9.7 C
Toronto
শনিবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৫

শ্রদ্ধার খুনের রহস্য জট পাকাচ্ছে, অনেক প্রশ্নের উত্তর মিলছে না

শ্রদ্ধার খুনের রহস্য জট পাকাচ্ছে, অনেক প্রশ্নের উত্তর মিলছে না - the Bengali Times
শিক্ষার্থীরা শ্রদ্ধা ওয়ালকারকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছে যাকে তার প্রেমিক আফতাব আমিন পুনাওয়ালা খুন করে মৃতদেহ ৩৫ টুকরা করে ফেলেন এবং ১৮ দিন ধরে দিল্লির জঙ্গলে ছড়িয়ে দেন ছবি পিটিআই

শ্রদ্ধা ওয়ালকারকে সঙ্গে নিয়ে আফতাব আমিন পুনাওয়ালা ভারতের মুম্বাই থেকে দিল্লিতে এসেছিলেন ৮ মে। অর্থাৎ শ্রদ্ধাকে খুন করার ঠিক ১০ দিন আগে। আপাতদৃষ্টিতে বিষয়টি পূর্বপরিকল্পিত চক্রান্ত এবং খুন করার জন্যই দিল্লি আসা হয়েছে বলে মনে হলেও কিছু হিসাব এখনো মেলাতে পারছেন না তদন্তকারীরা।

তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, দিল্লিতে কলসেন্টারের নতুন চাকরি নিয়ে এসেছিলেন আফতাব।

- Advertisement -

শ্রদ্ধাও নতুন শহরে এসে চাকরির খোঁজ শুরু করেছিলেন। প্রশ্ন উঠেছে, পূর্বপরিকল্পনা করে খুন করাই যদি লক্ষ্য হয়, তবে দিল্লিতে নতুন চাকরি নিয়ে আসা এবং সেই চাকরিই করে যাওয়ার কী দরকার ছিল? আফতাব তো যেকোনো অজুহাতেই খুন করে দিল্লি থেকে পালিয়ে যেতে পারতেন! পাঁচ মাস ধরে অপরাধের জায়গায়ই কেন রয়ে গেলেন তিনি?

এ ছাড়া তদন্তে উঠে আসা আরো একটি তথ্য নিয়ে খটকা লাগছে পুলিশের। পুলিশ জানতে পেরেছে, দিল্লিতে আসার কিছুদিন আগে শ্রদ্ধাকে নিয়ে আফতাবের সঙ্গে তার বাবা-মায়ের ঝগড়া হয়। দুজনের সম্পর্কে আফতাবের পরিবারের সায় ছিল না। বাবা-মায়ের আপত্তির জন্যই মুম্বাইয়ের বাড়ি ছেড়ে দিল্লিতে যাওয়ার কথা ভেবেছিলেন শ্রদ্ধা-আফতাব। শুধু দিল্লিতে কোনো একজনের চাকরি পাওয়ার অপেক্ষা করছিলেন। আফতাব সেই চাকরি পেতেই দুজন দিল্লিতে চলে আসেন।

যদি বাধা এড়িয়ে নতুন জীবন শুরু করাই দিল্লিতে আসার উদ্দেশ্য হয়ে থাকে, তবে শ্রদ্ধাকে খুন করলেন কেন আফতাব? -এই প্রশ্ন জেগেছে তদন্তকারীদের মনে।

৮ মে দিল্লিতে আসার পর প্রথম রাত পাহাড়গঞ্জের একটি হোটেলে কাটিয়েছিলেন আফতাব এবং শ্রদ্ধা। পরের দিন আবার হোটেল বদলান। তৃতীয় রাত দিল্লিতে আফতাবের এক পরিচিতের বাড়িতে কাটে। দিল্লিতে শ্রদ্ধারা নতুন ফ্ল্যাট নিয়েছিলেন তারও দিন কয়েক পরে। অর্থাৎ ১৩ মের আশপাশে। এর কয়েক দিনের মধ্যেই ১৮ মে লিভ-ইন সঙ্গীকে খুন করেন আফতাব। এমনকি পুলিশকে জেরায় তিনি এমনও জানিয়েছেন, যেদিন তিনি শ্রদ্ধাকে খুন করেছিলেন, তার কয়েক দিন আগে থেকেই খুন করার ইচ্ছা হয়েছিল তার।

তদন্তকারীদের প্রশ্ন, খুন করাই যদি উদ্দেশ্য হবে, তবে ফ্ল্যাট ভাড়া নিতে গেলেন কেন আফতাব। আর সেখানেই মাসের পর মাস থেকেই বা গেলেন কেন! তদন্তকারীদের একাংশের অনুমান, শ্রদ্ধাকে খুন করার কথা আচমকাই মাথায় এসেছিল আফতাবের। যে রাগ থেকে মাঝেমধ্যেই শ্রদ্ধার ওপর অত্যাচার চালাতেন তিনি। খুনের সিদ্ধান্তও নিয়েছিলেন সেই সীমাহীন রাগ থেকেই।

এদিকে তিন দিন ধরে তল্লাশি চালিয়ে দিল্লির মেহরৌলির জঙ্গল থেকে ১৩টি হাড় উদ্ধার করেছে পুলিশ। কিন্তু সেই হাড়গুলো শ্রদ্ধারই কি না, তা নিশ্চিত হতে ডিএনএ বিশ্লেষণ জরুরি বলে জানিয়েছে পুলিশ। ইতিমধ্যেই সেই হাড়গুলো খতিয়ে দেখতে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদল গঠন করা হয়েছে। হাড়গোড় এত পুরনো হয়ে গিয়েছে যে সেগুলো থেকে ডিএনএ খুঁজে পেতে যথেষ্ট চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হচ্ছে ফরেনসিক বিশেষজ্ঞদের। তাদের দাবি, গোটা প্রক্রিয়া শেষ করতে অন্ততপক্ষে দুই সপ্তাহ সময় লেগে যাবে।

প্রসঙ্গত ১৮ মে দিল্লির মেহরৌলিতে লিভ-ইন সঙ্গী শ্রদ্ধা ওয়ালকারকে খুন করেন তারই প্রেমিক আফতাব আমিন পুনাওয়ালা। এরপর এক বিদেশি ওয়েব সিরিজ দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে তিনি শ্রদ্ধার মৃতদেহ ৩৫ টুকরা করে ফেলেন। সেই মৃতদেহ সংরক্ষণ করে রাখতে নতুন ফ্রিজও কিনে আনেন। এরপর ১৮ দিন ধরে দিল্লির ছতরপুর ছিটমহলের জঙ্গলের বিভিন্ন জায়গায় শ্রদ্ধার দেহের টুকরাগুলো ছড়িয়ে দিয়ে আসেন আফতাব। সন্দেহ এড়াতে আফতাব রোজ রাত ২টা নাগাদ একটি পলিব্যাগে করে দেহের টুকরা নিয়ে বাড়ি থেকে বের হতেন বলে পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পেরেছে।

শ্রদ্ধার বাবার অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নেমে দিল্লি পুলিশ শনিবার আফতাবকে গ্রেপ্তার করে। সেই নিয়েই তদন্ত চলছে। আদালতে আফতাবের অপরাধ প্রমাণিত হলে তা ‘বিরলের মধ্যে বিরলতম’ আখ্যা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন ভারতের আইন বিশেষজ্ঞদের একাংশ। ইতিমধ্যেই মামলার অভিযুক্ত আফতাব আমিন পুনাওয়ালার ‘নার্কো অ্যানালিসিস টেস্ট’ করানোর অনুমোদন দিয়েছেন আদালত, যা সাধারণত বড় ধরনের অপরাধে সন্দেহভাজনকে করানো হয়।

এদিকে মামলার গতি-প্রকৃতি দেখে দিল্লির আইনজীবীদের একাংশ মনে করছেন, শেষ পর্যন্ত শ্রদ্ধা খুনের তদন্তের ভার ভারতের কেন্দ্রীয় অনুসন্ধান সংস্থা সিবিআইকে দিতে পারেন আদালত।

সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles