টরন্টোতে প্রায় প্রতিদিনই দুএকজন বাংলাদেশী ইন্টারন্যাশনাল স্টুডেন্ট BIES এর নম্বরে ফোন করে চাকুরী দিতে পারব কীনা জিজ্ঞাসা করে।
উল্লেখ্য, BIES টরন্টোতে অবস্থিত একটি ননপ্রফিট চ্যারিটেবল সংস্থা। মানুষকে জবপেতে সহায়তা করা সংস্থাটির অন্যতম কাজ। সংস্থাটির অফিসিয়াল সেলফোনটি আমার কাছেই থাকে। নানান ধরনের লোক এখানে ফোন করে। কখনো হাসপাতাল থেকে ফোন করে বলে একজন রোগী বাংলায় কথা বলতে পারছেনা, তোমরা কোন হেল্প করতে পারবা কীনা? আবার অন্য কোন সংস্থা থেকে ফোন করে বলে, তোমার কমিউনিটর একজন হেল্প টায় তোমাকে ফোন করতে বলবো কীনা?
সরাসরি বলি, অবশ্যই।
যারা এখানে অনেক বছর যাবত আছে তাদের কেউ কেউ ফোন করে বলে, ছেলে গেমিং আসক্ত, মেয়ে কথা শোনেনা, স্বামী/স্ত্রী অত্যাচার করছেন কী করবেন —এরকম নানান সমস্যার জন্য সাহায্য চান। সবাইকে হেল্প করা সম্ভব হয়না। তবে সাধ্যমত হেল্প করার চেষ্টা করি। যেহেতু সোস্যাল সার্ভিস লাইনে কাজ করি সেহেতু আবার কেউ কেউ আমার পার্সোনাল নম্বর জোগার করেও তাতে ফোন করে। তাতে আমি কখনোই বিরক্ত হইনা। বরং অনেক সময় নিজের গুরুত্বপুর্ন কাজ বন্ধ রেখে তাদের সাথে কথা বলি। অথবা ফ্রিটাইমে।কল ব্যাক করি। তাদেরকে তথ্য ও পরামর্শ দিয়ে সাহায্য করি।
কাজগুলো যে সব সময় আমি একা করি তা নয়। আমাদের টিম অব ভলান্টিয়ার্স এখানে হেল্প করেন।
ধান বানতে শিবের গীত গাইলাম। যেটা বলছিলাম। কানাডায় বাংলাদেশী ইন্টারন্যাশনাল ষ্টুডেন্টদের অবস্থার কথা। তারা ফোন করে জব চায়। কথা বলে দেখা যায়, অনেকের ওয়ার্কপারমিটও নেই। ক্যাশে পেমেন্ট পাবে সেরকম জব চায়। কারন বাংলাদেশ থেকে আনা ডলারে বাসাভাড়া, যাতায়াত, খাওয়াখরচ জোগার করা সম্ভব হচ্ছে। যদিও তারা সে সামর্থ আছে তার প্রমান দিয়েই ভিসা পেয়েছেন। কিন্তুু বেশীরভাগই এ রকম চিন্তা করে এসেছেন যে, কোন রকমে কানাডায় পৌছতে পারলে একটা কিছু ব্যবস্থা হয়েই যাবে। অনেকের হচ্ছে আবার অনেকের হচ্ছেনা। যাদের হচ্ছে না তাদের কথাই বলছি।
অনেকের অবস্থা খুবই করুন। থাকার জায়গা নেই। জব নেই। শারীরিক ও মানসিকভাবে ভেঙ্গে পরেছেন। শীত আসছে। অবস্থা আরো ভয়াবহ হবে। কারন এ সময় একটা সুস্থ্য থাকার জন্য একটা ভালো গরম জায়গা দরকার যেখানে ভালোভাবে ঘুমানো যাবে। অনেকে স্বপ্ল ভাড়ায় বেজমেন্টে থাকে। বেজমেন্টে একটু ঠান্ডা বেশী লাগে। একস্ট্রা হিটারের দরকার হয়। সেই হিটার কেনার টাকাও হয়ত কারো থাকেনা। গরম জ্যাকেট লাগে তা কেনার সামর্থ থাকেনা। যাদের এ সমস্যা আছে আমাদের কমিউনিটি অনেকেই এ ব্যাপারে হেল্প করতে পারেন। কিন্তুু আপনাকে হেল্প চাইতে হবে।
আমরা জব দিতে পারিনা। তবে কীভাবে জব পাওয়া যা তা কিছু টিপস দিয়ে থাকি। আবার কোন কোন এমপ্লয়ার আমার কাছে লোক চান, তখন কারো সাথে ম্যাচ হলে তখন থাকে পাঠাই। তারা তাদের মত করে ইন্টারভিউ নিয়ে তাকে হায়ার করেন অথবা করেন না।
সাধারন পরামর্শ হিসেবে আমরা বলি কোল্ড কলিং করার জন্য। শুধু রেজুমে।ড্রফ করে চাকুরী হয়না। তার চেয়ে ব্যবসা প্রতিষ্টানে সরাসরি কল করে কথা বলা। গুগল করে আশেপাশের যে কোন রেস্তোরায়/দোকানে কল করে এরকম বলা:
Hi Good Morning/Afternoon/ Evening. My name is Akash. I am looking for a job. Are you hiring right now?
দশ সেকেন্ডে এ রকম কয়েকটি বাক্য কনফিডেন্সের সাথে বলা। যদি তাদের সেই মুহুর্তে লোক দরকার না হয়, বললে দিবে না আমরা হায়ার করছি না। কল আছ লেটার। তখন Thank you বলে রেখে দেয়া । পরে আরেকটাতে ফোন করা। এরকম দিনে ৫০টি কল করলে দুচার জায়গা থেকে পজিটিভ কিছু পাওয়ার সম্ভবনা আছে। কেউ হয়ত বলবে তোমার রেজুমে আর রেফারেন্স নিয়ে আগামী পরশু সকালে আসো। তখন একটু ভালো কাপড়চোপর পরে যেতে হবে। কারন ইন্টারভিউ হবে।
কারো ইংরেজী বলতে সমস্যা হলে বাসায় বারবার প্রাক্টিস করে করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।
তো এভাবে আমরা মাছ ধরার কৌশল শিখিয়ে দেই। কেউ এটা সিরিয়াসলি নেয় আবার কেউ নেয়না। কারন অনেকেই টায়ারে বাংলাদশী বাতাশ ভর্তি করে আসে। এখানে এসে টায়ার থেকে বাংলাদেশী বাতাশ বের করে কানাডার বাতাশে ভর্তি করতে চায়না। তখন তারা পিছিয়ে থাকে। এটা জাস্ট একটা উদাহরন দেয়ার জন্য বলা। নিজের কৃষ্টি কালচার অভ্যাস তো পুরোপুরি ছাড়া সম্ভব না, সেটা উচিৎও নয়। কানাডায় জব পাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের যে বাধা তা দূর করা কথা বুঝিয়েছি।
যে যেভাবেই কানাডায় আসুক তাকে হেয় না করে, জাজ না করে, সম্ভব হলে হেল্প করা, হেল্প করতে না পারলে কোন অসুবিধা নেই। তবে তাদের ক্ষতি করার অধিকার কারো নেই। সবাই সফল হোক, সবাই সুস্থ্য থাকুক।
স্কারবোরো, কানাডা