
মানুষের খুশি দেখতে আমার ভাল্লাগে।
মাস দুয়েক আগের ঘটনা। বিছানায় গায়ে দেয়া কম্বল লন্ড্রি করতে যাচ্ছি ব্রাম্পটন ডাউন টাউনে। কারন বাসার লন্ড্রিটা একটু ছোট। বিশাল কম্বল ওর ভিতরে ঢোকেনা। সেজন্য বাসায় ক্লিন করা খুব কষ্টকর। রাস্তায় যেতে যেতে একটা ফোন আসল। ব্লুটুথের মাধ্যমে গাড়ির ওডিওতে কথা বলা যায়। কাজেই গাড়ি চালানোতে ব্যাঘাত ঘটেনা। ফোনটা ধরলাম।
– হেলো বায়েস, মোস্তাফা স্পিকিং। হাউ ক্যান আই হেল্প ইউ?
আমার মোবাইল সেটে দুটো সিম। একটা আমার ব্যক্তিগত। আরেকটি বায়েসের।বায়েস একটি অলাভজনক চ্যারিটবল সংস্থা। ওটাতে আমি কাজ করি। 24/7. মানে ফোনটি যেহেতু আমার কাছে থাকে, সেহেতু রাতবিরাতে মানুষ ফোন করলে ধরি। কোন হেল্প চাইলে হেল্প করার চেস্টা করি।
-মোস্তফা ভাই, আমি ওমুক। আমার একটা জব দরকার। হেল্প করতে পারবেন?
-কী ধরনের জব খুজছেন?
– যে কোন ব্যাংকে।
-কখনো ব্যাংকে জব করেছেন?
– জ্বি, বাংলাদেশে করেছি অনেক বছর।
-এখানে? মানে কানাডায়?
– জ্বি বছর খানেক করেছিলাম। তবে অনেক আগে। পাঁচ বছর আগে।
-নিজে নিজে তো চেস্টা করছেন?
-জ্বি, করছি। কয়েক মাস হল। তবে কাজ হচ্ছে না।
কথা চলতে লাগল। ইতোমধ্যে ঘন্টা খানেক সময় পেরিয়ে গেছে। লন্ড্রি দোকানের সামনে গাড়ি পার্ক করে কথা চালিয়ে যাচ্ছি।
দেখলাম, ওনার শিক্ষা,অভিজ্ঞতা, ভাষার দক্ষতা সবই আছে। অনেকগুলো ইন্টারভিউও দিয়েছেন। কিন্তুু সফল হতে পারেন নাই।
আমি যাচাই করে দেখলাম, ওনার ভিতরে শুধু একটু কনফিডেন্সের অভাব। মানে ” আমার দ্বারা বোধ হয় আর চাকুরীর ইন্টারভিউ পাশ করা হবেনা।”
আর দেখলাম ইন্টারভিউ স্কিলে সামান্য একটু ঘাটতি আছে।
ইন্টারভিউতে ভালো করার জন্য বেশ কিছু টিপস দিলাম। আর মটিভেশন হাই করার জন্য দিলাম কিছু টোটকা পরামর্শ।
তারপর কথা শেষ হল।
সেদিনের পর ওনাকে আমি প্রায় ভুলেই গেছি। এর মধ্যে ব্রাম্পটনে অনেক তুষার পরেছে। লবন দিয়ে তা গলানোও হয়েছে। বরফ গলা জল হাম্বার নদীতে গড়িয়েছে হাজার হাজার টন। তার কিছু গড়িয়েছে অন্টারিও লেকে। বিছানার কম্বলটি আবারো লন্ড্রি করার সময় হয়েছে। তুষারের শুভ্র সৌন্দর্য আর নানান কাজে কত কথা কত স্মৃতি সময়ের গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে।
আজকে আবারও সেই ভাইয়ের ফোন।
-হ্যালো, বায়েস।
-ভাই, আমি অমুক। আপনার মনে আছে?আমাকে ব্যাংকে চাকুরীর ব্যাপারে কিছু টিপ্স দিয়ে ছিলেন।
-জ্বি, মনে পরেছে।
-ভাই, গত সপ্তাহে দুটো ব্যাংক থেকে অফার পেয়েছি। ভাবলাম আপনাকে খবরটা জানানো দরকার। নইলে নিজেকে অকৃতজ্ঞ মনে হবে।
ওনার কথা শুনে অঞ্জন দত্তের সেই ‘বেলা বোস’ গানটার কথা মনে হল। “চাকরিটা বেলা পেয়ে গেছি তুমি শুনছো…”
একটা চাকুরী একটি কর্মসংস্থান একটা মানুষের জীবনকে পাল্টে দেয়। অনেক সময় তার পুরো পরিবারকে উঠে দাড়াতে সাহায্য করে। পরিবার ও সমাজে সম্মান বাড়ে। মানুষ তখন জীবনের মানে খুঁজে ।
আমার পরামর্শ বা টিপসেই যে ওনার চাকুরী হয়েছে সে দাবী করা ঠিক হবেনা। চাকুরীগুলো ওনার নিজস্ব চেষ্টায় হয়েছে। তবে আমার সাথে কথা বলাটা ছিল ওনার বৃহৎ চেস্টার ক্ষুদ্র একটি অংশমাত্র। আজকে তিনি সেই স্বীকৃি দিলেন। সে জন্য আমি খুশি। তার চেয়েও বেশি খুশি হয়েছি কারন উনি নিজে এখন খুব খুশি।
মানুষের খুশি দেখতে আমার ভাল্লাগে।
স্কারবোরো, অন্টারিও, কানাডা