আপনার শিক্ষা ও জ্ঞান আমাকে আকর্ষণ করেছিল। বহু বছর আগে আমাদের শহরে আপনার আগমনে তাই ছুটে গিয়েছিলাম। একটা বইও কিনেছিলাম। লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে অটোগ্রাফ নিতে পেরে অনেক আনন্দ লেগেছিল।
সত্তর দশকে আপনার নামে অনেক গল্প শুনেছি। সেসব গল্পের ফলাফল আমার মধ্যে আশা জাগিয়েছিল। একটি গল্প ছিল, আপনি একদিন পুকুরের পাড়ে বসেছিলেন। হঠাৎ কি মনে করে হাতের কাছে থাকা সবগুলো বই পানিতে ছুঁড়ে মেরে বলেছিলেন, যে বই ধনীকে আরো ধনী করার সূত্র শিক্ষা দেয় এবং যে বিদ্যা দেশের মানুষের ভাগ্য বদলে সাহায্য করে না। সে শিক্ষা দিয়ে কী করবো? এরপর গড়লেন গ্রামীণ ব্যাংক। যেখানে গরীব মানুষ ঋণ নিতো পুঁজি ছাড়া।
আপনার শিক্ষা ও জ্ঞান বলতে এটাকেই বুঝিয়েছি। মোটা মোটা বই যদি অভাবগ্রস্ত মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনে সহায়ক না হয় তবে সেগুলো ছুঁড়ে মারার মানসিকতা, এটা অনেক বড় শিক্ষা। একমাত্র শিক্ষাই পারে অপর শিক্ষাকে অস্বীকার করতে। তাই আমি মুগ্ধ হয়েছিলাম। আপনাকে বিশ্বাস করেছিলাম। আপনার নামে শোনা গল্পের সত্য মিথ্যা যাচাই করার প্রয়োজন মনে করিনি। কেননা গল্পটা ভালো ছিল। গরীব দুঃখী মানুষের দিকে হাত বাড়ানোর ইশারা ছিল।
কিন্তু বয়সের এই মোড়ে এসে আপনার একি পরিবর্তন হলো? নিজের শক্তি ও যোগ্যতায় যিনি লড়াই করতে পারেন না সে অন্য কাউকে দাঁড় করাবে কীভাবে? তদুপরি নিজ দেশ ও জনগণকে যিনি অগণ্য মনে করেন তিনি তো আর আকর্ষণীয় থাকেন না। থাকেন না অনুকরণীয়। আমার বিশ্বাস, আপনি যেভাবে বলবেন আমার গরীব দুঃখী মানুষ। সেভাবে বিদেশী কেউ বলবে না। বাংলার মাটিতে পা ফেলার ঋণ ওদের নেই। কিন্তু আপনার আছে।
দেশের অসহায় মানুষ প্রতিনিয়ত অপেক্ষায় থাকে একজন অসাধারণ মানুষ এসে নিজের কথা না বলে তাদের কথা বলবে।
শুধুই তাদের কথা।
তাদের জন্য কথা।
ওদের ধারণা জনগণের নেতা হওয়া অনেক গর্বের। নেতাদের নেতা হওয়ায় কোন গৌরব নেই।
বিদেশী শক্তি বনাম দেশ ভক্তি এই দ্বন্দ্বে দেশভক্তি জয়ী হয়েছে সর্বকালে।
মানুষ বদলায়। সেই বদলে যাওয়া দিনের অপেক্ষায় রইলাম।
টরন্টো, কানাডা