9.9 C
Toronto
রবিবার, মার্চ ১৬, ২০২৫

টাইটানিক দেখতে যাওয়া ৫ আরোহী সম্পর্কে যা জানা গেল

টাইটানিক দেখতে যাওয়া ৫ আরোহী সম্পর্কে যা জানা গেল
শাহজাদা সুলেমান দাউদ ও পল অঁরি নারজিওলেট

ঐতিহাসিক জাহাজ টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখতে যাওয়া টাইটান সাবমার্সিবল আটলান্টিক সাগরের গভীরে এখনও নিঁখোজ রয়েছে, এর ভেতরে জরুরি অক্সিজেনের মজুদ বৃহস্পতিবার (২২ জুন) ব্রিটিশ সময় বেলা ১১টায় শেষ হওয়ার কথা। তাই উদ্ধারকাজে নিয়োজিত দলগুলোর এখন সময়ের সাথে লড়াই চলছে।

বৃহস্পতিবার দিনটিকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। সমুদ্রের তলদেশে যে পরিবেশে টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ রয়েছে সেটাকে হিমশীতল তাপমাত্রা ও গভীর অন্ধকারের জন্য ‘মিডনাইট জোন’ বলা হয়। অর্থাৎ বোঝাই যাচ্ছে বেশ একটা কঠিন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে হারিয়ে যাওয়া ডুবোযানটি উদ্ধারকাজে। এই ডুবোযানে যে পাঁচজন আরোহী ছিল তারা কারা?

- Advertisement -

হ্যামিশ হার্ডিং

৫৮ বছর বয়সী এই ব্রিটিশ অ্যাডভেঞ্চারপ্রেমী অ্যাকশন অ্যাভিয়েশন নামে দুবাই ভিত্তিক একটি বেসরকারি জেট কোম্পানি চালান, বেশ কয়েকটি অভিযান চালিয়েছেন তিনি ইতোমধ্যে। হ্যামিশ হার্ডিং বেশ কবার দক্ষিণ মেরু ঘুরে এসেছেন, একবার তার সঙ্গী ছিলেন সাবেক নভোচারী বাজ অলড্রিন।

মার্কিন ধনকুবের জেফ বেজোসের যাত্রীবাহী মহাকাশযান ব্লু অরিজিনে চড়ে ২০২২ সালে তিনি মহাকাশেও ঘুরে এসেছেন। হ্যামিশ হার্ডিংয়ের নামের পাশে তিনটি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড রয়েছে, যার মধ্যে একটি পৃথিবীর গভীরতম স্থান হিসেবে পরিচিত মারিয়ানা ট্রেঞ্চে ডাইভ দিয়ে সবচেয়ে বেশি সময় থাকা।

২০২২ সালে বিজনেস এভিয়েশন ম্যাগাজিনে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, তার বেড়ে ওঠা হংকংয়ে, আশির দশকে ক্যামব্রিজে অধ্যয়নের সময় তিনি বিমান চালনায় দক্ষতা অর্জন করেন। ব্যাংকিং সফটওয়ারে অর্থ উপার্জন করে নিজের বিমান তৈরির ফার্ম স্থাপন করেন হ্যামিশ হার্ডিং।

টাইটানিকের জন্য এই ডুবোযান যাত্রা তার আগেই করার কথা ছিল কিন্তু ২০২২ সালের জুনে এই সাবমার্সিবলটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল, সেই ঘটনায় কেউ আহত হননি বলে জানান তিনি।

নিজের এ ধরনের অভিযানের ক্ষুধা সম্পর্কে তিনি বলেন, আমার মতে এগুলো হিসাব-নিকাশ করা ঝুঁকি এবং শুরুর আগেই আমরা ধারণা পাই এসব নিয়ে।

১৮ জুন নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া একটি পোস্টে তিনি বলেন, যেখান থেকে এই ডুবোযানের যাত্রা শুরু কানাডার নিউফাউন্ডল্যান্ডের খারাপ আবহাওয়ার কারণে ২০২৩ সালের প্রথম এবং এটাই একমাত্র মিশন হতে যাচ্ছে। তার সৎ ছেলে ব্রায়ান জ্যাজ একটি ফেসবুক পোস্টে লেখেন তার সৎ বাবা একটি ‘সাবমেরিনে হারিয়ে গেছেন’, পরে অবশ্য সৎ ছেলের পোস্টটি খুঁজে পাওয়া যায়নি।

হ্যামিশ হার্ডিংয়ের বন্ধু নৌবিজ্ঞানী ও অভিযানের নেতা ডেভিড মেয়ারন্স হার্ডিংকে ‘খুবই মনোহর ব্যক্তি’ বলে আখ্যা দেন, যিনি ‘চরম অভিযান’ করতে ভালোবাসতেন।

শাহজাদা ও সুলেমান দাউদ

এই ডুবোযানে ছিলেন ৪৮ বছর বয়সী ব্রিটিশ ব্যবসায়ী শাহজাদা দাউদ ও তার ১৯ বছর বয়সী ছেলে সুলেমান দাউদ, পাকিস্তানের সবচেয়ে ধনী পরিবারগুলোর একটি এই দাউদ পরিবার। তার স্ত্রী ক্রিস্টিন এবং আরেক সন্তান আলিনার সাথে তিনি লন্ডনে থাকেন, তবে ডাইভের আগের এক মাস ধরে পরিবারটি কানাডায় অবস্থান করছিল।

