9.7 C
Toronto
শনিবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৫

দুই হাত নেই, পা দিয়ে লিখে এইচএসসি পরীক্ষা দিল জসিম

দুই হাত নেই, পা দিয়ে লিখে এইচএসসি পরীক্ষা দিল জসিম - the Bengali Times

দিনমজুর বাবার ছেলে জসিম মাতবর। জন্মের পর থেকেই নেই তার দুটি হাত। এমন অবস্থায় দারিদ্র্যের কারণে জীবন সংগ্রামের কঠিন পথ বেছে নেয় তিনি। কৃষক বাবার সংসারে সহযোগিতা করতে ছোট্ট বেলা থেকেই দক্ষতার সঙ্গে মোবাইল সার্ভিসিংয়ের কাজ শুরু করে।

- Advertisement -

কাজের পাশাপাশি পড়ালেখাও চালিয়ে যায়। এরই ধারাবাহিকতায় অদম্য এই মেধাবী এবারও পা দিয়ে লিখে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে।

শুধু তাই নয়- জসিম খেলতে পারে ক্রিকেট ও গাইতে পারে মুরশিদী গান। তার অদম্য ইচ্ছার কাছে হার মেনেছে শারীরিক প্রতিবন্ধীতা। জসিম লেখাপড়া শেষ করে শিক্ষক হতে চায়। আলোকিত মানুষ গড়ার কারিগর হওয়ার প্রবল বাসনা তার।

প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থী জসিম মাতবর ফরিদপুরের নগরকান্দা উপজেলার কদমতলী গ্রামের উত্তরপাড়ার দরিদ্র কৃষক হানিফ মাতবর ও গৃহিণী তছিরন বেগমের ছেলে। চার ভাই এক বোনের মধ্যে জসিম সবার বড়। যে কারণে প্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও শত প্রতিকূলতার মোকাবেলা করে সফল হয়ে পরিবারের বড় হিসেবে সংসারের দায়িত্ব কাঁধে নিতে চায়।

জানা গেছে, শারীরিক প্রতিবন্ধী জীবন সংগ্রামী জসিম দুটি হাত না থাকায় পা দিয়ে লিখে নগরকান্দা উপজেলার কদমতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে পিএসসি ও তালমা নাজিমুদ্দিন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জেএসসি এবং এসএসসি পাস করে। বর্তমানে জসিম ফরিদপুর সিটি কলেজের বিএম শাখার শিক্ষার্থী। এবারও পা দিয়ে লিখে ওই কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছে।

জসিম বলেন, এবার পরীক্ষা ভালো হয়েছে। পরীক্ষার ফলাফল ভালো হবে বলে আমি আশাবাদী। আমি লেখাপড়া শেষ করে শিক্ষক হতে চাই। শিক্ষক হয়ে দরিদ্র মা-বাবার সংসারে হাল ধরতে চাই। তিনি বলেন, এখনো আমি বেকার নই। নগরকান্দা বাজারে মোবাইল সার্ভিসিংয়ের দোকানে কাজ করি। সেখান থেকে যা আয় হয় তা দিয়ে লেখাপড়ার খরচ চালাই। সংসারেও কিছু খরচ দেই।

জসিমের প্রতিবেশীরা জানান, মোবাইলের সার্ভিসিং কাজ করে এলাকায় ব্যাপক সুনাম অর্জন করেছে দুই হাতবিহীন জসিম। তাছাড়া গত বছর তাকে স্থানীয় বিভিন্ন হাট বাজারে আনারস ও বাঙ্গি বিক্রি করতে দেখা যায়। জসিম কখনো বসে থাকে না। একটা না একটা কাজে ব্যস্ত থাকে। তারা বলেন, মানুষের মতো মানুষ হওয়ার দুর্বার বাসনায় শত বাধা উপেক্ষা করে অসম্ভবকে সম্ভব করার দৃঢ প্রত্যয় প্রতিকূলতার সঙ্গে সংগ্রাম করে শুধু ইচ্ছাশক্তি দিয়েই এই পর্যন্ত এগিয়ে এসেছে জসিম।

জসিমের বাবা কৃষক হানিফ মাতবর বলেন, আমার পাঁচ সন্তানের মধ্যে জসিম জন্মের পর থেকে প্রতিবন্ধী। তার একটি হাতও নেই। স্বাভাবিক চলাফেরাও ঠিকমত করতে পারে না। তবে জসিম শারীরিক প্রতিবন্ধী হলেও সে সবার চেয়ে বেশি মেধাবী। কোনো কাজেই সে পিছিয়ে থাকে না। বিশেষ করে পড়ালেখার প্রতি অনেক মনোযোগ তার। পা দিয়েই জসিম লেখালেখিসহ সব কাজ করে আসছে।

তিনি আরো বলেন, আমার বাড়িসহ সম্পত্তি বলতে মাত্র আট শতাংশ জমি। অন্যের জমিতে কামলা দিয়ে পয়সা রোজগার করে সাত সদস্যের সংসার চালাই। অনেক সময় সন্তানদের মুখে ঠিকমতো দু’বেলা ভাত তুলে দিতে হিমশিম খেতে হয়। অভাবের এই সংসারে অতি কষ্টে লেখাপড়া করছে আমার ছেলে প্রতিবন্ধী জসিম। আমার ছেলে জসিমের অনেক স্বপ্ন। সে লেখাপড়া করে আর সবার মতো সরকারি চাকরি করতে চায়। তার মনের আশা যাতে পূরণ হয়, সেজন্য সংশ্লিষ্ট সকলের সহযোগিতা কামনা করেন জসিমের দিনমজুর বাবা।

সূত্র : কালেরকন্ঠ

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles