6 C
Toronto
শনিবার, মার্চ ১৫, ২০২৫

তোমার নাম ‘অশ্রু’

তোমার নাম ‘অশ্রু’
পাঠক এই লেখাতে কবি ইকবাল হাসানের কিছু বইয়ের নাম উল্লেখ করেছি বাকীগুলো তো আপনারা জানেন ইকবাল ভাই খুব অসুস্থ আপনারা তাঁর যেকোনো একটা গল্প কিংবা কবিতা পড়লে অথবা তার একটা বই হাতে নিয়ে গেলে তিনি হয়তো সুস্থতা বোধ করবেন

পদার্থবিদ্যা ও দেহতত্ব বিশ্লেষণে তোমার নাম ‘অশ্রু’। মানব চোখে প্রভূত পরিমাণ জল থাকে। তুমিও জল। কিন্তু, এক বিশেষ কারণে জল না হয়ে আছ অশ্রু হয়ে। গরিমাও জানো ভালো। নিজেকে আড়াল করে রাখো সুকৌশলে, অসামান্য ব্যবধান রেখে।

ঝরনার মতো বয়ে না যাওয়া নিতান্তই তোমার সুপ্ত বাসনা। প্রতিদিন ঝিনুক চোখে বড় হচ্ছো পাল তুলে। বলা যায়, পৃথিবীর মানুষ যখম উপভোগ করে জ্যোৎস্নার চিত্রকলা তখন কাঁটালতা হয়ে মাপতে থাকো ‘না প্রেমিক না বিপ্লবী’র দেহ চূড়া।

- Advertisement -

পালাতে চাইলে গড়ানো কান্নার সাথে বেরিয়ে যেতে পারতে বহুবার। অথচ মহা মূল্যবান একটি শোকের জন্য তুমি অপেক্ষা করছ। কেউ জানে না কী সেই শোক!
অতীতে বহুবার শোকের পাহাড় দেখেছি। প্রিয়জন অনেকেই চলে গেছেন দূর কোন নক্ষত্রের দিকে। এসব দেখে দেখে অনেকে ভেসেছি কান্নায়।
একদিন সাঁঝের বেলায় কতোগুলো বক পাখিকে উড়ে যেতে দেখেছিলাম। সামান্য এতটুকুই ঘটনা। অথচ সেদিন ভীষণ কেঁদেছিলাম। তখন আমি বালক গোত্রের লোক।
এখানেই শেষ নয়। ছায়া পাবার আশায় একটি শিশুকে শুয়ে থাকতে দেখেছিলাম গাছের নিচে। যুবক বয়সে তখনো একবার কেঁদেছিলাম শিশুটির ছায়া জ্ঞান দেখে।
মহাসড়কের পাশে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা বুনো ফুল মাড়িয়ে যাওয়া মন্ত্রীর গাড়ি ধরতে না পারার দুঃখেও এই তো সেদিন… মানে এই বয়সে। এভাবে কারণে অকারণে আমি কেঁদে উঠতে পারি। দেখতেই পাচ্ছ, কাঁদতে কাঁদতে ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে বালুকণার আয়তন ধারণ করেছি। বৃত্তাকার অভিজ্ঞতা এই যে, প্রতিবার কান্না থামিয়ে দেখি তুমি স্থির হয়ে বসে আছ ঠিক আগেরই মতো। নিজেকে বাঁচিয়ে রেখেছ ‘মম চিত্তে নিতি নৃত্যে’।

ক’ফোটা চোখের জল ফেললে তুমি বেরিয়ে আসবে সে কথা নাই বা বললে। জানো তো কিছুদিনের মধ্যে শরীর আমাকে ছেড়ে যাবে। ছেড়ে যাবে নিঃশ্বাস। দৃষ্টি হবে স্থির। দেহঘড়ি পোকাদের পিঠে চড়ে হাঁটবে দিকবেদিক। এসবের আগে তোমার মুক্তি দেখে যেতে পারলে আনন্দ হতো। অনেক সুযোগ পেয়েছিলে অতীতে। বিস্তর গদ্য না শুনিয়ে শুধু এইটুকু বলি, এইতো সেদিন চন্দ্র বালিকার পাশে দাঁড়িয়ে কেঁদেছি নীরবে। যে মুখ দেখেছি যুগের পর যুগ চক্ষু বুজে, তাকেও পেয়েছিলাম কাছে। অতঃপর আমার ঝিনুক চোখে ব্যথা বেড়ে গিয়েছিল সুনির্দিষ্ট। তখন ‘আমি উত্থান আমি পতন, আমি অচেতন-চিতে চেতন’। হয়তো এ জীবনে এর চেয়ে বেশি বিদ্রোহী হতে পারবো না আমি। তবুও তুমি থেকে গেলে গহিনে। লুপ্ত গুপ্ত নির্বাপিত। ভয় হয়। আমার ভীষণ ভয় হয়। তুমি কি তাহলে আমার জন্যই অপেক্ষা করছ? আমাকেই মনে করছ মহা মূল্যবান?
যদি তোমার আমার মুক্তি হয় সমান্তরাল। যদি হয়ে যাই, কার্তিকের শেষ জ্যোৎস্নায় গল্প। দুজনেই যদি রেখে যাই দীর্ঘশ্বাসের পাণ্ডুলিপি। তবে তো বলতেই পারি মানুষ আত্মা দ্বারা তৈরি নয়। অশ্রুই আমাদের শক্তি।

যেদিন ইকবাল হাসানের কপাটবিহীন ঘরে ঢুকে যাবো অথবা তাঁর লেখা ‘মৃত ইঁদুর ও মানুষের গল্প’ পড়বে লোকে। সেদিন জলরঙে মৃত্যু দৃশ্য দেখে মানুষ বলবে, আয়ু নয়। তুমিই ছেড়ে গেছ আমাকে। কেননা, মানুষ মরে গেলে অশ্রু থাকে না ঝিনুক চোখে।
স্বীকারোক্তিঃ

পাঠক এই লেখাতে কবি ইকবাল হাসানের কিছু বইয়ের নাম উল্লেখ করেছি। বাকীগুলো তো আপনারা জানেন। ইকবাল ভাই খুব অসুস্থ। আপনারা তাঁর যেকোনো একটা গল্প কিংবা কবিতা পড়লে। অথবা তার একটা বই হাতে নিয়ে গেলে তিনি হয়তো সুস্থতা বোধ করবেন।
কবি ইকবাল হাসানের যে বইগুলোর নাম এই লেখাতে ব্যবহার করেছি সেগুলো হলো;
‘অসামান্য ব্যবধান’ / ‘জ্যোৎস্নার চিত্রকলা’ / ‘দূর কোন নক্ষত্রের দিকে’ / ‘কপাটবিহীন ঘর’ / ‘মৃত ইঁদুর ও মানুষের গল্প’ / ‘জলরঙে মৃত্যুদৃশ্য’ / ‘কার্তিকের শেষ জ্যোৎস্নায় গল্প’ / ‘দীর্ঘশ্বাসের পাণ্ডুলিপি’

স্কারবোরো, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles