেটা একর্পযায়ে ১.২৫ লাখ মেট্রিকটনে নেমে আসে। বর্তমান মজুত ১.২২ লাখ মেট্রিকটন। অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনা থেকে জিটুজি প্রক্রিয়ায় গম সংগ্রহের চেষ্টা করা হয়েছে। প্রতি ক্ষেত্রে গমের দাম ৫০০ ডলারের বেশি হওয়ায়, সরকার সেখান থেকে গম ক্রয়ে আগ্রহী হয়নি।

টিআইবির যুক্তি: ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব খাদ্যপণ্যের বাজার অস্থির হয়ে উঠেছিলো এটি যেমন সত্যি, তেমনি ত্রিপক্ষীয় চুক্তির আওতায় পহেলা আগষ্ট হতে ইউক্রেন গম রপ্তানি শুরু করার পর বিশ্ববাজারে গমের দর বড় আকারে পড়তে শুরু করে, সেটিও সত্য। অথচ দর নির্ধারণ প্রক্রিয়ায় আর্ন্তজাতিক বাজারে দাম কমার ট্রেন্ড কতোটা বিবেচনায় ছিলো, তার কোনো ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি। রাশিয়ার গমের এফওবি মূল্য ৩৩০ মার্কিন ডলার ধরে এরসাথে জাহাজ ভাড়া, লোডিং-আনলোডিং, বার্থঅপারটের হ্যান্ডলিং, ইনস্যুরেন্স ও লাইটেনিংসহ সর্বমোট মূল্য ৪৩০ মার্কিন ডলার নির্ধারণ হয়, যাকে যুক্তিসংগত ও সঠিক বলে খাদ্য মন্ত্রণালয় দাবি করছে। কিন্তু প্রতিটনে ১শ ডলার ল্যান্ডিং খরচের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দেওয়া হয়নি, সেখানেই মূলত শুভংকরী ফাঁকি। একইসাথে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনার গমের দামের যে তুলনা মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যায় দেওয়া হয়েছে, তাকে কিছুটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলেই মনে হয়েছে, কেননা সারাবিশ্বে রাশিয়া ও ইউক্রেন থেকে আসা ব্ল্যাক-সি-হুইট মূলত কম দামি গম হিসেবেই খ্যাত। বর্তমান আর্ন্তজাতিক বাজার দরও যার সাক্ষী দিচ্ছে।

গমের দাম যাচাই নিয়ে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যা: খাদ্য মন্ত্রণালয় বলছে, গত ১৭ সেপ্টেম্বর রাশিয়ার গমের এফওবি মূল্য ছিলো ৩৩৪.২৫ মার্কিন ডলার। প্রতিনিয়ত গমের এফওবি মূল্য বেড়ে যাচ্ছে। জিটিুজি এর পূর্ববর্তী দুইটি আন্তর্জাতিক দরপত্রে গমের ক্রয়মূল্য ছিলো যথাক্রমে ৪৭৬.৩৮ এবং ৪৪৮.৩৩ মার্কিন ডলার।

টিআইবির যুক্তি: শিকাগো বোর্ড অব ট্রেডের তথ্য বলছে, ব্ল্যাক-সি-হুইট ৩১০ ডলারে লেনদেন হয়েছে ১৯ সেপ্টেম্বর। একইসাথে, সিএমই গ্রুপের তথ্য বলছে, এই গমের ভবিষ্যত চুক্তি, যেটি ২০২৩ সালে (জুন থেকে আগষ্ট সময়কালে) সরবরাহ করা হবে, তার দাম ২৯৬ ডলারে সম্পন্ন হয়েছে। তাই মন্ত্রণালয়ের গমের দাম প্রতিনিয়ত বাড়ছে বলে দেওয়া যুক্তি ধোপে টিকে না। একইসাথে, জিটুজিতে কোনো পণ্য ক্রয় করার পূর্বে বাজার যাচাইয়ের বিষয়টি সম্পন্ন না করে, কীভাবে দর ঠিক হলো, তার ব্যাখ্যাও দেয়নি মন্ত্রণালয়। বরং পূর্ববর্তী দুটি ক্রয়মূলের রেফারেন্স টানা হয়েছে, যা এড়িয়ে যাবার শামিল। খাদ্যপণ্যের কেনাকাটায় নিয়মিত আন্তর্জাতিক বাজার এবং সরবরাহকারী সর্ম্পকে খোঁজখবর রাখা জরুরি হলেও, খাদ্য মন্ত্রণালয় যে তা রাখেনা, তার বড় প্রমাণ বাড়তি দাম বিবেচনায় প্রডিনটর্গের সাথে দক্ষিণ এশিয়ার একটি দেশের চুক্তি বাতিলের বিষয়ে তথ্য না থাকা।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles