
মানুষের মন ছাড়া আর কোথায়ও ভয়ের অস্তিত্ব নেই। আমাদের বেশীরভাগ মানুষের স্বপ্ন পুরন হয়না; কারন ব্যর্থ হওয়ার ভয় দ্বারা আমাদের মন পরিপূর্ণ থাকে। ভয়ের কাছেই আমরা বন্দি।
ইটের দেয়াল দিয়ে ঘেরা বদ্ধ ঘরের মধ্যে আমরা কয়জনইবা বন্দী থাকি। তার চেয়ে লক্ষ কোটিগুন বেশী মানুষ তারা তাদের নিজেদের মনের কাছে বন্দী হয়ে আছে। তারা বন্দী হয়ে আছে তাদের চিন্তা আর বিশ্বাসের কাছে । জন্মের ঠিক পর পরই আমরা মানুষ শিখে ফেলি: এটা করা যাবেনা, ওটা করা যাবেনা। আর তখন থেকেই শৃঙ্খল পড়ানো শুরু। সমাজবদ্ধ নিয়মকানুনের বেড়াজালে প্রতিনিয়ত বন্দী হচ্ছি। সামাজিক মাধ্যমে একলাইন কিছু লিখতে গেলেও কী একটা বাধা আমাদের আটক দেয়। চিন্তা করতে থাকি: এটা লেখা কী ঠিক হচ্ছে? আবার কোন পোষাক পড়তে গেলে চিন্তা করি: এটা পড়া ঠিক হচ্ছে? তেমনিভাবে, কোন কথা বলতে গেলে চিন্তা করি: কথাটা বলা কী ঠিক হচ্ছে? এ গুলোই তো বন্দিত্ব।
এটা থেকে বের হওয়া খুব কঠিন। যারা বের হতে পারে তারা স্বাধীনতার স্বাদ ভোগ করে।
এছাড়াও আরেকটি জিনিস আমাদেরকে সব সময় বন্দী করে রাখে তাহল মনের “ভয়”। এটা সাপের ভয় না, বাঘেরও ভয় না। নিজের মনের “ভয়” আর নিজের মনের “দ্বীধাদ্বন্দ্ব”। কথায় আছেনা? “বনের বাঘে খায়না, মনের বাঘে খায়।” আমরা বেশীরভাগ মানুষ আমাদের মনের ভয়ের কাছে বন্দী। বাইরের কারো ভয় দেখানোর দরকার নেই। নিজেকে বন্দী করে রাখতে নিজের মনের ভিতর যে ভয় দ্বীধা আছে তাই যথেষ্ট। কাউকে নিয়ন্ত্রন করতে চাইলে তাকে তালা মেরে বন্দী করে রাখার দরকার নেই। শুধু তার মনের ভিতর ভয় ঢুকিয়ে দাও। ব্যস। সে এমনিতেই বন্দী হয়ে থাকবে। যেমন, আমরা শিশুদের বলি, বাইরে একা যেওনা, ছেলেধরা ধরে নিয়ে যাবে। শিশুরা ভয়ে বাইরে বের হয়না। নারীদের বলি, রাতে একা একা বাইরে যেওনা, ধর্ষন বা অপহরনের শিকার হবে। ব্যস, নারীরা সেই ভয়ে আর বাইরে বের হয়না।
ভয় থেকে মুক্ত হয়ে স্বাধীন হওয়ার উপায় কী তাহলে? উপায় আছে। প্রথমে ভয় টাকে আইডেন্টিফাই করা; কিসে আমার ভয় হচ্ছে? কাকে আমি ভয় পাচ্ছি; কেন ভয় পাচ্ছি? আমি কী অনুভব করছি। এই ভয় নিয়ে আমার অভিজ্ঞতা কেমন? এটা কী কোন জীব জন্তুর ভয় নাকি মানুষের ভয়? নাকি সমাজ থেকে শেখানো কোন ভয়? এ গুলো বিশ্লেষন করতে পারলেই ভয় তাড়ানো সম্ভব। মানুষ তখন নিজস্ব শক্তির খোঁজ পায়। তখনই মুক্তি আসে।
টরন্টো, কানাডা