14.2 C
Toronto
রবিবার, মার্চ ১৬, ২০২৫

দেশের ব্যাপার-স্যাপার আলাদা

দেশের ব্যাপার-স্যাপার আলাদা
এদেশে ঝড় তুষারপাত ফ্রিজিঙ রেইন গরম সবকিছুই প্রায় বেশ কয়েকদিন আগ থেকে আমরা জেনে ফেলি

সারপ্রাইজ ছাড়া জীবন পানশে।
এদেশে ঝড়, তুষারপাত, ফ্রিজিঙ রেইন, গরম; সবকিছুই প্রায় বেশ কয়েকদিন আগ থেকে আমরা জেনে ফেলি।
তবে দেশের ব্যাপার-স্যাপার আলাদা।

বলা নাই, কওয়া নাই; বিরাট কালবৈশাখী ঝড় ধেয়ে আসে পশ্চিম থেকে। বেশ দূরে কুচকুচে কালো মেঘের পর্দা দেখলে মনে জাগে উত্তেজনা আর আনন্দের ঝলকানি। নিশ্চিত হওয়া যায় যে জিনিস একটা ধেয়ে আসছে, বহু প্রতীক্ষিত! সবকিছু ধুয়ে-মুছে সাফ করে দিয়ে মন করবে ঝকঝকে পরিষ্কার!
ঝড়ও যে এতো সুন্দর হতে পারে, দুনিয়ার আর কোনো দেশের মানুষের পক্ষে সেটা উপলব্ধি করা অসম্ভব। ঝড়ের আগে শুরু হবে পিনপতন নীরবতা। তারপর ফোটা ফোটা বৃষ্টি। মাটির কাঁচা, ধুলায়িত-ধূমায়িত সোঁদা গন্ধ। পানির ফোঁটাগুলো হঠাৎ হয়ে উঠবে বিরাট সাইজের। টিনের চালে ঠাসঠাস আওয়াজে কান করবে ঝালাপালা। শুরু হবে মহা তান্ডব! প্রবল বাতাসে বরই, সজনে গাছের পাতাগুলো উল্টিয়ে হবে ধবধবে সাদা। অন্ধকার হয়ে আসা টিমটিমে আলোর মাঝেও সেগুলো ঝকমক করবে মুক্তার মতো। সবাই বিস্ময়ে বলবে- এটা বিকাল না রাত?

- Advertisement -

দ্রিম দ্রিম করে দরজা জানালাগুলো বাড়ি খাবে। সেগুলো বন্ধ করতে চলবে ছুটাছুটি। শুরু হবে শিলাবৃষ্টি। মার্বেল আকারের বরফগুলো বালতিতে কুড়িয়ে জমিয়ে রাখবো। কয়েকমুঠো গামছায় ঢুকিয়ে পুটলি বানিয়ে, চেপে বরফের আতা বানিয়ে মুগ্ধ নয়নে চেয়ে থাকবো! কী তামাশা, আকাশ থেকে এরকম বরফ ক্যামনে পড়ে? মহামূল্যবান বস্তুটা নিয়ে ছুটবো আম্মাকে দেখাতে। আম্মা চশমাটা পরে দুগাল হেসে বলবে, ও মা! তাইতো!
তিনতলার জানালায় বাড়ি খাওয়া নারকেলের পাতা টেনে ধরে দা দিয়ে কূপিয়ে কেটে ফেলবো। নইলে জানালার কাঁচ ভেঙে ফেলবে।

