
উপমহাদেশের প্রেক্ষাপটে নারীদের চলার পথ মোটেও সহজ নয়। বাংলাদেশের নারী সচিব পেতে সময় লেগেছে ২৬ বছর, নারী আইনজীবী (সলিসিটার) জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে ৪৬ বছর। প্রতিরক্ষাখাতের সম্মুখ সারিতেও নারীদের আসতে লেগেছে কয়েক দশক। কিন্তু দেশের অন্যতম মেগা প্রজেক্ট মেট্রোরেলের প্রথমদিনেই চালকের আসনে যিনি ছিলেন তিনি একজন নারী।
বুধবার (২৮ ডিসেম্বর) উদ্বোধন হয়েছে দেশের প্রথম মেট্রোরেল। বৃহস্পতিবার (২৯ ডিসেম্বর) সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হয় ঢাকাবাসীর এ স্বপ্নের বাহন। সবাই হতে চেয়েছেন ইতিহাসের সাক্ষী। তাইতো হাজার হাজার মানুষ দেশের প্রথম মেট্রোরেলে ওঠার জন্য ভোর থেকেই লাইনে দাঁড়িয়েছিল। লাইন বেড়ে হয়েছিল ২ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের।
যে মেট্রোরেলের জন্য এত উৎসাহ-উদ্দীপনা সেই মেট্রোরেল চালক হিসেবে এই যাত্রায় দায়িত্বে আছেন পাঁচ জন নারী চালক। যার মধ্যে উদ্বোধনী দিনে মরিয়ম আফিজা চালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
তবে মরিয়ম একা নন, সঙ্গে অপারেশনাল সাহায্যের জন্য স্টেশন কন্ট্রোলার ও ট্রেন অপারেটর হিসেবে আছেন আরও ৪ জন নারী। তারা হলেন- আসমা আক্তার, বিথী সুলতানা, লিপি আকতার ও কাওসার পারভীন।
এদের মধ্যে ট্রেন অপারেটর হিসেবে মরিয়ম আফিজা সবার নজর কেড়েছে। একই দিনে ট্রেনে স্টেশন কন্ট্রোলার হিসেবে ছিলেন আসমা আক্তার। সময় সংবাদকে তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী ফ্ল্যাগ নেড়ে প্রথম যখন উদ্বোধন করলেন সেই ট্রেনেই আমি স্টেশন কন্ট্রোলারের দায়িত্বে ছিলাম। মূলত আমাদের প্রশিক্ষণগুলো এমনভাবে দেয়া হয়েছে যাতে একজন একইসঙ্গে স্টেশন কন্ট্রোলার ও ট্রেন অপারেটরের দায়িত্ব পালন করতে পারেন। আমি ও মরিয়ম ছাড়াও এ দায়িত্বে আমাদের সঙ্গে আরও তিনজন নারী আছেন।’
প্রথম দিনে উদ্বোধনী ট্রেনে গুরুত্বপূর্ণ এ দায়িত্বের অনুভূতি কেমন ছিল জানতে চাইলে আসমা বলেন, ‘সত্যি বলতে মেট্রোরেলের এমন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে আমিই ছিলাম প্রথম নিয়োগপ্রাপ্ত নারী। অবশ্যই এটা বেশ রোমাঞ্চকর। একটা চমৎকার ভালো লাগা কাজ করছে। প্রযুক্তির দিক থেকে একজন নারী হিসেবে এমন একটি জায়গায় থাকতে পেরে আমি গর্বিত।’
আরেকজন স্টেশন কন্ট্রোলার বিথী সুলতানা সময় সংবাদকে বলেন, ‘উন্নয়নের অগ্রযাত্রার সঙ্গী হতে পেরে আমি অনেক খুশি। এ মেট্রোরেল ঢাকাবাসীর প্রাণের দাবি ছিল। নিজেকে এর সঙ্গে যুক্ত করতে পেরে খুব ভালো লাগছে।’
ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) প্রশাসন বিভাগের পরিচালক মো. আব্দুর রউফ বলেন, মেট্রোরেল প্রাথমিক সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। মেট্রোরেল চালাতে পর্যাপ্ত চালক নিয়োগ দেয়া হয়েছে। এদের মধ্যে পাঁচজন নারী চালক রয়েছেন। দক্ষতার সঙ্গে ট্রেন চালানোর জন্য চালকদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে।