
তবে, সামান্য একটু কথা আছে।
সাধারণত স্কুল জীবন থাকে ১০ বছরের। বিশ্ববিদ্যালয়ের জীবন ৩-৫ বছর। কিন্তু কলেজ জীবন মাত্র দুই বছরের। তাহলে কী দাঁড়ালো? শিক্ষা জীবনে দুই বছর খুবই অল্প সময়। পড়ালেখার চাপ মিটিয়ে নতুন পরিবেশের সাথে খাপ খাওয়ানোর পর বন্ধুত্ব করার জন্য যথেষ্ট সময় পাওয়া যায় না। অথচ আমরা আদমজী কলেজে লেখাপড়া করেছিলাম পঞ্চাশ বছর আগে। তবু আমাদের বন্ধুত্ব এখনো সেই ছেলেবেলার মতো রয়ে গেছে। সবাই মোটামুটি নানা-নানি, দাদা-দাদি তবুও এখনো কথা বলি ‘তুই-তুমি। বাংলাদেশের মাটিতে কিংবা প্রবাসে যেখানেই আমরা মিলিত হই, এখনো সেই আলাল ও দুলাল – আলাল ও দুলাল জীবনের বালক বালিকা হয়ে যাই।
এবারো তাই হলো। বন্ধু সেলিম তার কুয়াকাটার নীলাঞ্জনা হোটেলে আমাদের আমন্ত্রণ করেছিলো। আর কী লাগে, হলে গেল ২২ জনের মিলনমেলা। যার মধ্যে ৯ জনই কানাডার বাসিন্দা। বন্ধুর হোটেল বলে কথা। নিজ হাতে ফির্নী বানিয়ে খাওয়ানো থেকে শুরু করে প্রতি বেলায় তদারকি করে খাইয়েছে সেলিম। সকালের নাস্তা হয়েছে নানান রকমের পিঠা দিয়ে। বারবাকিউ, খিচুড়ি, ভর্তা-ভাজি, দেশি মাছ আমার প্রিয় পুইশাক কী না ছিলো খাবারের তালিকায়। নীলাঞ্জনা হোটেলের কর্মচারীরা আমাদের এমন যত্ন নিলো যেন আমরাই হোটেলের মালিক। আর সেলিমের ব্যস্ততা দেখে মনে হতে লাগলো আমরা যেন ওর কুটুম বাড়ির লোক। হয়তো তাই, কেননা সেলিমের স্ত্রী নীলাও ছিল আমাদের ক্লাস মেট। গত বছর এপ্রিল মাসে একটি অস্ত্রোপচারের সময় সে দুনিয়া থেকে চিরবিদায় নিয়ে চলে গেছে। নীলাঞ্জনা হোটেল নীলারই গড়া প্রতিষ্ঠান। দেখাশোনা এবং দায়িত্ব – সবই ছিলো নীলার হাতে। কুয়াকাটা যখন পর্যটন এলাকা হিসেবে স্বীকৃতি পায়নি নীলা তখন সিদ্ধান্ত নেয় এখানে সে একটি হোটেল বানাবে। মেয়েটা ঠিক তাই করেও দেখাল। আজও সকলে নীলাঞ্জনাকে চেনে কুয়াকাটার পুরাতন হোটেলগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি হোটেল হিসেবে। আমাদের স্বাগত জনাতে লবিতে দাঁড়িয়ে সেলিম অশ্রুসিক্ত হয়ে বললো আজ নীলা বেঁচে থাকলে তোদের যতটা দেখাশোনা করতো আমি হয়তো তা পারবো না…
হয়তো কোন একদিন অনেক কিছু লিখবো নীলাঞ্জনা এবং কুয়াকাটা নিয়ে। আজ শুধু এইটুকু বলি, একবার বন্ধু তো আজীবন বন্ধু, এমন বাক্য বলা যায় আমাদের আদমজী কলেজের ১৯৭২-১৯৭৪ ব্যাচের বন্ধুদের নিয়ে। আমরা তাই যা অনেক আগে কবি বলে গেছেন ঠিক যেন আমাদের উদ্দেশ্যে করেই;
‘মোরা ঝঞ্ঝার মতো উদ্দাম। মোরা ঝর্ণার মতো চঞ্চল
মোরা বিধাতার মতো নির্ভয়। মোরা প্রকৃতির মতো স্বচ্ছল। মোরা আকাশের মতো বাঁধাহীন। মোরা মরু সঞ্চার বেদুঈন। বন্ধনহীন – জন্ম স্বাধীন। চিত্তমুক্ত শতদল।’
স্কারবোরো, কানাডা