
মো মানিক
ফেসবুকে পরিচয়ের সূত্র ধরে মো. মানিক নামে এক যুবকের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে তরুণীর। বিয়ের কথাবার্তাও চূড়ান্ত হয়। এর মধ্যে দু’জনের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও ধারণ করে রাখে প্রেমিক। কিন্তু তরুণী বিয়ের কথা বললেই শুরু করে টালবাহানা। এমন পরিস্থিতিতে তরুণী সম্পর্কচ্ছেদ করতে চাইলে সেই ভিডিও দেখায় মানিক। এর পর ভিডিও ছড়ানোর ভয় দেখিয়ে দিনের পর দিন ধর্ষণ করা হয় তাঁকে।
অবশেষে একদিন রুখে দাঁড়ান মেয়েটি। তখন তাঁর নামে ভুয়া ফেসবুক আইডি খুলে পোস্ট করা হয় ভিডিও-ছবি। এতে মারাত্মক বিপর্যয়ের মুখে পড়েন তরুণী। পরিচিতদের কটূক্তি ও উপহাসের পাত্রীতে পরিণত হন। লোকলজ্জায় বাইরে বের হতে পারেন না। মানিকের বন্ধুসহ কিছু যুবক তাঁকে কল করে বা মেসেজ পাঠিয়ে কুপ্রস্তাব দেয়। চাকরিও হারান তরুণী। পরে তিনি এ ঘটনায় দুটি মামলা করেন। দুই মামলাতেই তাঁর অভিযোগের সত্যতা পেয়েছেন তদন্ত সংশ্লিষ্টরা।
ফেসবুকে ভিডিও ছড়ানোর ঘটনায় ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে করা মামলাটির তদন্ত করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সংস্থাটির বিশেষায়িত তদন্ত ও অভিযান (সংঘবদ্ধ অপরাধ-দক্ষিণ) শাখার জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার সাগর সরকার সমকালকে বলেন, ভুক্তভোগীর অভিযোগ– বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে অন্তরঙ্গ সময় কাটানোর পর তাঁর আপত্তিকর কিছু ছবি-ভিডিও ফেসবুকে পোস্ট করা হয়। সার্বিক তদন্ত ও অভিযুক্ত যুবকের মোবাইল ফোনসহ ডিজিটাল ডিভাইসের ফরেনসিক পরীক্ষায় এর প্রমাণ পাওয়া গেছে।
তদন্ত সূত্র জানায়, চলতি বছরের ৬ এপ্রিল দুপুরে তরুণীকে ফোন করে জানানো হয়, তাঁর ফেসবুক আইডির স্টোরিতে একাধিক অশালীন ভিডিও প্রকাশ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে একই নামের আরেক আইডি থেকে মেসেঞ্জার গ্রুপে ওইসব ভিডিও পোস্ট করা হয়েছে। তখন ভুক্তভোগী কল করলে মানিক বলে, ‘আরও ৫০টি ভিডিও ছাড়ব, তুই যেন সমাজে মুখ দেখাতে না পারিস। তুই কী করতে পারিস আমি দেখব।’
তরুণী জানান, রাজধানীর ভাটারায় পরিবারের সঙ্গে থাকেন তিনি। মানিকের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি জানার পর তাঁকে বাসা থেকে বের করে দেওয়া হয়। তখন প্রেমিক এসে তাঁকে নিয়ে যায়। সেদিন থেকে তারা স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে এক বাসায় থাকতে শুরু করেন। তবে মানিক বিয়েতে রাজি হচ্ছিল না। এর মধ্যে তিনি জানতে পারেন, প্রেমিকের স্ত্রী-সন্তান রয়েছে। এ নিয়ে অশান্তি চরমে উঠলে তিনি সম্পর্কচ্ছেদ করে চলে যেতে চান। কিন্তু গোপন ভিডিও ছড়ানোর ভয় দেখিয়ে তাঁকে থাকতে বাধ্য করা হয়। সেই সঙ্গে চালানো হয় যৌন নিপীড়ন। এক পর্যায়ে তিনি বুঝতে পারেন, তাঁকে বিয়ের কোনো ইচ্ছাই নেই মানিকের। উল্টো তাঁর জীবন ধ্বংস করে দেওয়ার পরিকল্পনা তার। কারণ মানিক মাদকাসক্ত এবং তেমন কিছু করে না। তাই স্ত্রীকে পেশাদার যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করতে বাধ্য করে সেই টাকা হাতিয়ে নিতে চায়।
তরুণী বলেন, ‘এখন বাইরে বের হলে সবাই কেমন দৃষ্টিতে তাকায়। ইঙ্গিতপূর্ণভাবে কানাঘুষা করে।’
মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইর বিশেষায়িত তদন্ত ও অভিযান (সংঘবদ্ধ অপরাধ-দক্ষিণ) শাখার এসআই সুহৃদ দে বলেন, ছদ্ম পরিচয়ে অর্থাৎ ভুক্তভোগীর নাম ব্যবহার করে ফেসবুকে আপত্তিকর ভিডিও-ছবি ছড়ানোয় মানিকের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও পর্ণোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশ্লিষ্ট ধারার অপরাধ প্রমাণ হয়েছে।
এ ব্যাপারে অভিযুক্ত মানিকের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সে পলাতক বলে জানা গেছে।