-1.5 C
Toronto
সোমবার, মার্চ ১৭, ২০২৫

কুইবেক থেকে এসে এক ব্যক্তি সারাদিন অটোয়া পার্লামেন্ট ভবনের সামনে বসে আছে

কুইবেক থেকে এসে এক ব্যক্তি সারাদিন অটোয়া পার্লামেন্ট ভবনের সামনে বসে আছে
ভলাদিমির জেলেনস্কি আর তার বউ ওলেনা জেলেনস্কা এখন অটোয়াতে

ভলাদিমির জেলেনস্কি আর তার বউ ওলেনা জেলেনস্কা এখন অটোয়াতে। ভদ্রলোক পার্লামেন্টে ভাষণও দিছে। তাঁকে নিয়ে রাতে অনেক বড়ো অনুষ্ঠানও হয়ে গেলো। নিউজে দেখালো কুইবেক থেকে এসে এক ব্যক্তি সারাদিন অটোয়া পার্লামেন্ট ভবনের সামনে বসে আছে তাঁকে এক নজর দেখার জন্য। আর আমি ঘরে বসে আঙ্গুল চুষছি!

ছিঃ!
.
নিজেকে ধিক্কার দিলাম। আমার দেখা করতে যাওয়া উচিত ছিল ভদ্রলোকের সাথে।
টিভির সামনে থেকে উঠে গিয়ে ডাইনিং টেবিলে রাখা গত রমজানের বেঁচে যাওয়া প্রায় আধা কেজি সৌদিআরবের খেজুর থেকে চার-পাঁচটা তুলে নিয়ে ধুয়ে আনলাম। ওগুলো না খাওয়ার কারণ বালিতে ভরা। বেশি ন্যাচারাল রাখতে গিয়ে এই দশা। বালির কণাগুলো আবার বেশ দানাদার!
.
একটা বুদ্ধি আবিষ্কার করছি।
পাঠকগণ, কোনকিছুতে বালি পড়লে ফেলে না দিয়ে আমার সিস্টেম ফলো করতে পারেন। জিনিস নষ্ট করা ঠিক না। যেমন, অনেক সময় শুঁটকি মাছে সমুদ্রের বালি থাকে। রান্নার পরে খেতে বসলে টের পাওয়া যায়। বালিযুক্ত খাবার খাওয়ার সিস্টেম হলো, ওগুলা ৮৫% করে চিবাবেন। অর্থাৎ চিবানোর সময় নিচের চোঁয়ালের দাঁতগুলো ওপরের চোঁয়ালের দাঁতগুলোর সংস্পর্শে আসার ঠিক আগে মুহূর্তে স্টপ করে দেবেন। উপরের পাটির দাঁত যেন নিচের পার্টির দাঁত না ছোঁয়। ব্যাস, এভাবে অসম্পূর্ণভাবে চিবালে বালি টেরই পাবেন না।
সময় যদিও একটু বেশি লাগবে, এই যা!
.
খেজুরগুলো চিবিয়ে নিয়ে বিচিগুলো ফেলতে যাবার সময় বিত্ত-দখিনার স্কুলের টিফিন বাক্স খুলে তাদের এঁটো বক্সগুলো নিয়ে বেসিনের পাশে রাখি। বাহ্, আজ বাচ্চারা খেয়েছে ভালো। তবে মেয়েটা টিউব দই রেখে দিয়েছে। ওটা ষোলো ঘন্টার বেশি হলো বাইরে; ফ্রিজে তোলাটা ঠিক হবে না। তৎক্ষণাৎ খুলে চুষতে থাকি। ফ্রিজের পাশে রাখা ভাঁজ করা টুলটা এনে ওটার ওপর দাঁড়িয়ে কেবিনেটের উপর থেকে বছরখানেক আগের খোসাশুদ্ধ আস্ত কাঁচা বাদামের কৌটা নামিয়ে এলুমিনিয়ামের কড়াই চুলায় গরমে দিলে বাদামগুলো ছেড়ে ভাজতে লাগলাম। ওগুলো একদম নরম হয়ে গেছে। ভুলেই গিয়েছিলাম..
আহা, গড়াই নদীর বালু থাকলে কত ভালভাবে ভাজা যেত!
.