শাহজাদা পাকিস্তানের বৃহৎ শিল্প প্রতিষ্ঠান এনগ্রো কর্পোরেশনের ভাইস-চেয়ারম্যান, এটি একটি বড় সার ফার্ম। পরিবারের দাউদ ফাউন্ডেশনের সাথে কাজ করেন, একই সাথে এসইটিআই নামের- একটি ক্যালিফোর্নিয়া-ভিত্তিক গবেষণা সংস্থার সাথে কাজ করেন যা বহির্ভূত প্রাণের সন্ধান করে।

শাহজাদা রাজা চার্লস দ্বারা প্রতিষ্ঠিত দুটি দাতব্য সংস্থাব্রিটিশ এশিয়ান ট্রাস্ট এবং প্রিন্স ট্রাস্ট ইন্টারন্যাশনালেও সাহায্য করেন। ব্রিটিশ রাজপরিবারের এক মুখপাত্র বলেছেন রাজা উদ্ধার অভিযান সম্পর্কে খোঁজ নিতে বলেছেন, যারা ডুবোযানে ছিলেন তাদের পরিবারের জন্য সহমর্মিতা ও প্রার্থনা জ্ঞাপন করেছেন।

শাহজাদার পরিবার একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে শাহজাদা বিভিন্ন প্রাকৃতিক জায়গা নিয়ে আগ্রহী ছিলেন এবং এর আগে তিনি জাতিসংঘ ও অক্সফোর্ড ইউনিয়নে বক্তৃতা দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের ফিলাডেলফিয়া ও ইংল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অফ বাকিংহ্যামে তিনি পড়াশোনা করেন, যেখানে ১৯৯৮ সালে তিনি গ্র্যাজুয়েশন অর্জন করেছিলেন।

পল-অঁরি নারজিওলেট

৭৭ বছর বয়সী এই ফরাসী সাবেক ডাইভারও ছিলেন এই ডুবোযানে। তিনি মিস্টার টাইটানিক নামেও পরিচিত। তিনি টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের কাছে সবচেয়ে বেশি সময় কাটিয়েছেন, এই ধ্বংসাবশেষ পাওয়ার দুই বছরের মাথায় ১৯৮৭ সালে তিনি প্রথম অভিযানে গিয়েছিলেন।

টাইটানিকের অনেক ধ্বংসাবশেষের মধ্যে বেশিরভাগের উদ্ধারকাজই তিনি তদারকি করেন, তিনি টাইটানিক ধ্বংসাবশেষের তত্ত্বাবধায়ক পানির তলদেশ নিয়ে গবেষণা করা কোম্পানির ডিরেক্টরও। তারই অধীনে টাইটানিকের ‘বিগ পিস’ খ্যাত ২০ টন ওজনের আকৃতি উদ্ধার হয়েছিল।

পরিবারের মুখপাত্র ম্যাথিউ জোহান বলেন, তিনি আশা করেন নারজিওলেটের অভিজ্ঞতা এবং সামরিক কর্মজীবন ডুবোযানে থাকা অন্যদের আশ্বস্ত করবে, যদিও উদ্ধার অপারেশনের ফলাফল তার উপর নির্ভর করে না।

স্টকটন রাশ

তিনি এই টাইটানিক সাব বা ডুবোযান কোম্পানি ওশেনগেটের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, তার বয়স ৬১ বছর। তিনি একজন অভিজ্ঞ প্রকৌশলী হিসেবে পরিচিত যিনি আগেও একটি পরীক্ষামূলক বিমান ডিজাইন করেছেন এবং অন্যান্য ছোট ডুবোজাহাজ নিয়ে কাজ করেছেন।

গ্রাহকদের গভীর সমুদ্রের অভিজ্ঞতা দেওয়ার জন্য ২০০৯ সালে তিনি এই কোম্পানিটি প্রতিষ্ঠা করেন। টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষ দেখার প্রস্তাব দিয়ে এই কোম্পানির বিজ্ঞাপন ২০২১ সালে দুনিয়াজুড়ে সাড়া ফেলেছিল। আড়াই লাখ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় আড়াই কোটিরও বেশি, এই পরিমাণ অর্থ দিয়ে কেউ টাইটানিকের ধ্বংসাবশেষের কাছে গিয়ে দেখতে পারবে বলে বিজ্ঞাপনটিতে বলা হয়েছিল।

অংশগ্রহণকারীরা একটি বড় জাহাজে প্রায় ৩৭০ মাইল ভ্রমণ করে ধ্বংসস্তূপের স্থানের উপরের এলাকায় পৌঁছানোর পর, টাইটান নামে একটি ট্রাক-আকারের ডুবোযান তাদের টাইটানিকের কাছে আট ঘণ্টা ডুব দেয়। ২০২২ সালে স্টকটন রাশ নিউইয়র্ক টাইমসে একটি সাক্ষাৎকারে তিনি এই বড় অঙ্কের কারণ ব্যাখ্যা করেন, ‘এটা মহাকাশে যাওয়ার তুলনায় ভগ্নাংশ খরচ, সেখানে জাহাজ নিয়ে যাওয়া আমাদের জন্য অনেক খরুচে ব্যাপার’।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles