14.5 C
Toronto
শনিবার, এপ্রিল ১৯, ২০২৫

সেদিন ওরা এসেছিলো গোপনে

সেদিন ওরা এসেছিলো গোপনে - the Bengali Times
তাসরীনা শিখা

আজ আমাদের মেয়ে তিন্নির জন্মদিন পালন করলাম একদমই ঘরোয়া ভাবে। নির্ধারিত সময়ের দু দিন আগেই করতে হোল জন্মদিন। মেয়ের জন্মদিন ৫ই সেপ্টেম্বর কিন্তু ওরা সে সময় বাইরে যাবে তাই আমি ৩ তারিখ একটা সারপ্রাইজ দেবো ভেবে নিলাম। আমি যে ওকে সারপ্রাইজ দেবো ও একেবারেই বুঝতে পারেনি। ছেলে, ছেলের বউকেও আসতে বললাম।এমন কি অদের মনেও কোন সন্দেহ হয়নি। জানি শুধু আমি আর আমার ৮ বছরের নাতনী আরিয়ানা। আমি আর আমার নাতনী আরিয়ানা মিলে অনেক মজা করে আনন্দ করে আমরা পালন করলাম মেয়ের সারপ্রাইজ জন্মদিন পার্টি। মেয়েও খুশী আমরাও খুশী ।

খাওয়া দাওয়া শেষ করে মোটা মোটি গুছিয়ে সবাই মিলে বসলাম গল্প করতে। নানা ধরনের গল্প হাসা হাসি চলছিলো নানা বিষয়ে। হঠাৎ করে ঝন ঝন করে বিশাল শব্দ করে একটা কাচ ভাঙ্গার শব্দ হোল । কি হোল কি হোল বলে আমরা সবাই উঠে দাঁড়ালাম । অবাক হয়ে দেখলাম একটা বড় সারভিং এর বাটি কিচেন কাউন্টারের মাঝ খান থেকে পড়ে গেছে। কি করে মাঝ খান থেকে বাটিটা পড়লো সে গবেষণা চললো কয়েক মিনিট । ওখানে তো কেউ নেই আমরা তো সবাই এখানে। যাহোক আমার ছেলে আর মেয়ের জামাই মিলে সে কাচ ভাঙ্গা পরিস্কার করলো । তারপর আবার সবাই যোগ দিলো গল্পে। কিছুক্ষণ পর আবার মনে হোল রান্নাঘরের বেসিনের কল ছেড়ে কেউ কাজ করছে কলকল পানির শব্দ। আবার আমরা পেছন ফিরে তাকালাম , না কেউ তো নেই। তাহলে? তাহলে এই পানির পড়ার শব্দ সেখান থেকে এলো কি করে? আমার আইন পেশাতে প্রতিষ্ঠিত মেয়ে ভয়ে সোফাতে পা তুলে বসে বলতে লাগলো, মাম সূরা বাকেরা সিডি তে লাগিয়ে দাও।তাহলে ভুত জীন চলে যাবে। আমার মেয়ের ভুত জীনের ভয় ছোট বেলা থেকে। ছোট বেলা যখন বাংলাদেশে বেড়াতে যেতো তখন কাজিনদের কাছ থেকে এই ভয়গুলো সংগ্রহ করে আনতো । এখন পর্যন্ত তার এই সংগ্রহের ভাণ্ডার শেষ হয়নি। আমার প্রতিষ্ঠিত আইনজীবী মেয়েটি এখনো ভুত জীনের ভয়ে কাঁপে । মেয়ের মনটা হালকা করার জন্য বললাম তিন্নি ( আমার মেয়ের নাম ) তুমি এমন একজন শিক্ষিত মেয়ে হয়ে কেনো ভুত জীন বিশ্বাস করো এবং ভয় পাও? তাছাড়া আমার সাথে তো সব সময়ই জীন চলাফেরা করে। কই আমিতো ভয় পাই না। বরং ওদের সারা না পেলে আমি ভয় পাই , মনে হয় ওরা কি আমাকে পাহারা দেবার কাজটা ছেড়ে দিলো ?

- Advertisement -

আমার কথায় মেয়ে হেসে ফেললো- মাম তুমি যে কি সব অদ্ভুত কথা বলো না। ভুত জীন আসে তোমাকে পাহারা দিতে তাই না? আমার হঠাৎ করে মনে হলো আসলেইতো সেতো আসে না বহু মাস যে কিনা দু’একদিন পর পর এসেই স্লাইড শো এর মতো একঝলক এসে আমার চোখের সামনে দিয়ে ঘুরে যেতো । খুব চেনা মুখ তবু তাকে চিনতাম না। বেশ কয়েক মাস আসে না বলেই কি আমার সময়টা ভালো যাচ্ছে না। নানা কারনে মানুষিক অশান্তি হচ্ছে। তাহলে সত্যি কি সে আমাকে নিরাপদ রাখতো?

আমাকে চুপ করে থাকতে দেখে মেয়ে জিজ্ঞাস করলো , মাম তাহলে তুমিও কি ভয় পাচ্ছ যা কিছু হলো এসব চিন্তা করে? এবার আমিও হেসে ফেলে বললাম আরে না না ভুত জীন আমি ভয় পাই না। আমি ভয় পাই মানুষকে । এরা যে বড় ভয়ঙ্কর। মানুষ বড় স্বার্থপর , বড় লোভী ।

কি আশ্চর্য আজকে বসেছিলাম একটা রোমান্টিক গল্প লিখতে তা না করে আমি বসে গেলাম ভৌতিক গল্প শোনাতে । আজ আর হবে না অন্য গল্প হবে না। আরেকদিন লিখবো অন্য একটি গল্প।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles