
হাসপাতালের টয়লেটের কমোডে পড়েছিল একটি নবজাতক। সদ্যোজাত মেয়ে শিশুটি চোখে পড়ে এক রোগীর স্বজনের। তিনি এ দৃশ্য দেখে চিৎকার দিলে ছুটে আসেন আয়ারা। তারা শিশুটিকে উদ্ধার করে দ্রুত ওয়ার্ডে ভর্তি করেন। পরীক্ষা-নিরীক্ষায় জানা যায় সে সুস্থ আছে। তবে পাওয়া যায়নি তার জন্মদাত্রীকে। স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রটিতে নেই সংশ্লিষ্ট সময়ে সন্তান প্রসবকারী কোনো নারীর রেকর্ডও। গত শনিবার রাতে ভৌতিক এ ঘটনা ঘটেছে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে।
জানা গেছে, শনিবার রাত ৩টার দিকে হাসপাতালের ফিমেল মেডিসিন ওয়ার্ডের টয়লেটে যান এক রোগীর স্বজন। তিনি এক নবজাতকের কান্নার শব্দ পেয়ে কমোডের দিকে এগিয়ে যান। সেখানে একটি শিশুকে পড়ে থাকতে দেখে আঁতকে ওঠেন এবং চিৎকার দেন। খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক ছুটে আসেন দায়িত্বরত আয়া রেশমা। তিনি শিশুটিকে উদ্ধার করে সিনিয়র নার্সদের সহযোগিতায় জরুরি বিভাগে নিয়ে যান। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে শিশুটিকে ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়। গতকাল রোববার সকালে তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেন শিশু কনসালট্যান্ট ডা. মাহাবুবুর রহমান মিলন। নবজাতকটি ভালো আছে জানার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অনুমতি পেয়ে তাকে বাসায় নিয়ে যান সিনিয়র স্টাফ নার্স সাবিনা ইয়াসমিন রেখা।
মেডিসিন ওয়ার্ডে দায়িত্বরত আয়ারা জানান, উদ্ধার করার সময় নবজাতকের মুখ নিচের দিকে ছিল। হয়তো হত্যার উদ্দেশ্যেই শিশুটিকে সেখানে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কে বা কারা তাকে সেখানে ফেলেছে আমরা দেখিনি।
নার্স সাবিনা ইয়াসমিন রেখা বলেন, নবজাতকটিকে অসহায় অবস্থায় দেখে খুব মায়া হয়েছে। তাই তাকে বাসায় নিয়ে লালনপালন করছি। আদর-যত্ন করছি। এখন সে ভালো আছে; আপাতত ফর্মুলা দুধ খাওয়াচ্ছি। নিয়মিত খাচ্ছে ও ঘুমাচ্ছে। ক্ষুধা লাগলেই ঘুম ভেঙে কান্না করছে। তার মাকে যদি পাওয়া যায় এবং তিনি যদি অনুমতি দেন আমি শিশুটিকে লালনপালন করতে চাই। আমি তাকে মায়ের আদরেই বড় করব।
হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. এএসএম ফাতেহ্ আকরাম দোলন বলেন, স্টাফদের সঙ্গে কথা বলে জানতে পেরেছি, শনিবার গভীর রাতে হাসপাতালে আসেন অজ্ঞাত পরিচয় কয়েকজন নারী। তারা অবস্থান নেন হাসপাতালের ২৫০ শয্যা ভবনের ছয় তলার ফিমেল মেডিসিন ওয়ার্ডে। বেশ কিছুক্ষণ পরে তারা হাসপাতাল ত্যাগ করেন। কিন্তু তাদের কারও হাসপাতালে ভর্তির রেকর্ড পাওয়া যায়নি। হয়তো তাদের মধ্যে কেউ রাতের কোনো এক সময় অসৎ স্বাস্থ্যকর্মীর সহযোগিতায় স্বাভাবিক সন্তান প্রসব করে নবজাতকটিকে টয়লেটে ফেলে গেছেন। বিষয়টি পুলিশকে জানানো হয়েছে। শিশুটির মায়ের সন্ধান চলছে। তাঁকে না পাওয়া পর্যন্ত নবজাতকটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা যাচ্ছে না।