
এ যোনো এক রূপকথার গল্প। ভালোবাসার মানুষকে জীবন সঙ্গীনি হিসেবে পেতে হাল ছাড়েননি এই হৃদয়বান রাজকুমারী। তিন বছর ধরে লম্বা লড়াই চালিয়ে অবশেষে সফল হয়েছেন তিনি। জাপানের সম্রাটের ভাতিজি প্রিন্সেস মাকো সাধারণ পরিবার থেকে আসা তার প্রেমিককে বিয়ে করতে বছরের পর বছর ধরে সমালোচনার পরও লম্বা লড়াই চালিয়ে গেছেন। সেই যুদ্ধে জয়ী হওয়ার পর অবশেষে আগামী সপ্তাহে তাদের বিয়ে হবে।
গত তিন বছর ধরে তাদের বিয়ে স্থগিত ছিল। যে কারণে তিনি মানসিক ভাবেও অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তার পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিজঅর্ডার (পিটিএসডি) ধরা পড়েছিল।
আগামী ২৩ অক্টোবর ৩০ বছর বয়স পূর্ণ হবে রাজকুমারী মাকোর। তার প্রেমিক কোমুরোর বয়সও ৩০। কোমুরোকে বিয়ে করার পর মাকো তার রাজকীয় মর্যাদা হারাবেন। দুজনই বিয়ের পর যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করতে চলেছেন, যেখানে প্রেমিক কোমুরো একটি আইন সংস্থায় চাকরি করেন।
২০১২ সালে টোকিওর আন্তর্জাতিক খ্রিস্টান বিশ্ববিদ্যালয়ে তাদের প্রথম দেখা হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে রাজকুমারী মাকো শিল্প ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিষয়ে পড়াশোনা করেন।
২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে রাজপ্রাসাদ থেকে তাদের বাগদানের ঘোষণা করা হয়। দুজন পরে একটি সংবাদ সম্মেলন করেন, যেখানে তাদের একে অপরের প্রতি হাসি জনসাধারণকে বিমোহিত করে। তাদের বিয়ের তারিখ ঠিক করা হয় ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে।
কিন্তু ২০১৭ সালের ডিসেম্বর কয়েকটি সাপ্তাহিক ম্যাগাজিনে রিপোর্ট করা হয় যে, কোমুরোর মা এবং তার প্রাক্তন বাগদত্তার মধ্যে টাকা-পয়সা নিয়ে বিরোধ রয়েছে। কোমুরোর মায়ের বাগদত্তা দাবি করেন যে, মা এবং ছেলে তার প্রায় ৩৫ হাজার ডলারের ঋণ পরিশোধ করতে ব্যর্থ হয়েছে। কোমুরো অবশ্য দাবি করেন যে, ওই টাকাটি একটি উপহার ছিল, ঋণ নয়।
ওই খবরের পর ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে তাদের বিয়ে স্থগিত করা হয়। কারণ হিসেবে বলা হয় যে, প্রেমিক যুগলের তাদের বিয়ের অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করতে এবং বিবাহিত জীবনের জন্য প্রস্তুতি নিতে আরও সময় প্রয়োজন।
২০১৮ সালের আগস্ট মাসে কোমুরো ফোর্ডহ্যাম ইউনিভার্সিটি ল স্কুলে পড়াশোনা করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত তিনি সেখানেই ছিলেন।
২০১৮ সালের নভেম্বরে মাকোর বাবা প্রিন্স আকিশিনো বলেন, আর্থিক বিরোধের সমাধান না হওয়া পর্যন্ত বাগদান অনুষ্ঠান এবং অন্যান্য অনুষ্ঠান করা অসম্ভব, এভাবে জাপানি জনগণ বিবাহ উদযাপন করতে পারে না। তিনি এক সংবাদ সম্মেলনে আরও বলেন যে, ‘আমি সম্প্রতি আমার মেয়ের সঙ্গে বেশি কথা বলিনি, তাই আমি জানি না তার কেমন লাগছে’।
২০২০ সালের নভেম্বরে মাকো এক বিবৃতিতে বলেন যে, তিনি এবং কোমুরো বিশ্বাস করেন, তারা অবশ্যই বিয়ে করবেন। সেই মাসের শেষের দিকে তার বাবাও বলেছিলেন যে, তিনি তাদের বিয়ে অনুমোদন করেছেন। কিন্তু আবারও স্মরণ করিয়ে দেন যে, আর্থিক বিরোধরে অবশ্যই একটা সমাধান করতে হবে।
২০২১ সালের এপ্রিল মাসে কোমুরো ‘যতটা সম্ভব ভুল তথ্য সঠিক করার’ অঙ্গীকার নিয়ে ২৪ পৃষ্ঠার একটি বিবৃতি জারি করেন এবং বলেন যে সে তিনি তার মায়ের প্রাক্তন বাগদত্তার সঙ্গে আর্থিক বিরোধের নিষ্পত্তি করবেন।
২০২১ সালের মে মাসে কোমুরো আইনের স্কুল থেকে পাশ করেন এবং নিউইয়র্কের একটি ল ফার্মের জন্য কাজ শুরু করেন। এরপর তিনি জুলাই মাসে নিউইয়র্ক বারেও পরীক্ষা দেন, ডিসেম্বরে যার ফলাফল পাওয়া যাবে।
২০২১ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিন বছর পর কোমুরো জাপানে ফিরে আসেন, এসময় তার মাথায় একটি পনিটেইল ছিল। এটা দেখে ট্যাবলয়েডগুলো প্রতিবেদনে উন্মাদনার সৃষ্টি করে, কারণ এটিকে ‘অসম্মানজনক’ বলে মনে করা হয়। তবে কয়েক সপ্তাহ পরে মাকোর বাবা-মায়ের সাথে একটি কালো স্যুট পরে দেখা করার সময় পনিটেইলটি কেটে ফেলেন কোমুরো।
২০২১ সালের ১ অক্টোবর রাজপ্রাসাদ থেকে ঘোষণা করা হয় যে, আগামী ২৬ অক্টোবর তাদের দুজনের বিয়ে হবে। কোন অনুষ্ঠান হবে না এবং রাজকুমারী মাকো তার প্রেমিক কুমোরোর কাছ থেকে বিয়ের জন্য কোনো টাকাও নেবেন না। জাপানের রাজ পরিবারের কোনো মেয়েকে সাধারণ পরিবারের কোনো ছেলে বিয়ে করতে চাইলে ছেলের পক্ষ থেকে রাজকুমারীর পরিবারকে বিশাল অঙ্কের টাকা দিতে হয়, যার পরিমাণ প্রায় ১৩ লাখ মার্কিন ডলার (১১ কোটি ১৩ লাখ ২৬ হাজার ৪৬ টাকা) দিতে হয়।