কৌতূহলবশত বাইরে হাঁটতে বের হবো; ক্ষয়ক্ষতি নিরুপন করতে। যত ক্ষতি, ততো উত্তেজনা, ততো বিস্ময়। বাচ্চা কাচ্চারা ভেঙে পড়া সুপারি গাছের শুকনো পাতায় দোস্তকে বসিয়ে টানবে মনের সুখে। বসে থাকা বাচ্চাটা রাজার হালে দাঁত কেলিয়ে হাসবে। নামতেই চাইবে না। অবশ্য পাতা টানতেও নেই কারও আপত্তি..। কৃষ্ণচূড়া গাছের ঝরে পড়া লাল ফুলের আলতা পরে রাঙিয়ে থাকবে পায়ে হাঁটার রাস্তাটা; নববধূর মতো লাজুক ভঙ্গিতে।
এ সুযোগে পাড়ার শাকওয়ালা মাথায় ঝুড়ি নিয়ে হাঁক-ডাক শুরু করে দেবে- “আম লেবেন গো কাঁচা আম ছিল..!” আঁটি আম থেকে শুরু করে বিভিন্ন জাতের পাঁচমিশালি কাঁচা আম। আম্মা ডাক দিয়ে কেজি দশেক কিনবে আঁচার দেবার জন্য। কিছু চলে যাবে মসুরের পাতলা ডালের মধ্যে। কিছু আবার কোনো ভাবি কুচি করে কেটে মাখাবে মরিচের গুঁড়া, লবন আর কাঁচামরিচ দিয়ে। মুখ ভরে উঠবে লালায়..

কাঁচা আমের আসল ফ্লেভার পাওয়া যায় সস্তা, বুনো আঁটি আমের মধ্যে। আঁটির লাগোয়া আশপাশের শাঁসে থাকে মন ভুলানো সুবাস। ইচ্ছে হতো আঁটি শুদ্ধ কচকচ করে চিবিয়ে ফেলতে। সবাই হুমড়ি খেয়ে পড়বে। ঝাল আর টকের স্বর্গীয় মিশ্রণ। কাঁচা আমের মিষ্টি গন্ধের সাথে কোনোকিছু টেক্কা দিতে পারে না। চিবানোর পর মুখ জুড়ে ঝালের সাথে প্রশান্তিময় মিষ্টি অনুভূতিতে ছেয়ে যাবে..
আমার দেশটাই এমন মহান আর ঘটনাবহুল।

ঘটনাবহুলতার কারণেই হয়তো সাধারণ মানুষেরা বেঁচে থাকে। একঘেয়েমি জীবনের হাত থেকে রেহাই দিয়ে প্রকৃতি উপহার দেয় বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা। সোনার মানুষগুলোকে অনেক বাধা, যন্ত্রনা পেরিয়ে, বঞ্চনা এড়িয়ে জীবনযাপন করতে হয়। তেমন চাওয়া-পাওয়া নেই।
তারপর সন্ধ্যায় শুরু হবে আরো বিরাট সারপ্রাইজ; হিমশীতল বাতাস! অথচ সারাটা দিন কি অসহ্য গরম ছিল? সহজে কারেন্ট আসবে না। এ পরিবেশে আসলে কারেন্ট থাকাটা খুব বেমানান। রাত দশটার দিকে মোমবাতি জ্বালিয়ে গরম ভাতের সাথে ডিমভাজি আর দুপুরের বেঁচে যাওয়া কচুরলতি দিয়ে চিংড়িমাছ; দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ কম্বো। তার সাথে জুটবে আরেক সারপ্রাইজ; মায়ের হাতের গরম আলুভর্তা.. পাতলা ডালে কাগজী লেবু চিপে নিয়ে চলবে ভোজনের মহোৎসব!

মশারি খাটিয়ে শুয়ে পড়বো। আম্মা ঘরে ঘরে খোঁজ নেবে সবার গায়ে দেবার মতো যথেষ্ট কাঁথা কিংবা চাদর আছে কি না। তারপরও আরেক বিস্ময়; মাঝরাতে কারেন্ট চলে আসবে! বিশ্বাসই হবে না। সারারাত চলবে নিঃশব্দে বিদ্যুৎ চমকানো; শব্দবিহীন ঝলকানি! এটা আবার কেমন কথা?
বড়োই রহস্যময় আমার দেশের প্রকৃতি!
পদে পদে বিস্ময়!

অটোয়া, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles