6 C
Toronto
শুক্রবার, মার্চ ১৪, ২০২৫

একই সঙ্গে যেভাবে দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর করা হয়

একই সঙ্গে যেভাবে দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর করা হয়
মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর আলম
একই সঙ্গে যেভাবে দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর করা হয়
মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর আলম

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলায় এক মঞ্চে একই সঙ্গে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে। রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে বৃহস্পতিবার রাত ১০টা ১ মিনিট থেকে মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন (৫৫) ও জাহাঙ্গীর আলমকে (৩৫) ৩০ মিনিট দড়িতে ঝুলিয়ে রাখা হয়। পরে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ পরিবারের কাছে পাঠানো হয়।

এর আগে রাত ৯টার দিকে ফাঁসি কার্যকরের বিষয়টি দুই আসামিকে জানিয়ে দেয় কারা কর্তৃপক্ষ। এরপর তাদের গোসল করিয়ে খাবারের বিষয়ে শেষ ইচ্ছা আছে কিনা- জানতে চাওয়া হয়। পরে কারা মসজিদের ইমাম মাওলানা মোজাহিদুল ইসলাম তাদের তওবা পড়ান। এরপর ১০টার আগেই তাদের ফাঁসির মঞ্চের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়।

- Advertisement -

এদিকে আইনি সব প্রক্রিয়া শেষ হওয়ায় মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীর আলম কারা কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেন। কিন্তু গত ২৬ জুন রাষ্ট্রপতি তা নাকচ করে দেন। প্রাণভিক্ষার আবেদনের চিঠি গত ৫ জুলাই রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে পৌঁছায়। তখন থেকে দুই আসামির ফাঁসি কার্যকরের প্রস্তুতি শুরু হয়। তৈরি হয় ফাঁসির মঞ্চ।

সর্বশেষ গত ১৭ জুলাই ফাঁসি স্থগিত চেয়ে আসামিদের পক্ষ থেকে করা একটি রিট খারিজ করেন হাইকোর্ট। এই খারিজের বিরুদ্ধে আপিল করেন দুই আসামির পরিবার। গত ২৫ জুলাই বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম সর্বশেষ আবেদনটিও খারিজ করে দেন। ফলে ফাঁসি কার্যকরের ক্ষেত্রে সব প্রতিবন্ধকতা দূর হয়।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর থেকে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারের অভ্যন্তরে মহিউদ্দিন ও জাহাঙ্গীরের ফাঁসি কার্যকরের চূড়ান্ত প্রস্তুতি শুরু হয়। রাত ৯টার পর একে একে কারাগারে আসেন ডিআইজি প্রিজন্স কামাল হোসেন, রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) সাবিহা সুলতানা, রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. সাঈদ মোহাম্মদ ফারুক এবং রাজশাহী মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা।

দুই আসামির ফাঁসি কার্যকর উপলক্ষ্যে বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার এলাকায় রাজশাহী মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। সন্ধ্যার পর থেকে কারাগার এলাকায় অবাধ চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

কারাগারের একটি সূত্র জানায়, কারা কর্তৃপক্ষের নির্দেশে গণপূর্ত অধিদপ্তর অন্তত ১৫ দিন আগে আগে ফাঁসির মঞ্চ প্রস্তুতির কাজ শুরু করে। মৃত্যুকূপটি দীর্ঘদিনের পুরনো। তাই তারা সংস্কার করে। কারাগারের দক্ষিণ দিকের দেওয়ালের পাশে উন্মুক্ত ফাঁসির মঞ্চটি।

এছাড়াও যে দড়িতে ঝুলানো হয় সেটি আসামিদের তিনগুণ ওজনের বস্তু বেঁধে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ফাঁসির দড়িটিও চূড়ান্ত করা হয়। প্রথমে ১৭ জন কয়েদিকে জল্লাদের দায়িত্ব পালনের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। তবে কারা কর্তৃপক্ষের বিবেচনায় আটজনকে চূড়ান্ত করা হয়। এরা হলেন- আলমগীর, নাজমুল, সুমন, উজ্জ্বল, নাসির, মজনু, আশরাফুল ও রিয়াজুল। এদের মধ্যে প্রধান জল্লাদ আলমগীর হোসেন। তিনি একটি হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত। আলমগীর এর আগেও জল্লাদের দায়িত্ব পালন করেছেন। জল্লাদ দলের দুইজন নতুন সদস্য ছিলেন।

জানা গেছে, ২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের পশ্চিম আবাসিক কোয়ার্টার থেকে নিখোঁজ হন অধ্যাপক সৈয়দ তাহের আহমেদ। বাসাটিতে তিনি একাই থাকতেন। কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীর আলম তার দেখাশোনা করতেন। ওই বছরের ২ ফেব্রুয়ারি বাসাটির পেছনের ম্যানহোল থেকে উদ্ধার করা হয় অধ্যাপক তাহের আহমেদের গলিত মরদেহ।

ওই বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি তার ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ রাজশাহীর মতিহার থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। অধ্যাপক তাহের আহমেদের সহধর্মিণী সুলতানা আহমেদ ও মেয়ে আইনজীবী শেগুফতা তাবাসসুম আহমেদ ঢাকার ওয়ারীতে বসবাস করেন।

এদিকে অধ্যাপক তাহেরের করা একটি জিডির সূত্র ধরে বিভাগের শিক্ষক মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও তৎকালীন রাবি শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি মাহবুব আলম সালেহী বাসার কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীর আলমসহ আটজনকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ৫ ফেব্রুয়ারি মামলায় গ্রেফতারকৃত তিনজন আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন আদালতে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গত ২ মার্চ এই দুই আসামির ফাঁসি এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত এক আসামির রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন খারিজ করেন সুপ্রিমকোর্ট। নিম্ন আদালতে দুজনের মৃত্যুদণ্ডের যে রায় দেওয়া হয় তাই বহাল থাকে আপিলে, খারিজ হয় রিভিউ আবেদনও। ফলে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা ছাড়া আর কোনো পথই খোলা ছিল না তাদের।

জানা গেছে, এরপরও অধ্যাপক তাহের হত্যা মামলায় দণ্ডিত এই দুজনের ফাঁসি কার্যকর স্থগিত চেয়ে হাইকোর্টে গত ৭ মে ফের রিট আবেদন করেন তাদের স্বজনরা। যদিও উত্থাপিত হয়নি মর্মে পরবর্তীতে সেই আবেদনও খারিজ করে দেন বিচারপতি মো. জাফর আহমেদ ও মো. বশির উল্ল্যার হাইকোর্ট বেঞ্চ। হাইকোর্ট রিট আবেদনটি করেছিলেন মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের স্ত্রী ইসরাত রহমান এবং ফাঁসির দণ্ড পাওয়া জাহাঙ্গীর আলমের ভাই মিজানুর রহমান।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles