2.9 C
Toronto
রবিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৫

একজন নেতা আমাদের ছিল

একজন নেতা আমাদের ছিল - the Bengali Times
বঙ্গবন্ধুর ব্যাক টু ব্যাক ভাষণ আমাদের সম্পদ

রাষ্ট্রনায়কত্ব দূরদৃষ্টি এবং ঐতিহাসিক দিকনির্দেশনা ভরা একই ব্যক্তির পরপর দুটি অলিখিত ভাষণ আছে, এমনটি পাওয়া খুবই বিরল। ৭ মার্চ ১৯৭১ পর ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ একই স্থানে বঙ্গবন্ধু যে ভাষণ দিয়েছিলেন সেই দুটি ভাষণই আজ ঐতিহাসিক। সম্ভবত এই দুর্লভ সৌভাগ্য আর অন্য কোন রাজনৈতিক নেতার কপালে জুটে নাই। শব্দ চয়ন, দর্শন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি, মানবিক দিক, রাজনৈতিক লক্ষ্য সব দিক দিয়ে বিবেচনায় বঙ্গবন্ধুর ব্যাক টু ব্যাক ভাষণ আমাদের সম্পদ। আজ হতে শত বছর পর যদি কেউ বঙ্গবন্ধুকে জানতে ইচ্ছে পোষণ করে তবে তাঁর এই দুটি ভাষণ সে ইচ্ছে পূরণে অনেকখানি কাজ করে দিবে।

বিধ্বস্ত বাংলাদেশ গঠন ও টিকিয়ে রাখার যে চ্যালেঞ্জ জাতির সামনে এসে দাঁড়িয়েছিল খোকাবাবুর প্রত্যাবর্তনে (বঙ্গবন্ধুর ডাক নাম ছিল খোকা) বাঙালি জাতি নতুন করে প্রেরণা ও আশার আলো খুঁজে পেয়েছিল ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ তারিখে।

- Advertisement -

সাদা রুমাল দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে তিনি উচ্চারণ করলেন ‘ভাই ও বোনেরা’… তারপর প্রায় ৪০ মিনিটের বক্তৃতার মাঝে মাঝে অনেকবার সেই সাদা রুমাল দিয়ে চোখ মুছেছেন তিনি।

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একজন মুগ্ধ ভক্ত হয়েও বাঙালি জাতির সাহস ও ত্যাগের মহিমায় গর্বিত হয়ে তিনি তাঁর প্রিয় কবিকে এই দিনে আক্রমণ করে বসেন। কবির বানীকে খণ্ডন করে তিনি বলেছিলেন ‘কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন সাত কোটি বাঙালিরে হে বঙ্গ জননী রেখেছ বাঙালি করে মানুষ করনি, কবিগুরুর মিথ্যা কথা প্রমাণ হয়ে গেছে। আমার বাঙালি আজ মানুষ’। অর্থাৎ যে বাঙালি এতদিন কবিগুরুর আশ্রয়ে ছিল বঙ্গবন্ধু সেই বাঙালিকে কবিগুরুর কাছ থেকে তুলে এনে বীর বাঙালির মর্যাদা দিয়ে নিজ দলভুক্ত করে নিলেন (আমার বাঙালি )।
এছাড়াও সেদিন তিনি শক্রকে বলেছিলেন তোমাদের প্রতি আমার আক্রোশ নেই এবং এরই সাথে স্বদেশী মানবতা বিরোধী অপরাধীদের বিচার করা হবে বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে এবং চিরদিন স্বাধীন থাকবে। বাংলাদেশকে কেউ দাবিয়ে রাখতে পারবে না। সেদিনের সেই ভাষণের প্রতিটি কথা ভাব সম্প্রসারণ করে আমাদের ভাবনা জগতকে আরো ধারালো করতে হবে। আমাদের ভাবনাকে করতে হবে প্রসারিত। সেজন্য জানা দরকার তাঁর ভাষণ সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খ ধারণা। যারা অবহেলা করবে, তাঁকে অবজ্ঞা করবে তারা অনেক কিছু জানা থেকে বঞ্চিত হবে।

দশ মাস আগে বঙ্গবন্ধুকে দেশদ্রোহী হিসাবে বন্দী করে তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে পাকিস্তান নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। দশ মাস পর সেই তেজগাঁও বিমানবন্দরে রাষ্ট্রপতি পদ মর্যাদায় তিনি বাংলার মাটি স্পর্শ করেন। স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের সাথে সাথে রাষ্ট্রপতি মর্যাদায় তাঁকে গান স্যালুট দেয়া হয়। রাষ্ট্রপতির শপথ না নিয়েও বিদেশী রাষ্ট্র ও সরকার প্রধান দ্বারা রাষ্ট্রীয় সম্মান পেয়েছিলেন তিনি। বিমানবন্দর থেকে জনতার নেতাকে সরাসরি নিয়ে যাওয়া হল জনতার কাতারে, ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে। যেখানে অপেক্ষায় ছিল দেশের জনসাধারণ। একটি পরিষ্কার ঘোষণা তিনি দেশের মানুষকে সেদিনে শুনিয়েছিলেন। আর সেটা হল, ‘আমি বাঙালি। আমি মানুষ। আমি মুসলমান। একবার মরে দুইবার মরে না…এবং যাবার সময় বলে যাব, জয় বাংলা। স্বাধীন বাংলা। বাঙালি আমার জাতি। বাঙলা আমার ভাষা। বাংলার মাটি আমার স্থান’।

এমন একজন নেতা আমাদের ছিল সে কথা কি আমরা সবাই জানি?

স্কারবোরো, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles