জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে ভাঙতে শুরু করেছে অ্যান্টার্কটিকার বরফ। এতে করে হুমকির মুখে পড়েছে সেখানকার জীববৈচিত্র। ইতোমধ্যে ১০ হাজার পেঙ্গুইনের মৃত্যু ঘটেছে সেখানে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদন থেকে এই তথ্য জানা যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, পানিতে সাঁতারোপযোগী জলরোধী পালক গজানোর আগেই পেঙ্গুইনের ছোট ছোট ছানাগুলোর পায়ের নিচের বরফ গলে তা ভাঙতে শুরু করে। ফলে হয় পানিতে ডুবে কিংবা বরফ-ঠাণ্ডা পানিতে জমে ছানাগুলো মারা যায়।
ঘটনাটি ঘটেছে ২০২২ সালের অ্যান্টার্কটিকার পশ্চিমে, বেলিংশাউসেন সাগরের সম্মুখভাগে। স্যাটেলাইটের ছবিতে সে দৃশ্য ধরা পড়েছে।
বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, বিশ্ব উষ্ণায়নের এই যুগে বরফ ক্রমাগত গলতে থাকায় চলতি শতকের শেষ নাগাদ ৯০ শতাংশেরও বেশি এম্পেরর পেঙ্গুইন কলোনি বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
এ বিষয়ে ব্রিটিশ অ্যান্টার্কটিক সার্ভের (বিএএস) ড. পিটার ফ্রেটওয়েল বলেন, এম্পেরর প্রজাতির পেঙ্গুইন তাদের প্রজনন চক্রের জন্য সাগরের বরফের ওপর নির্ভরশীল; ছানাদের বিকাশে এই বরফ তাদের জন্য একটি স্থায়ী প্ল্যাটফর্ম। কিন্তু সেই বরফই যদি যথেষ্ট এলাকাজুড়ে না থাকে, কিংবা দ্রুত গলে যায়- তাহলে এই পাখিরা বিপদে পড়ে যাবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা বিশ্ব উষ্ণায়নের জন্য দায়ী কার্বন নিঃসরণ কমিয়ে আনতে পারলে- আশা আছে। আর যদি তা না পারি, তাহলে এই আইকনিক, সুন্দর পাখিগুলোকে বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তেই ঠেলে দেব আমরা।
ড. ফ্রেটওয়েল এবং তার সহকর্মীরা ‘কমিউনিকেশনস আর্থ অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট’ জার্নালে ২০২২ সালে পেঙ্গুইনের ওই মৃত্যু নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছেন। গবেষণায় তারা বেলিংশাউসেন সাগরের কাছে পাঁচটি কলোনি ট্র্যাক করেছেন। এগুলো হল- রথসচাইল্ড দ্বীপ, ভার্দি ইনলেট, স্মাইলি দ্বীপ, ব্রায়ান উপদ্বীপ এবং ফ্রগনার পয়েন্ট।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সেন্টিনেল-২ স্যাটেলাইট ব্যবহার করে, তারা পেঙ্গুইনের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করতে সক্ষম হন।
প্রাপ্তবয়স্ক পেঙ্গুইনগুলো মার্চ মাসের দিকে পানিতে ঝাঁপ দেয়, ডিম পাড়ে এমং তা দেয়। পরের মাস থেকে তারা বাচ্চাদের বড় করতে শুরু করে। ডিসেম্বর বা জানুয়ারির কাছাকাছি সময়ে সাধারণত নতুন পাখিরা সমুদ্রে চলে যায়। কিন্তু গবেষকরা দেখতে পেয়েছেন, সাঁতারের জন্য ছানাগুলোর প্রয়োজনীয় পালক গজানোর আগে নভেম্বরেই সামুদ্রিক বরফের চাঁই ভাঙতে শুরু করেছিল।
ফলে পাঁচটি কলোনির চারটিতেই প্রজনন ব্যর্থ হয়; শুধুমাত্র উত্তরের রথসচাইল্ড দ্বীপ কিছুটা সফল হয়েছে।
২০১৬ সালের গ্রীষ্ম থেকেই অ্যান্টার্কটিকার বরফ প্রবলভাবে গলে যাচ্ছে। মহাদেশজুড়ে বরফজমা পানির মোট এলাকা হ্রাসের নতুন রেকর্ড হয়েছে। ২০২১-২২ এবং ২০২২-২৩ দুই গ্রীষ্মে রেকর্ড হারে বরফ গলেছে; বলা যায়, বেলিংশাউসেন সাগর প্রায় বরফের আবরণ বিহীন হয়ে পড়েছিল।
পরিস্থিতি বদলে যাওয়ার কুফল এম্পেরর পেঙ্গুইনরা ভোগ করছে বলে জানান ফ্রেটওয়েল ও তার সহকর্মীরা। ২০১৮ সাল থেকে ২০২২ সালের মধ্যে এম্পেরর পেঙ্গুইনের ৬০ টিরও বেশি পরিচিত কলোনির এক তৃতীয়াংশই বরফ গলার কারণে দুর্ভোগে পড়েছে।
অন্যদিকে পৃথিবীর আরেক প্রান্ত, আর্কটিক অঞ্চলেও দশকব্যাপী সামুদ্রিক বরফ ধীরে ধীরে গলছে।