
এভাবে পোস্টার নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন পূজার বোন
হাসপাতালের এক ওয়ার্ড থেকে আর এক ওয়ার্ডে ছুটছেন তরুণী, হাতে পোস্টার। কান্নাভেজা গলায় কিছু একটা বলছেন। পোস্টারে লেখা রয়েছে, ‘আমার দিদিকে মেরে ফেলেছে ডাক্তার’। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের শক্তিনগর হাসপাতালে এই ঘটনা ঘটেছে।
ওই তরুণীর দাবি, ভুল চিকিৎসার কারণে মৃত্যু হয়েছে তার বোনের।মৃত্যুর প্রতিবাদ জানাতে নিজের হাত কেটে রক্ত দিয়ে ওই পোস্টার লিখেছেন তিনি।
কলকাতাভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়, আজ রবিবার এই ঘটনায় উত্তেজনা ছড়ায় শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে। তবে যাবতীয় অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
সংবাদমাধ্যমটি জানায়, কৃষ্ণনগর হাতারপাড়া এলাকার বাসিন্দা ২৫ বছর বয়সী পূজা সরকার শনিবার রাতে পেটে ব্যাথা নিয়ে শক্তিনগর জেলা হাসপাতালে ভর্তি হন। চিকিৎসা শুরু হলেও তার অবস্থার অবনতি হতে থাকে। পরিবারের দাবি, চিকিৎসকেরা আইসিইউ ইউনিটের প্রয়োজনীয়তার কথা বললেও সেখানে ভর্তির কোনও ব্যবস্থাই করেননি। আইসিইউ ওয়ার্ডে অনেক স্থিতিশীল রোগী থাকলেও অত্যন্ত সঙ্কটাপন্ন পূজাকে সাধারণ শয্যায় রেখে দেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত রবিবার সকালে মৃত্যু হয় পূজার।
পূজার পরিবার অভিযোগ করছে, পেটে ব্যাথার কথা জানিয়েছিলেন পূজা। এরপর নার্স তাকে ইঞ্জেকশন দেন। এর কিছুক্ষণ পরেই মৃত্যুর মুখে ঢলে পড়েন ওই রোগী। চিকিৎসকের চরম গাফিলতি এবং নার্সের ভুলেই পূজার মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ পরিবারে।
দুপুরে এই পুরো ঘটনার বিবরণ জানিয়ে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে যাওয়ার হুমকি দিয়েছে পরিবার। অন্যদিকে পূজার বোন নিজের হাত কেটে রক্ত দিয়ে পোস্টার লেখেন এবং হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘুরে ঘুরে প্রতিবাদ জানান। কিছু ক্ষণ পরই নিরাপত্তাকর্মীরা ওই তাকে আটক করেন।
পূজার আত্মীয় সুচিত্রা সরকার বলেন, ‘পূজার পেটে যন্ত্রণা ছিল। যত সময় গড়িয়েছে, ওর অসুস্থতা বেড়েছে। বার বার অনুরোধ করা সত্ত্বেও হাসপাতালের ডাক্তাররা ওকে দেখতে আসেননি। আইসিইউ-তে রাখার কথা জানিয়েছিলেন চিকিৎসকেরা। কিন্তু আইসিইউ-তে আর নিয়ে যাওয়া হয়নি। তার পর নার্স তো ইঞ্জেকশন দিয়ে ওকে মেরেই ফেলল।’
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ ভিত্তিহীন। হাসপাতালের সুপার জয়ন্ত সরকার বলেন, ‘চিকিৎসায় গাফিলতির কোনও প্রশ্নই নেই। রোগীকে প্রয়োজন মতো সেবা দেওয়া হয়েছে। যে কোনও রোগীর মৃত্যু দুঃখজনক। তবে এ ক্ষেত্রে অভিযোগ খতিয়ে দেখা হবে।’
কৃষ্ণনগরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হেডকোয়ার্টার) সঞ্জয় মিতকুমার মাতোয়ান বলেন, হাসপাতালের সুপারের কাছে পরিবারের পক্ষ থেকে একটি অভিযোগ জানানো হয়েছে। পুলিশের কাছে এখনও কোনও লিখিত অভিযোগ আসেনি।