6 C
Toronto
শুক্রবার, মার্চ ১৪, ২০২৫

নগ্ন ছবি দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করার ব্যবসা ফাঁস

নগ্ন ছবি দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করার ব্যবসা ফাঁস

প্রতীকী ছবি

তাৎক্ষণিক ঋণ পাইয়ে দেওয়ার কয়েকটি অ্যাপ ব্যবহার করে ভারতসহ এশিয়া, আফ্রিকা এবং লাতিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশের মানুষকে ব্ল্যাকমেইল করে ফাঁদে ফেলার এক অবৈধ কারবার চলছে। বিবিসির এক অনুসন্ধানী খবরে বলা হয়েছে,ভারতে অন্তত ৬০ জন এই ফাঁদে পা দিয়ে নির্যাতন আর অপমানের শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন।

ভারত আর চীনে এই অবৈধ কারবারগুলিতে বিবিসি এক গোপন তদন্ত চালিয়েছে। এতে জানা যায়, অন্তত ১৪টি দেশে ছড়িয়ে পড়া এক আন্তর্জাতিক প্রতারণা চক্রের ফাঁদে পা দিয়ে ফেলেছিলেন ভূমি সিনহা নামে এক ভারতীয়।

- Advertisement -

বিবিসি বলছে, এসব অ্যাপের কাজ হচ্ছে ব্ল্যাকমেইল করে মানুষের জীবন ধ্বংস করে দিয়ে মুনাফা তোলা। প্রতারণা করা এমন অনেক অ্যাপ রয়েছে- যা কয়েক মিনিটের মধ্যে কোনো ধরণের ঝামেলা ছাড়া ঋণ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। এসব অ্যাপ সবাইকে শিকারের আশায় ফাঁদ পেতে থাকে তা নয়। কিন্তু অনেকগুলিই সে ধরনের– একবার অ্যাপ ডাউনলোড হয়ে গেলে আপনার পরিচিতি, ছবি এবং পরিচয়পত্র সবকিছু হাতিয়ে নিয়ে পরে সেই তথ্য ব্যবহার করে ব্ল্যাকমেইল করে।

গ্রাহকরা যখন সময়মতো ঋণ পরিশোধ করেন না অথবা কখনও ঋণ শোধ হয়ে যাওয়ার পরেও ওই অ্যাপগুলি আপনার তথ্য কোনও কল সেন্টারে দিয়ে দেয়। সেখানে ল্যাপটপ আর ফোন নিয়ে বসে থাকে কিছু তরুণ এজেন্ট যাদের প্রশিক্ষণই হয়েছে কী করে মানুষকে অপমান আর হয়রান করে ঋণ পরিশোধ করার জন্য চাপ দিতে হয়।

এরকমই কয়েকটা অ্যাপ থেকে ভূমি সিনহা প্রায় ৪৭ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন ২০২১ সালের শেষ দিকে। কাজের জায়গায় কিছু পাওনা টাকা আটকিয়ে ছিল, কয়েকদিনের মধ্যেই সেই টাকা চলে আসার কথা ছিল। স্বল্পমেয়াদী ঋণটার দরকার হয়েছিল সেজন্যই।

ঋণের টাকা তো প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই চলে এল, কিন্তু একটা বড় অংশ কেটে নেওয়া হল বিভিন্ন চার্জের নাম করে। তার ঋণ পরিশোধ করার কথা ছিল সাত দিনের মধ্যে, কিন্তু তিনি যে টাকাটার জন্য অপেক্ষা করছিলেন সিনহা, সেটা তখনও তিনি পাননি।

তাই ধার শোধ করার জন্য তিনি আবার অন্য একটি অ্যাপ থেকে ঋণ নিলেন, তারপরে আরও একটি অ্যাপ থেকে। বাড়তে বাড়তে আসল আর সুদ মিলিয়ে ততদিনে তার মোট দেনা হয়ে গেছে ২০ লাখ টাকা।

কয়েকদিনের মধ্যেই এজেন্টরা ফোন করতে শুরু করল। সেই সব কলে নোংরা কথা বলা হত, সিনহাকে গালাগালি দেওয়া হত, অপমান করা হত। এমনকি যখন তিনি ঋণ পরিশোধ করে দিলেন, তখনও ফোন করা বন্ধ হয় নি। বলা হতো যে তিনি নাকি মিথ্যা কথা বলছেন যে ঋণ পরিশোধ করে দিয়েছেন।

দিনে ২০০ পর্যন্ত ফোন পেয়েছেন তিনি। তার বাড়ি কোথায়, সেটা জানত ওই এজেন্টরা আর তাকে হুমকি দেওয়ার জন্য বাড়িতে একটা মৃতদেহের ছবি পর্যন্ত পাঠানো হয়েছিল।

নির্যাতন বাড়তে বাড়তে এমন পর্যায়ে পৌঁছিয়েছিল যে ওই এজেন্টরা তাকে হুমকি দিয়েছিল যে ফোনের কন্টাক্ট লিস্টের ৪৮৬ জনের কাছে মেসেজ পাঠিয়ে বলে দেবে যে তিনি একজন চোর আর যৌন কর্মী। এমনকি তারা মেয়েকেও বদনাম করে দেওয়ার হুমকি যখন দেয়, তখন থেকে সিনহার রাতের ঘুম চলে গিয়েছিল।

শেষ পর্যন্ত, ভূমি সিনহা সব ধার মিটিয়ে দিতে সমর্থ হন, কিন্তু ‘আসান লোন’ নামের একটি অ্যাপ তা সত্ত্বেও ফোন করা বন্ধ করেনি।

মানসিকভাবে এতটাই বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন তিনি যে কাজেও মন দিতে পারছিলেন না। শুরু হয়েছিল তার প্যানিক অ্যাটাক। একদিন এক সহকর্মী তাকে তার টেবিলে ডেকে ফোনে দেখালেন ভূমি সিনহারই একটি নগ্ন, পর্নোগ্রাফিক ছবি।

ছবিটি খুব খারাপ ভাবে ফটোশপ করা হয়েছিল, সিনহার মাথা অন্য একজনের শরীরে কেটে বসিয়ে দেওয়া হয়েছিল। লজ্জা আর ঘৃণায় সহকর্মীর টেবিলেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান তিনি।

ওই ছবিটি ‘আসান লোন’ অ্যাপ থেকে তার ফোন বুকের প্রতিটি নম্বরের কাছে পাঠানো হয়েছিল। তখনই ভূমি সিনহা আত্মহত্যার কথা ভেবেছিলেন।

সারা বিশ্বে বিভিন্ন কোম্পানি এ ধরনের প্রতারণা চক্র যে চালায়, তার প্রমাণ পেয়েছে বিবিসি। শুধু ভারতেই অন্তত ৬০ জন মানুষ লোন অ্যাপের হয়রানির শিকার হয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে জেনেছে বিবিসি।

যারা আত্মহত্যা করেছেন, তাদের বেশিরভাগেরই বয়স ২০ থেকে ৪০এর মধ্যে। এদের মধ্যে রয়েছেন একজন দমকল কর্মী, একজন পুরস্কারপ্রাপ্ত সংগীতশিল্পী, এক অল্পবয়সী দম্পতি যারা তাদের তিন আর পাঁচ বছরের দুই মেয়েকে আত্মহত্যা করেন। রয়েছেন এক দাদু এবং তার নাতি, এবং চারজন টিনেজার, যারা লোন অ্যাপের ফাঁদে পড়ে নিজেদের জীবন শেষ করে দিয়েছেন।

- Advertisement -

Related Articles

Latest Articles