
অঘাট ঘাট হয়েছে অনেক আগেই। এখন সেইসব অঘাটগুলোর গুণকীর্তন, সংবর্ধনা, স্মরণসভা, পূজা করা, বন্দনা করা চলছেই। এতে অবাক হবার কিছু নেই। এর কারণ অবৈধ ক্ষমতা, অবৈধ উপার্জন, তেলবাজী ইত্যাদি।
আশির দশকে বিটিভিতে একটা নাটক প্রচারিত হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে সেই সময়ে পান্জাবির উপর চাদর পরিহিত ছাত্র নেতারা ভিপি জিএস নির্বাচন করতেন আর মাস্তান অস্ত্রবাজ কিছু গুন্ডাপান্ডা পালতেন। কিন্তু সেই নাটকে প্রচলিত দৃশ্যপটে কিছু পরিবর্তন আনা হলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের আসন্ন ছাত্র সংসদ নির্বাচনে এতদিনকার পালিত মদ্যপ অস্ত্রধারী মাস্তান গুন্ডা যিনি ছাত্র নেতার মুলত দেহরক্ষীর দায়িত্ব পালন করতেন তিনিই ভিপি পদ দাবী করে বসলেন। তার যুক্তি হলো, চাঁদাবাজি করে মাস্তানি করে টাকা এনে দেই আমি, আমার গুন্ডা দলের ভয়ে অন্য দলের সবাই গুটিয়ে থাকে, আমার কারণেই বর্তমান ছাত্র নেতারা বার বার ভিপি জিএস হয়ে থাকে তাহলে এসবের আর দরকার কি? আমি নিজেই এবার ভিপি প্রার্থী হতে চাই। রাজনীতির নামে মাস্তানতন্ত্র লালন করে যে দানব দীর্ঘদিন ধরে বোতলে পুরে দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন যে নেতা, এখন সেই দৈত্য বোতল থেকে বের হয়ে এসে নেতা নামক মালিকের ঘাড় মটকে দিতে উদ্যত হয়েছে।
সেই থেকে শুরু! সম্ভবত সেই নাট্যকার ভবিতব্য আঁচ করতে পেরেছিলেন। এখন শুধু কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় নয়, সমাজের সকল স্তরে সেই দৈত্য দানবেরা এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে যে দানবকেই এখন ফেরেশতা মনে করা হয়। এমন কি দানবেরা কোন কারণে মারা গেলেও তাদের এমনভাবে স্মরণ সভা করা হয় যেন কোন এক মহান কীর্তিমান পুরুষ মারা গেছেন। এখন যিনি পুরুস্কৃত হন, যিনি গলায় মালা পরেন, যিনি বড় বড় পদ পদবী বাগিয়ে নেন, যিনি ঝাড় ফুঁক দেন, যিনি উচ্চস্বরে বক্তৃতা দিয়ে মন্চ কাঁপান, যিনি লেখেন, যিনি মুরিদ করেন মুলত অধিকাংশই সেই দানবীয় বংশধর। আদর্শ লিপির পাতায় পাওয়া সৎ লোকেরা আজ প্রদ্বীপের নিভু নিভু সলতে।
এ এক অবাক পৃথিবীতে আমরা বাস করছি আজ। এর জন্যে কে দায়ী?
স্কারবোরো, কানাডা