
চীনের এক ১৩ বছরের কিশোরী ছেলেদের একটি গানের ব্যান্ডে যোগ দেবার চেষ্টায় “ভক্তদের প্রতারণা” করার জন্য দুঃখপ্রকাশ করেছেন। ফু জিয়াইউয়ান বলেছেন, তিনি নারী না পুরুষ- জনপ্রিয় একটি ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানের এ প্রশ্নের জবাবে তিনি মিথ্যা কথা বলেছিলেন। কারণ তার ভাষায় তিনি “অল্পবয়সী এবং অনভিজ্ঞ”।
তিনি ওয়াইজিএন ইয়ুথ ক্লাব নামে ছেলেদের ব্যান্ডে মাঠ পর্যায়ের একজন সদস্য হিসাবে যোগ দেন। তিনি ব্যান্ডের আনুষ্ঠানিক কোন সদস্য ছিলেন না। তবে তার ভক্তদের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার প্রশিক্ষণের ভিডিও দেখার সুযোগ ছিল।
ব্যান্ডের অনেক ভক্ত তার এই তথ্য প্রকাশ এবং ক্ষমা চাওয়ায় মজা পেয়েছেন এবং বলেছেন এটা “সাংঘাতিক কোন ঘটনা নয়।”
তবে একজন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী অনলাইনে প্রকাশ করে দেন যে মিজ ফু একজন মেয়ে এবং এরপরই এই প্রতারণার কথা স্বীকার করতে তিনি বাধ্য হন। মিজ ফু বলেছেন তিনি এখন বিনোদন জগত থেকে বিদায় নেবেন।
এ সপ্তাহের গোড়ার দিকে এক বিবৃতিতে মিজ ফু বলেন, “যারা আমাকে বিশ্বাস করেছেন তাদের কাছে আমি দুঃখ প্রকাশ করছি। আমি কথা দিচ্ছি, বিনোদন জগতে আর আমি আসব না। ভবিষ্যতে কোনরকম ভিডিও প্ল্যাটফর্মে আর আমাকে কখনও দেখতে পাবেন না।”
ছেলেদের ব্যান্ডগুলো কেন লোভনীয়?
ওয়াইজিএন ইয়ুথ ক্লাব ব্যান্ড তাদের দলে নিয়ে থাকে শুধু ১১ থেকে ১৩ বছর বয়সী ছেলেদের। এই তরুণ ব্যান্ডে কিশোরদের চ্যালেঞ্জিং কর্মসূচির মাধ্যমে সঙ্গীত পরিবেশন এবং নাচের কলাকৌশল শেখানো হয় এবং ভবিষ্যতে তারকা হয়ে ওঠার জন্য তাদের সবরকম ভাবে গড়ে তোলা হয়।
সংস্থাটি বলছে মহামারির কারণে শিল্পীদের অডিশন নেয়া হয়েছিল অনলাইনে, সে কারণেই এই ভুল হয়েছে।
“আমাদের কর্মচারীরা তাদের কাজের পদ্ধতি যথাযথভাবে অনুসরণ করার ক্ষেত্রে গাফিলতি করেছে…ভবিষ্যতে আমরা সংস্থার নিয়মবিধি কঠোরভাবে অনুসরণ করব,” ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠানটি তাদের এক বিবৃতিতে জানিয়েছে।
তবে বহু ভক্ত মিজ ফুর পক্ষে কথা বলেছেন। অনেকেই ঠাট্টা করে চীনা লোকগাঁথার নায়িকা মুলানের সাথে তাকে তুলনা করেছেন।
এই প্রাচীন লোকগাঁথায় আছে, মুলান ছিলেন এক তরুণী, কিন্তু নিজের পরিবার ও দেশকে রক্ষা করার জন্য তিনি পুরুষের ছদ্মবেশে লড়াই করেছিলেন। এই কাহিনি নিয়ে ডিজনি চলচ্চিত্র তৈরি হবার পর জনপ্রিয় এই চীনা লোকগাঁথা এখন বিশ্বে অনেকের কাছেই পরিচিত।
“আজকের যুগে এধরনের তারকা দলগুলোর সদস্যদের দেখে চেনার উপায় থাকে না – কে পুরুষ, কে নারী, কাজেই ওকেও যোগ দিতে দেয়া হোক্,” লেখা হয়েছে জনপ্রিয় মাইক্রোব্লগিং প্ল্যাটফর্ম ওয়েইবোতে।
চীনে বয় ব্যান্ড বা তরুণদের ব্যান্ড বিনোদন জগতে একটা বিশাল জনপ্রিয় সঙ্গীত ধারা (ছবিতে দেখা যাচ্ছে জনপ্রিয় টিএফ-বয়েস নামে একটি ব্যান্ডের শিল্পীদের – ১২ থেকে ১৩ বয়সী কিশোরদের নিয়ে সবচেয়ে কমবয়সীদের এই ব্যান্ডের যাত্রা শুরু হয়)
ভবিষ্যত তারকাদের সাফল্যের সিঁড়ি
ওয়াইজিএন ইয়ুথ ক্লাব ব্যান্ডের প্রশিক্ষণ শিবিরগুলো চীনে খুবই জনপ্রিয় এবং লোভনীয়, কারণ পরিবারগুলো মনে করে তাদের সন্তানদের ধনী ও বিখ্যাত হবার বিশাল সুযোগ হতে পারে সেখানে কঠিন প্রশিক্ষণের সুযোগ পেলে।
চীনে তারকা শিল্প এবং ভক্ত-ভিত্তিক অর্থনীতি শিরোনামে এই বিনোদন বাজারের ওপর চালানো এক সমীক্ষায় বলা হয় দেশটিতে ২০২০ সালে তারকাদের বাজারের অর্থমূল্য ছিল দশ হাজার কোটি ইউয়ান বা ১৫ বিলিয়ন ডলার।
উদাহরণ স্বরূপ, টিএফ-বয়েস নামে জনপ্রিয় একটি কিশোর ব্যান্ড, যারা প্রথম মঞ্চে আত্মপ্রকাশ করে ২০১৩ সালে, তাদের নাম এখন ছড়িয়ে পড়েছে ঘরে ঘরে। এই ব্যান্ডের যখন যাত্রা শুরু তখন এদের সদস্যদের বয়স ছিল ১২ এবং ১৩।
তবে এই ব্যান্ডগুলোর সদস্য বাছাই এবং তাদের কর্মকাণ্ড পরিচালনার জন্য যেসব ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি কাজ করে তাদের বিরুদ্ধে অনেক সময়ই সমালোচনা ওঠে যে ব্যবসার স্বার্থে তারা অল্পবয়সী ছেলেমেয়েদের ব্যবহার করে।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে চীনা কর্তৃপক্ষ বিনোদন শিল্প জগতের ওপর নজরদারি তীব্র করেছে। রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে যেটাকে ছেলেদের “মেয়েলি স্টাইল”এর পরিবেশনা বলে ব্যাখ্যা করা হয়ে থাকে সেরকম পরিবেশনা এবং অনুষ্ঠানে “অশ্লীলতা” নিষিদ্ধ করার জন্য তারা পদক্ষেপ নেবে ঘোষণা দিয়েছে। সূত্র: বিবিসি বাংলা