অল্প আঁচে বাদামগুলো ভেজে নিয়ে প্লেটে ঢেলে ঠান্ডা করতে দিয়ে ফ্রিজ থেকে একটা নানরুটি বের করে অর্ধেক করে ছিঁড়ে টোস্টারে ঢুকিয়ে দুপুরের বেগুন দিয়ে পাঙ্গাশ মাছের বেঁচে যাওয়া ঝোল ছোট বাটিতে নিয়ে মাইক্রোতে গরমে দিলাম। ঝোলে এখনো এক পিস বেগুন আর আলু আছে। চায়ের পানি চুলোয় বসাই। এ ঝোল না খেলে ফেলে দেওয়া লাগতো। ক্যানাডিয়ানরা জিনিস নষ্ট করে না। ফ্রিজ থেকে ছোট্ট কৌটায় রাখা পরশুদিন সকালের খিচুড়ির জন্য মাখানো শুকনামরিচ-পেঁয়াজ মাখানো ঝাল বের করে প্লেটে নিয়ে গরম করা রুটির পিসগুলো আর মাছের ঝোলটুকু তুলে নিয়ে ডাইনিং টেবিলে রেখে কেবিনেট থেকে ছোট কাঁচের কৌটায় রাখা গিন্নির বিট লবন-মরিচের গুঁড়া মাখানো সিক্রেট লবন ছোট কাগজে ঢেলে নিয়ে মুড়িয়ে নিয়ে বাদামের পাশে নিয়ে টিভির সামনের টেবিলে রেখে আসি।
ডিনারের পর খবর দেখতে দেখতে বাদাম ভেঙে মুখে দিয়ে তর্জনী জিব্বায় ঠেকিয়ে ভিজিয়ে নিয়ে বিট লবন তুলে খেতে খুব মজা!
.
ফ্রিজের একদম কর্নার থেকে বক্সে রাখা দুই সপ্তাহ আগের দুটা বানানা মাফিন বের করে নাকের কাছে নিয়ে শুঁকে দেখি যায় যায় অবস্থা; হালকা ছাতা পড়া গন্ধ। তবে খাওয়া যাবে। মাইক্রোতে গরম করে নিয়ে ঠান্ডা করতে দিলাম। সকালে খেলেও হবে। রাতে বেশি খাওয়া ঠিক না। আগ থেকে প্রিপারেশন করে না রাখলে ভুলে যাবার সম্ভাবনা ১০০%। মানুষ আসলে ভালমতো না খুঁজেই মনে করে খাওয়ার কিছু নাই। ইচ্ছা থাকলে উপায়ও হয়।
.
মচমচে রুটি ঝোলে চুবিয়ে খেয়ে নিয়ে খবর দেখতে দেখতে বাদামগুলো শেষ করি। মনের মধ্যে কেমন জানি খচখচ করতে থাকে। আচ্ছা, জেলেনস্কি রাতে কী খাবে? ছুটলাম বেইজমেন্টে। একটা রেডিমেড গ্রেভি মাশরুম স্যুপের ছোট ক্যান নিয়ে এসে খুলে ছোট প্যানে আড়াইশো মিলি দুধে স্যুপটুকু ঢেলে হালকা আঁচে গরমে দেই।
.
স্যুপ ফুটে উঠলে আরেকটা নান রুটি গরম করে এনে স্যুপে চুবিয়ে খাই আর খবর দেখি। খাবারের মধ্যেই আবার দৌড়ে গিয়ে চারটা কাঁচামরিচ, কিছু পেঁয়াজ আর ধনিয়াপাতা একসাথে কুঁচি করে স্যুপে ফেলে দিয়ে গুলিয়ে নেই। এবার ঠিক আছে। ঝাল না হলে স্যুপ জমে না।
মাশরুমগুলো বেশ ফ্রেশ! উক্রেনিয়ানরা এ ধরণের স্যুপ খুব পছন্দ করে। জেলেনস্কি লোকটাও আমার ঠিক সামনে বসা। দুজন একসাথে খেতে থাকি। চেহারায় তাঁর চিন্তার ছাপ একদম পার্মানেন্টভাবে লেপ্টে গেছে। কপালে চার-পাঁচটা ভাঁজ হয়ে গেছে চিরস্থায়ী। দেশকে বাঁচাতে তাঁর প্রাণপণ চেষ্টার কোনো কমতি নেই। ব্যাচারা খাঁকি জামা পরে, খুব চিন্তিত ভঙ্গিতে স্যুপ খাচ্ছে। মহা দায়িত্ববান সত্যিকারের বীর সৈনিক!
এমন মায়া লাগতেছে..
.
জেলেনস্কি নিশ্চয়ই এখনো ঘুমায়নি? ব্যাটা আছে কোথায়, কোন হোটেলে আল্লাহই জানে। এমনও হতে পারে তাঁকে আমার বাসার আশপাশেরই কোনো হোটেলে সিক্রেটভাবে রাখা হয়েছে? কিংবা সে ছদ্দবেশে ঠিক এ মুহূর্তে মাথা হুডি দিয়ে ঢেকে রাস্তায় বিড়ি ফুঁকতে বেরিয়েছে?
কে জানে!
আমি জানালার পর্দা সরিয়ে রাস্তার দিকে চেয়ে চায়ে চুমুক দিতে থাকি..

- Advertisement -

অটোয়া, কানাডা

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles