
ছোটপর্দার জনপ্রিয় অভনেত্রী হুমায়রা হিমুর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। অভিনেত্রী আত্মহত্যা করেছেন না কি তাকে হত্যা করা হয়েছে এ নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশা।
এদিকে হিমুর মৃত্যু রহস্য উদঘাটনে গ্রেফতার করা হয়েছে উরফি জিয়াকে। এ ছাড়া হিমুর মৃত্যুর সময় পাশে ছিল মেকআপ আর্টিস্ট মিহির, তাকে র্যাব নজরদারিতে রেখেছেন।
রোববার (৫ নভেম্বর) সকালে মিহির মোমোন রিয়াল নামের ফেসবুক আইডি থেকে অভিনেত্রী হিমুর মৃত্যুর বিষয়ে কথা বলেছেন মেকআপ আর্টিস্ট মিহির।
গত ২ নভেম্বর কী হয়েছিল লাইভে এসে সে ঘটনার বর্ণনা দেন মিহির। পাশাপাশি নিজের মানসিক অবস্থাও তুলে ধরেন তিনি। মিহির ১৫ মিনিট ৩৯ সেকেন্ডের ভিডিওতে আত্মপক্ষ সমর্থন ছাড়াও একাধিক প্রশ্ন রাখেন।
মিহির বলেন, হিমুকে হাসপাতালে নেয়ার পর থেকে এই তিনদিন আমি থানায় বসে ছিলাম। আমার মোবাইল চেক করা হয়েছে। হাজারো প্রশ্ন করা হয়েছে। আর কী পুলিশ রিমান্ডে নেবে আমাকে? ফাঁসি দিয়ে দেবে? আমি কী অপরাধ করেছি?
হিমুর বাসায় থাকার প্রসঙ্গে মিহির বলেন, আমি আর্থিক অনটনে আছি বেশ কিছু দিন থেকে। আমার কাজ বন্ধ। একটি সিরিয়াল করেছিলাম, তারাও টাকা দেয়ার নামে ছয় মাস ধরে ঘোরাচ্ছে। আমার বাসা ভাড়া বাকি। বাড়িওয়ালী বাসা তালা দিয়ে দিয়েছেন। আমি কোথায় যাব, কী খাব? সেজন্য আমি বাধ্য হয়ে হিমুর বাসায় ছিলাম। এমনিতেও আমি হিমুর বাসায় থাকতাম। কারণ হিমুর মা আমাকে বলেছেন, আমি না থাকলে আমার মেয়ের দেখাশোনা করিস। এ জন্য আগে রাতে না থাকলে সারাদিন আমি হিমুর বাসায় থাকতাম।
এ সময় ৫ বছর আগে অভিনেত্রী তাজিন আহমেদের মৃত্যুর কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, আপনাদের ভাবিয়ে তোলে তাজিন আপার মৃত্যুর সময় আমি ছিলাম। হিমুর সময় আমি ছিলাম। আমি না থাকলে তাজিন আপা স্ট্রোক করে বাসায় মারা যেতেন। লাশ পড়ে থাকত বাসায়। আর আমি ছিলাম বলেই হিমুকে বের করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আমি তাজিন আপা, হিমুর উপকার করছি বলে আমাকে সবাই মিলে ফাঁসি দিয়ে দেন। আমার কেউ নেই তো, কোনো বড় লেভেলের মানুষ নেই যে আমাকে সাপোর্ট দেবে এবং ব্যাকআপ দেবে।
তিনি আরও বলেন, আমি না থাকলে হিমুর বয়ফ্রেন্ড তাকে ঘরের ভেতর ঝুলাইয়া রাইখা দরজা বন্ধ কইরা পালাইয়া যাইত। এটা কি হতো না? এটা তো কেউ বলেন না যে, তুই ছিলি বলে হিমুকে আমরা বের করে আনতে পারছি বা ওকে ধরতে পারছে পুলিশ। হিমুর বয়ফ্রেন্ড ইন্ডিয়ান। আমি না থাকলে তাকে ধরাও যেত না। আমি ভালো করছি এটা কেউ বলে না। সব খারাপ করছি, আমি রাবন। আমাকে পারলে ফাঁসি দিয়া দেন।
গত ২ নভেম্বর (বৃহস্পতিবার) বিকেলে নিজ ফ্ল্যাটে ফ্যানের সঙ্গে রশি ঝুলিয়ে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন অভিনেত্রী হুমায়রা হিমু। পরে মিহির, উরফি জিয়া ও বাড়ির দারোয়ান মিলে তাকে উত্তরায় একটি হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক হিমুকে মৃত ঘোষণা করেন।
২০০৫ সালে হিমু টেলিভিশন মিডিয়াতে এবং নাটকে যুক্ত হন মো. জামালউদ্দিনের নাগরিক নাট্যাঙ্গন অনস্যাম্বলে। ২০০৬-এ হুমায়রা হিমুর প্রথম নাটক ‘ছায়াবীথি’ প্রচারিত হয়। একই বছর পিআই (প্রাইভেট ইনভেস্টিগেটর) নামের একটি সিরিয়াল নাটকেও অভিনয় করেন। এরপরে তিনি ‘বাড়ি বাড়ি সারি সারি’, ‘হাউজফুল’, ‘গুলশান এভিনিউ’ সহ অনেক জনপ্রিয় নাটকে অভিনয় করতে থাকেন। আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে।
হুমায়রা হিমু ১৯৮৫ সালের ২৩ নভেম্বর লক্ষীপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ইস্পাহানি কলেজ থেকে এইচএসসি সম্পন্ন করেন। হিমু ইডেন মহিলা কলেজে ভর্তি হন এবং এ কলেজ থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। মঞ্চনাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে তিনি প্রথম নাট্যজগতে প্রবেশ করেন। ফ্রেঞ্চ নামক নাট্যদলের হয়ে তিনি অভিনয় করেন। তার মামা মূর্শেদ নাটকটিতে নির্দেশনা দিয়েছিলেন।
২০১১ সালে ‘আমার বন্ধু রাশেদ’ এ অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় হিমুর। অভিনেত্রীর উল্লেখযোগ্য নাটকগুলোর মধ্যে রয়েছে: ডিবি, সোনাঘাট, চেয়ারম্যান বাড়ি, বাটিঘর, শোনেনা সে শোনেনা, সেলিম, মনও চোরা গলি, সুরের ফেরিওয়ালা, ছায়াবিবি, গানাদার, লেট ম্যারেজ, ভুতের গ্রাম, ছায়াবীথি, পিআই, শোধ, টুকরো ছবির এ্যালবাম, চুপি চুপি, নির্বিকার মানুষ প্রভৃতি।