6 C
Toronto
শুক্রবার, মার্চ ১৪, ২০২৫

যাত্রাবাড়ীতে ১১ দিন ধরে নিখোঁজ গৃহবধূ

যাত্রাবাড়ীতে ১১ দিন ধরে নিখোঁজ গৃহবধূ

রাজধানীর যাত্রাবাড়ী থানার দক্ষিণ যাত্রাবাড়ী টানপাড়া থেকে জোবায়দা ইসলাম জবা নামে এক গৃহবধূ বাসা থেকে নিখোঁজ হয়েছেন। এ ঘটনায় তার স্বামী জনি সরদার ১২ জুন যাত্রাবাড়ী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। তবে পুলিশ এখন পর্যন্ত জবার কোনো সন্ধান করতে পারেনি।

- Advertisement -

নিখোঁজ জোবায়দা ইসলাম জবার বোন পাপিয়া ইসলাম জুঁই বৃহস্পতিবার বলেন, আমার ১৯ বছরের ছোট বোনটা আজ ১১ দিন ধরে তার শশুড় বাড়ি থেকে নিখোঁজ। থানা পুলিশের কাছে যেতে যেতে আমি ক্লান্ত। আমার বাবা নেই। ২০১৫ সাল থেকে বাবা-মা আলাদা। বড় ভাইও নেই। মামা, নানা নেই। আমার মা এতিম। বাবার তরফ থেকে পাশে দারানোর মতো কেউ নেই। তাই ছোট থেকে আমার ভাইবোনগুলোকে আমি মানুষ করেছি।

পাপিয়া ইসলাম বলেন, বোনটাকে আমি এইচএসসি পাশ করাই। পরে তাকে পারিবারিকভাবে বিয়ে দেই। জবার স্বামী জনি যাত্রাবাড়ীর একটি বাসায় ভাড়া থাকেন। জনি গাড়ির ওয়ার্কশপে কাজ করেন। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে জনি সবার ছোট। বাকি ভাইয়েরা বিয়ে করে আলাদাভাবে থাকে। জনি আর তার মা একসঙ্গে থাকে। ছিমছাম পরিবার, শহরে থাকে, বোনের উপর সংসারের চাপ আসবে না, শুধু একটু রান্না আর ঘরের টুকটাক কাজ, কোন ননদ, ননাশ নেই,সব কিছু শুনে ভালো লাগে, তবে ছেলের বয়সটা বোনের থেকে একটু বেশি।

পাপিয়া বলেন, প্রথমে বোন এতো বড় কাউকে বিয়ে করতে চায়নি, কিন্তু আম্মুর কথা শুনে রাজি হয়। বোনের সঙ্গে সখ্যতা ভালোভাবে গড়ে উঠার জন্য আম্মুর ফোন দিয়ে তাদের কথা বলা শুরু হয় পারিবারিক সম্মিতিতেই। তাদের মধ্যে সম্পর্ক গভীর হলে ছেলের মা এক লাখ টাকা ও এক ভরি স্বর্ণালঙ্কার দিয়ে বিয়ের প্রস্তাব দেন। নিজের ভবিষ্যতের জন্য জমানো সামান্য কিছু টাকা রেখেছিলাম। তাও বোনের সুখের আশায় দিয়ে দিলাম। আর কয়েকটি দিন পর ঈদ। অথচ আমাদের ঘরটা শ্মশান হয়ে আছে।

নিখোঁজ জবার বড়বোন বলেন, আজ ১২ দিনে আমার মা, আমি আর ছোট ভাই ১১ লোকমা ভাত ও খেতে পারিনি। তার শ্বশুর বাড়ি থেকে কোনো পদক্ষেপ নেই। শুধু সেদিন রাতে একটা সাদা কাগজে অভিযোগ লিখিয়েছে, যার কোন আইনগত ভিত্তি নেই। থানা পুলিশ ভিত্তির জন্য আমি জিডি করতে গেলে থানার লোক জানায়, তার স্বামী একটি জিডি করলে ভালো হয়। খুব অনুরোধ করে, পায়ে পরে কাল তার স্বামীকে দিয়ে একটা জিডি করাই। এখন এই জিডিই শুধু আছে আমার কাছে।

‘আজ পুলিশ, আত্মীয় স্বজন, তার স্বামী, শ্বশুর বাড়ির সবাই প্রমাণ করতে ব্যস্ত, নিশ্চয়ই আমার বোন কারো সঙ্গে চলে গেছে। তার চরিত্র খারাপ বানাতে সবার আজ কত চেষ্টা। আমি শুধু চুপচাপ দেখি, আর চোখের পানি ফেলি, আমার কলিজাটা যদি এতো খারাপ হতো, আমারটা আমাকে দিয়ে দিতি। আমি ১৮টা বছর আগলে রেখেছি, বাবার মতো দায়িত্ব নিয়ে মানুষ করেছি, আমার কাছে কখনো সে বোঝা হতো না। সে তো আমার কলিজা, আমার লক্ষ্মী ছিল রে। আমি শুধু চাই আমার বোনটা ফিরে আসুক।’ বলেন পাপিয়া।

সাধারণ ডায়েরিতে নিখোঁজ জবার স্বামী জনি বলেছেন, গত ৪ জুন দুপুর ১২টার দিকে যাত্রাবাড়ী থানা এলাকার বাসা থেকে জবা অজ্ঞাত কারণে আমার অজ্ঞাতসারে তার পরিধেয় জামা-কাপড় নিয়ে অজ্ঞাত স্থানে চলে যায়। আমি সম্ভাব্য সব জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও তার কোনো সন্ধান পাইনি।

সাধারণ ডায়েরিটি তদন্ত করছেন যাত্রাবাড়ী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) মো. মোস্তাফিজার রহমান। তিনি বলেন, নিখোঁজ জবার স্বামী একটি জিডি করেছেন। তিনি আমার সঙ্গে এখনও পর্যন্ত কোনো যোগাযোগ করেননি। আমি তাকে ফোন করলে তিনি নানা ধরনের টালবাহানা করছেন। এখন তার স্ত্রী নিখোঁজ হয়েছেন, কিন্তু তার কোনো আগ্রহ নেই। তাহলে আমি কী করতে পারি?

তদন্ত কর্মকর্তা বলেন, গতকাল বুধবার নিখোঁজ জবার মা, বোন এবং দুলাভাই প্রায় দুই ঘণ্টা থানায় এসে অপেক্ষা করে চলে গেছেন। আমি এখনও পর্যন্ত জবা যে বাসা থেকে নিখোঁজ হয়েছে সেই বাসায়ও যেতে পারিনি জনির অসহযোগিতার কারণে।

এ ব্যাপারে নিখোঁজ জবার স্বামী জনি সরদার বলেন, ‘সে (জবা) একটি মোবাইল ফোন ব্যবহার করতো। ওই ফোনে সে একাধিক ছেলের সঙ্গে সম্পর্ক করেছে। এখন কী হয়েছ, কোথায় গেছে সেটা আমি বলতে পারবো না। আমি গত ১১ দিন অপেক্ষা করে আজকে বৃহস্পতিবার অফিসে যোগাদান করেছি। কারণ অফিস না করলে আমার ওষুধের পয়সা জোটে না। তাই আমি কাজে যোগ দিয়েছি।’

সূত্র : ঢাকাটাইমস

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles