7.8 C
Toronto
রবিবার, এপ্রিল ২০, ২০২৫

সম্বোধন সংকটের মত জাতীয় সমস্যা সমাধান

সম্বোধন সংকটের মত জাতীয় সমস্যা সমাধান - the Bengali Times
ফাইল ছবি


থাইল্যান্ড হতে ‘কূঊন’ (Kooun) আমদানি করা ছাড়া বাংলাদেশের সম্বোধন সংকটের মত জাতীয় সমস্যা সমাধানের আর কোনোই উপায় দেখছি না।

থাইদের ‘কূঊন’ সম্বোধনটি সবচাইতে সাম্যবাদী ও জেন্ডার নিউট্রাল। পূরুষ, নারী, সাহেব, বস, সকলকেই সম্বোধন করা হয় ‘কূঊন’ (Kooun)। সম্বোধনটির অর্থ হতে পারে জনাব, জনাবা, মিস্টার-মিজ-মিস-মিসেস, হ্যালো, হাই বা ‘এই যে শুনছেন’ সবকিছু।

- Advertisement -

কোমল ও নমনীয় স্বরে দীর্ঘ টানে ‘কূন’ সম্বোধন সম্মানের এবং প্রত্যাশিত। ধূমধাম ‘কূন’ বলা বেয়াদবি। এই নিয়ে এসিয়ান ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজিতে (এআইটিতে) এক মজার কান্ড হয়েছিল।

এআইটির ভেতর একটি গ্রোসারি ২০ ঘনটা খোলা থাকত। দুই-তিনজন নারী-তরুণী মিলে দোকানটি চালাতেন। এক নবীন মাদ্রাজি ছাত্র কর্ন ফ্লেইক কিনতে গেল গ্রোসারিতে। দক্ষিণ ভারতীয়রা খুব দ্রুত কথা বলে। ছাত্রটি আঙ্গুল দিয়ে শেলফের কর্ন ফ্লেইক দেখিয়ে দ্রুতস্বরে বলল—“কূন, গিভ মি এ কর্ন ফ্লেইক।“

ছাত্রটি নমনীয় গলায় টেনে ‘কূউউউন’ উচ্চারণ করেনি। দোকানের তিনজন নারীই সমস্বরে বলে উঠলেন—“নো হ্যাভ, নো হ্যাভ! মাই পেন লাই! নো হ্যাভ”। অর্থঃ “নাই নাই, মাফ করো মাফ করো”। সোজা কথা তারা এই ক্রেতাটির কাছে বেচবেই না। মাদ্রাজি ছাত্রটি যতোই আঙ্গুল উঁচিয়ে শেলফে দেখিয়ে “ওই তো আছে তো, দাও না রে ভাই”, তিন নারীর একটাই কথা “ “নো হ্যাভ, নো হ্যাভ! মাই পেন লাই! নো হ্যাভ”। তারা কর্ন ফ্লেইক বেচলই না ছাত্রটির কাছে।

সূতরাং, ‘কূঊন’ (Kooun) আমদানি করা হলেও বিপিএটিসিতে শেখাতে হবে ভদ্রভাবে বিনয় সহযোগে ‘কূঊন’ (Kooun) বলার কায়দাকানুন।

আবার বিনয় বেশি লম্বা বা অতিভক্তি হয়ে গেলেও অসুবিধা। আগের ঘটনা হতে শিক্ষা নিয়ে কলম-পেন্সিল কী যেন একটা কিনতে গিয়ে ‘কূঊঊঊঊন’ (Koooun) সম্বোধনটি বেশি লম্বা করে বলে ফেলেছিলাম। আমাকেও শুনতে হয়েছিল “নো হ্যাভ, নো হ্যাভ! মাই পেন লাই! নো হ্যাভ”। তারা ভেবেছিল একটা সম্মানসূচক শব্দ নিয়ে বিটকেলি করছি বোধ হয়! এই বেচারাকেও খালি হাতে ফিরতে হয়েছিল।


প্রজাতন্ত্রের ‘চাকর’ ‘সেবক’ এসব কোনো কাজের কথা নয়। যদি ‘চাকর’ ‘সেবক’ ইত্যাদিই সত্য হয়, তাহলে সেগুলো হবার জন্য যুবা-তরুণদের জানপ্রাণ উজাড় করে বিসিএস গাইড মুখস্ত করার কথা নয়। ঢাবির লাইব্রেরির সামনে ভোর হতে ইট পেতে জায়গা দখল করে বিসিএস-এর পাঠ-প্রস্তুতি নেবার কান্ডগুলো কি ‘চাকর’ ‘সেবক’ ইত্যাদি হবার জন্য?


শুনেছিলাম প্রধানমন্ত্রী তাঁকে ‘স্যর’ ডাকার চল চালু করেছিলেন। তাঁর পদাংক অনুসরণ করে সরকারি কর্মকর্তা নারীরাও এখন ‘স্যার’। ইন্টারেস্টিং! অন্য নারীরা যেমন সরকারি স্কুল কলেজের শিক্ষিকাগণ বা বেসরকারী প্রতিষ্ঠান যেমন ব্যাংক-বীমা প্রতিষ্ঠানের নারীরা তো ‘ম্যাডাম’ ‘আপা’ ইত্যাদিই রয়ে গেলেন! এই বৈষম্য কিন্তু নারীবাদের ইস্যু হতে পারে। কিন্তু নারীবাদীগণ এই বিষয়ে চুপচাপ। আসলে তাঁরা বুঝতেই পারছেন না কী হতে কী অর্জন হয়ে যাচ্ছে, বা অর্জন হাতছাড়াই হয়ে গেল কী না!


‘কলোনিয়াল হ্যাংওভার’ ধরণের তাত্ত্বিক কথা বলেটলে কোনো ডিকশনারি হতেই কি ‘স্যর’ সম্বোধনটি তাড়ানো যাবে? যদি না-ই যাবে বুঝে নিতে হবে সমস্যা ‘স্যর’-এ নয়, অন্য কোথাও।
দেশের শীর্ষ পর্যায় হতেই যখন পূণঃউপনিবেশিকরণ যজ্ঞকে (রিকলোনিয়ালিজেশন) লিজেটিম্যাসি দিয়ে গ্লোরিফাই করা হয়েছে, ফলাফল এ রকমই হবার কথা!


সমস্যা মাস্তানিতে। শুধু ‘ক্ষমতার দাপট’ ধারণা ঠিক নয়। মাস্তানি রাষ্ট্রের উপর হয়ে নীচ পর্যন্ত এমনই সর্বব্যাপ্ত হয়ে পড়েছে যে চেয়ার-গদি সবই মাস্তানদের দখলে। বগুড়ার জজ স্যার ম্যাডাম আপা যা করলেন তা কোনো অর্থেই ক্ষমতার দাপট নয়, নিরেট নিখাদ ২৪ ক্যারেট মাস্তানি। উনার শিশুকন্যাটির মানস গঠনে তাঁর মাস্তানচরিত্র নিয়ে চ্যাটজিপিটিও একটি বড়সড় মনস্তাত্ত্বিক রচনা লিখে দিতে পারবে।
স্যর’ সম্বোধন থাকবে, থাকুক! নিপাত যাক মাস্তানতন্ত্র ।

নইলে যেটা বললাম ‘কূঊন’ (Kooun) সম্বোধনটিই ধার করে আনা হোক! আইন করে চালু করা হোক! ব্যবহারবিধিও প্রণয়ন করা হোক!

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles